দেশি হাঁস, ভেড়া, মুন্সিগঞ্জ গরুর জিন রহস্য উদ্ঘাটন

দেশে প্রথমবারের মতো নিজস্ব সক্ষমতায় দেশীয় প্রজাতির গরু 'মুন্সিগঞ্জ ক্যাটেল', দেশীয় প্রজাতির ভেড়া ও হাঁসের পূর্নাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স উদ্ঘাটন করা হয়েছে।
মুন্সিগঞ্জ গরু। ছবি: বাংলাদেশ প্রাণীসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের বুকলেট থেকে নেওয়া

দেশে প্রথমবারের মতো নিজস্ব সক্ষমতায় দেশীয় প্রজাতির গরু 'মুন্সিগঞ্জ ক্যাটেল', দেশীয় প্রজাতির ভেড়া ও হাঁসের পূর্নাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স উদ্ঘাটন করা হয়েছে।

এ সফলতা পেলেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজির (এনআইবি) বিজ্ঞানীরা।

এনআইবির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও মহাপরিচালক ড. মো. সলিমুল্লাহর নেতৃত্বে গবেষক দল এই ৩ প্রাণির জীবনরহস্য উন্মোচন করেন।

আজ বৃহস্পতিবার আশুলিয়ায় এনআইবির হলরুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রাণীর পূর্নাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচনের বিষয়টি জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান।

গবেষণার তথ্য তুলে ধরে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন এনআইবির বায়ো ফরমেটিকস বিভাগের বিভাগীয় ইনচার্জ মোহাম্মদ উজ্জ্বল হোসেন।

গবেষণায় ৩ প্রাণির বৈশিষ্ট্য উঠে এসেছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশি মীরকাদিম গরুর চোখের পাতা ও খুর গোলাপি, ত্বক সাদা, লেজের অগ্রভাগ বাদামী, শিং মাঝারি বাঁকা ও অগ্রভাগ সূক্ষ্ম। অপরদিকে প্রাপ্তবয়স্ক ভেড়ার ওজন হয় ২০ কেজি, লোম মসৃণ ও বিন্যস্ত ও কৃমি সাদা বর্ণের হয়। এছাড়া হাঁসের রং হয় বাদামি, কালো ও সাদা পালকের মিশ্রণ, ঠোঁটের রং হয় হলুদাভ কালো, পায়ের পাতা হয় উজ্জ্বল কমলা রংয়ের। 

এতে গরুর জিনোমের দৈর্ঘ্যে ২২৩ কোটি ৪৫ লাখ ৩২ হাজার ৮৫৬ জোড়া নিওক্লিউটাইড পাওয়া যায়। মীরকাদিম জাতটির ভারতের জেবু জাতের সঙ্গে মিল রয়েছে। এছাড়া এটির নিজস্ব জেনেটিক বৈশিষ্ট্যও উঠে আসে এ গবেষণায়। গরুর মাংস উৎপাদন সংক্রান্ত ৫টি জিনের তথ্য পেয়েছেন গবেষকরা, যা মাংস উৎপাদনের তথ্যে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

অপরদিকে ভেড়ার জিনোম বিশ্লেষণ করে যথাক্রমে ২৮৬ কোটি ৯৪ লাখ ৭৯ হাজার ৯২৫ জোড়া নিউক্লিওটাইড ও হাঁসের জিনোম বিশ্লেষণ করে ১৩৩ কোটি ৬ লাখ ৫৪ হাজার ৭৩৫ জোড়া নিউক্লিওটাইড পাওয়া যায়।

গবেষণার এসব তথ্য গত ২৩ মার্চ ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনে নিবন্ধন করা হয়েছে।

দেশে ২৫ দশমিক ৭ মিলিয়ন গরু, ১ দশমিক ৯ মিলিয়ন ভেড়া ও ৩৪ দশমিক ১ মিলিয়ন হাঁস আছে। মোট জিডিপির প্রায় ২ দশমিক ৯ শতাংশ প্রাণিসম্পদ খাত থেকে আসে, যা মোট বার্ষিক প্রবৃদ্ধির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। এ গবেষণার ফলে এই খাতে আরও সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে।

এনআইবি মহাপরিচালক ড. মো. সলিমুল্লাহ বলেন, 'এটা আমাদের এই গবেষণার প্রাথমিক একটি ধাপ। যেমন মীর কাদিম গরুর জিনোম সিকোয়েন্সের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি এর বৈশিষ্ট্যগুলো কী। এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে পরে আমরা সিলেকটিভ ব্রিড তৈরি করা থেকে শুরু করে অন্যান্য জাত ডেভেলপ করাসহ, যেসব জিনগত বৈশিষ্ট্যের জন্য অধিক মাংস বা দুধ উৎপাদিত হয়ে থাকে, সেগুলো শনাক্ত করে তা অন্য প্রাণিতে স্থানান্তর করতে পারব। এতে আমরা নিজস্ব জাতের গবাদিপশু আছে সেগুলোকে রক্ষা করার পাশাপাশি দেশের প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে বড় ভূমিকা পালন করবে।'

গবেষক দলে আরও ছিলেন-সেন্টার ফর নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং অ্যান্ড অ্যানালাইটিকস প্রকল্প পরিচালক ও সিইও কেশব চন্দ্র দাস, এসএসও ড. নুসরাত জাহান, ড. আঞ্জুমান আরা ভূইয়া, ড. ইউএস মেহজাবিন আমিন, এসও মো. হাদিসুর রহমান, মোহাম্মদ উজ্জ্বল হোসেন, ইসতিয়াক আহমেদ, তাহমিদ আহসান, জিসান মাহমুদ চৌধুরী ও অরিত্র ভট্টাচার্য।

২০২১ সালের জুলাই মাসে ৪৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে এনআইবিতে সেন্টার ফর নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং অ্যান্ড অ্যানালাইটিকস প্রকল্প নেওয়া হয়। ওই প্রকল্পের আওতায় চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি দেশী জাতের এই ৩ প্রাণির জিন রহস্য উদ্ঘাটনে গবেষণা শুরু হয়।

Comments