জালিয়াতির মাধ্যমে আসা ডলার বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াতের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে

শিবলী রুবাইয়াত
শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। ফাইল ছবি: সংগৃহীত

মিলিয়ন ডলার জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত একটি ব্যাংক হিসাব থেকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম অর্থ পেয়েছেন বলে 'অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট' বা ওসিসিআরপিতে প্রকাশিত জুলকারনাইন সায়ের খানের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক ওসিসিআরপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই অর্থ লেনদেনের সঙ্গে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের দুই দশকের পুরনো বন্ধু জাভেদ মতিনের নাম উঠে এসেছে যার সঙ্গে তার প্রথম দেখা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালে।

যুক্তরাষ্ট্রে আর্থিক কেলেঙ্কারিতে দোষী সাব্যস্ত জাভেদ মতিন ২০২০ সালের বড় একটি সময়জুড়ে প্রতারণা করে হংকংভিত্তিক সাপ্লাই চেইন সোর্সিং কোম্পানি মিং গ্লোবাল লিমিটেড থেকে ১৩ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

বিনিয়োগের ছদ্মবেশে এই অর্থ মোনার্ক হোল্ডিংস আইএনসি নামের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি কোম্পানির দুইটি ব্যাংক হিসাবে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ৮ লাখ ডলার শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে এবং আরেকটি অংশ একটি বাংলাদেশি কোম্পানির ব্যাংক হিসাবে পাঠানো হয়, যেই কোম্পানির পেছনেও তিনিই আছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

ব্যাংক থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, ২০২০ সালের জুন-জুলাইয়ের মধ্যে ওই কোম্পানির ব্যাংক হিসাব থেকে ২ লাখ ৭৮ হাজার ডলার শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের ব্যক্তিগত হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। মোনার্ক হোল্ডিংস থেকে আরও প্রায় ৫ লাখ ৬৪ হাজার ডলার জিন বাংলা ফেব্রিকস নামের একটি কোম্পানির ব্যাংক হিসাবে পাঠানো হয়।

কোম্পানির নিবন্ধন সংক্রান্ত জটিলতার কারণে জিন বাংলার বর্তমান মালিকানায় থাকা ব্যক্তিদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনি ওসিসিআরপি। কিন্তু জিন বাংলার নথিপত্রে 'কনটাক্ট পারসন' হিসেবে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামেরই নাম উল্লেখ রয়েছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশি-সুইস বিজনেস ফোরাম নিয়ে ২০০৭ সালে সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের একটি নিউজলেটারেও তার নাম পাওয়া যায়। বাংলাদেশের কোম্পানিগুলোর একটি অনলাইন রেজিস্ট্রিতেও জিন বাংলা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে তার নাম আছে।

তবে এই কোম্পানির বর্তমান মালিকানা সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ওসিসিআরপি।

২০২০ সালে মিং গ্লোবাল যুক্তরাষ্ট্রে মোনার্কের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে যা আবার পরে স্থগিত করা হয়। ওসিসিআরপিকে কোম্পানিটির একজন পরিচালক বলেন, মামলার আসামি বা অর্থ কোনোটাই দেশে না থাকায় তারা আইনি লড়াই থেকে সরে আসেন।

কোম্পানিটি বাংলাদেশে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের কাছ থেকে অর্থ উদ্ধারের জন্যেও একটি অভিযোগ দায়ের করে। এর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেন শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। ওসিসিআরপির প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় দুই বছর আগে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

মিং গ্লোবালের পরিচালক শরৎ কুমার হেগডে ওসিসিআরপিকে বলেছেন, সমস্ত কিছুর মধ্যে তারা সবচেয়ে বেশি হতাশ হয়েছেন আইনি ব্যবস্থা থেকে।

কথিত এই কেলেঙ্কারির পর, বিএসইসি জাভেদ মতিনকে মোনার্ক হোল্ডিংস নামেই একটি স্টক ট্রেডিং কোম্পানির লাইসেন্স দেয়। যদিও তিনি ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ট্যাক্স জালিয়াতির জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। বাংলাদেশি আইন অনুযায়ী এই কোম্পানির লাইসেন্স পাওয়ার কথা নয়।

তবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএসইসির চেয়ারম্যান ব্যক্তিগতভাবে এই লাইসেন্স অনুমোদন করেননি এবং তিনি প্রক্রিয়াটিকে প্রভাবিত করেছেন বলে কোনো প্রমাণও পায়নি ওসিসিআরপি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অধ্যাপক শিবলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, তিনি একটি বৈধ ইজারা চুক্তির অধীনে অগ্রিম ভাড়া, নিরাপত্তা জামানত এবং অগ্রিম নির্মাণ ব্যয় বাবদ তার ব্যাংক হিসাবে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৯২৪ ডলার নিয়েছেন।

'আমি বৈধ চ্যানেলে এই অর্থ পেয়েছি। আমার খারাপ উদ্দেশ্য থেকে থাকলে আমি কেন এই অর্থ দেশে আনতাম এবং সেটাও বৈধ চ্যানেলে, প্রশ্ন রাখেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, যখন মিং গ্লোবাল দাবি করে যে তাদের অর্থ তার কাছে পাঠানো হয়েছে, তখন তিনি বুঝতে পারেন যে এখানে জটিলতা আছে।

'এ কারণে আমি আদালতে টাকা জমা দিয়েছি। আদালতই সিদ্ধান্ত নেবে এই অর্থ কার কাছে যাবে,' যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
Kudos for consensus in some vital areas

Kudos for consensus in some vital areas

If our political culture is to change, the functioning of our political parties must change dramatically.

3h ago