রূপপুরের জন্য পারমাণবিক জ্বালানি আমদানি, পরিবহন ও সংরক্ষণের অনুমোদন

পাবনার এক হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ৩টি পৃথক লাইসেন্স প্রদান করা হয়। ছবি: স্টার

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য পরমাণবিক জ্বালানি আমদানি, পরিবহন ও সংরক্ষণের অনুমোদন পেয়েছে বাংলাদেশ পারমাণু শক্তি কমিশন ও রাশিয়ার একটি প্রতিষ্ঠান। 

আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) নির্দেশনা অনুযায়ী শর্ত পূরণ করায় বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (বিএইআরএ) বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনকে পারমাণবিক জ্বালানি আমদানি ও সংরক্ষণের লাইসেন্স প্রদান করেছে, আর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে পারমাণবিক জ্বালানি পরিবহনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে রাশিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানকে।
  
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পাবনার এক হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ৩টি পৃথক লাইসেন্স প্রদান করা হয়।
 
এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মাইলফলক জ্বালানি আমদানির সক্ষমতা অর্জন করল বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের নিউক্লিয়ার রেগুলেটরি স্ট্রাকচার উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. সত্যজিৎ ঘোষ।

বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মোজাম্মেল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান, রাশান ফেডারেশনের রোসটেকনাজোরের ডেপুটি চেয়ারম্যান, রোসাটমের ডেপুটি ডিরেক্টর মি এ ওয়াই পেত্রোভ এবং বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. অশোক কুমার পাল।
  
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বলেন, 'পারমাণবিক জ্বালানি আমদানি, পরিবহন ও সংরক্ষণের লাইসেন্স প্রদানের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের সক্ষমতা প্রমাণ করতে পেরেছি। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের শুরু থেকেই বাংলাদেশ আইএইএ-এর গাইডলাইন অনুসরণে কাজ করে যাচ্ছে। তারা আমাদের পরামর্শ দিয়ে এবং আমাদের ভুল সংশোধন করে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে ভূমিকা রেখেছে।'

সবার সহযগিতায় বাংলাদেশ আজ পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের চূড়ান্ত ধাপে এসে পৌঁছেছে বলেও জানান মন্ত্রী।
 
বিএইআরএ'র প্রকল্প পরিচালক ড. সত্যজিত ঘোষ জানান, পরমাণু জ্বালানি ব্যবহারে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন আছে। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এর রেগুলেটিং ও সুপারভিশন করে। পারমাণবিক জ্বালানি আমদানি, পরিবহন ও সংরক্ষণের জন্য রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়নে জড়িত সংস্থাগুলোকে আমাদের কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হয়। তারা লাইসেন্স আবেদন করে গত এক বছর ধরে প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণের নথি জমা দেওয়ার পর বার বার পর্যালোচনা ও মূল্যায়নে সন্তুষ্ট হওয়ার পর বায়েরা তাদের এই লাইসেন্স প্রদানে সম্মত হয়েছে।
 
এতে আগামী সেপ্টেম্বরে দেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য জ্বালানি আমদানিতে আর কোনো বাধা থাকল না।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, পারমাণবিক এই জ্বালানি আমদানি ও সংরক্ষণ সম্পন্ন হলে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে পরমাণু শক্তির পরিচালক হিসেবে আন্তর্জাতিক নিউক্লিয়ার ক্লাবে যুক্ত হবে। এ মর্যাদা পাওয়ার পাশাপাশি বিশ্বের দরবারে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হিসেবেও পরিচিতি লাভ করবে বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে উৎপাদন শুরু করতে আর কোনো বড় ধরনের চ্যালেঞ্জও থাকবে না। 

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর জানান, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি হিসেবে ইউরেনিয়াম আমদানি, পরিবহন ও রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে মেনে চলতে হবে আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি, তৈরি করতে হবে অবকাঠামো। পরমাণুর শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিতে বাংলাদেশও প্রতিটি ধাপে আইএইএ'র নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করে নিজেদের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে।

তিনি বলেন, 'জ্বালানি আমদানি ও পরিবহনের ক্ষেত্রে আইএইএ-এর প্রজ্ঞাপন লাগবে। রাশান ফেডারেশনের যে রপ্তানি নীতি, তার আলোকে অনুমতি লাগবে। তার জন্য নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো, সাংগঠনিক অবকাঠামো, দক্ষতা ও জনবল তৈরি করতে হয়। সকল শর্ত পূরণ করেই আমরা সংরক্ষণ, আমদানি ও পরিবহনের জন্য লাইসেন্স পেলাম।'
 
রূপপুরের জ্বালানি আমদানি দেশের জন্য আরেকটি মাইলফলক বলে দাবি করেন দেশের বৃহৎ এই প্রকল্পটির প্রকল্প পরিচালক।

তিনি বলেন, 'বৈশ্বিক নিউক্লিয়ার ক্লাবে ব্যবহারিক পর্যায়ে আমরা কনস্ট্রাকশনের মধ্য দিয়ে একবার গেলাম, আরেকবার জ্বালানি আমদানির মধ্য দিয়ে নিউক্লিয়ার এনার্জি পরিচালনাকারী দেশের মর্যাদায় উন্নীত হব।'

শৌকত আকবর বলেন, 'অপারেশনাল কমিশনিংয়ের সঙ্গে আমাদের অনেকগুলো অবকাঠামো জড়িত, ফিজিক্যাল প্রোডাকশন জড়িত, অফসাইট টেলিকমিউনিকেশন জড়িত, জরুরি ব্যবস্থাপনা অবকাঠামো জড়িত। আশা করছি- আইএইএ-এর নির্দেশনা মেনে সেগুলো নির্ধারিত সময়েই সম্পন্ন করতে আমরা সক্ষম হব।'

পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে পদ্মা নদীর পাড়ে নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ প্রকল্পটি দেশের ইতিহাসে এককভাবে সবচেয়ে বড় অবকাঠামো। রাশিয়ার কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের জেনারেল ডিজাইনার ও কন্ট্রাক্টর রাশিয়ার রোসাটম করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা।

এ বিদ্যুৎ প্রকল্পের দুটি ইউনিটে থাকছে ৩+ প্রজন্মের রুশ ভিভিইআর রিঅ্যাক্টর, যেগুলো আন্তর্জাতিক সব নিরাপত্তা চাহিদা পূরণে সক্ষম। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের নির্মাণকাজের ৪ ভাগের ৩ ভাগ শেষ হয়েছে। কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট থেকে ২০২৪ সালে এবং এর পরের বছর দ্বিতীয় ইউনিট থেকে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট করে মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে। 

Comments

The Daily Star  | English
government decision to abolish DSA

A law that gagged

Some made a differing comment, some drew a political cartoon and some made a joke online – and they all ended up in jail, in some cases for months. This is how the Digital Security Act (DSA) and later the Cyber Security Act (CSA) were used to gag freedom of expression and freedom of the press.

11h ago