প্রতিমন্ত্রী পলকের ক্ষোভে ওসিকে প্রত্যাহার, পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের দাবিতে পুনর্বহাল

নাটোরের সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমানের প্রতি গত রোববার ক্ষোভ প্রকাশ করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। পরে ওই রাতেই ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়।

এরপরে সোমবার দুপুরে প্রত্যাহারের আদেশ বাতিল করে ওসি মিজানুর রহমানকে পুনর্বহাল করা হয়।

উপজেলা পরিষদ চত্বরে আয়োজিত গণশুনানিতে জনসমক্ষে ওসির ওপর প্রতিমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করার বিষয়টি পুলিশ ভালোভাবে নেয়নি বলে জানা গেছে।

পরে পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কাছে ওসি মিজানুরকে পুনর্বহালের দাবি জানায় বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন।

রোববার সিংড়া উপজেলা পরিষদে আয়োজিত গণশুনানিতে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক। ছবি: সংগৃহীত

গত রোববার সকালে সিংড়া উপজেলায় চুরি, ছিনতাই ও মাদকসংক্রান্ত বিষয়ে গণশুনানি করেন প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা খাতুনের সঞ্চালনায় গণশুনানিতে বিভিন্ন অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।

এসময় উপজেলার শেরকোল এলাকার সাদেক আলী শেখ তার জমি দখলের বিষয়ে থানায় অভিযোগ করে কোনো প্রতিকার পাননি বলে অভিযোগ করেন।

প্রতিমন্ত্রী প্রতিটি অভিযোগের ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য ওসিকে নির্দেশ দেন। ওসি মিজানুর তখন হাইকোর্টের একটি আদেশের উল্লেখ করে বলেন, জমি সংক্রান্ত বিষয়ে পুলিশের কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই।

এ জবাব শুনে প্রতিমন্ত্রী পলক ওসির প্রতি ক্ষুব্ধ হন। তিনি বলেন, 'আমি একজন আইনজীবী এবং আইনপ্রণেতা। আমাকে আপনি হাইকোর্ট দেখাচ্ছেন, আইনের বই দেখাচ্ছেন। তাহলে পুলিশের দরকার কী? পুলিশের হাতে প্রযুক্তি আছে, চোর শনাক্তের কৌশল আছে। তাহলে কেন চোর শনাক্ত হবে না? আপনি আমাদের সহযোগিতা না করলে আমরাও সহযোগিতা করব না।'

এই গণশুনানির ভিডিও প্রতিমন্ত্রী পলক নিজেও ফেসবুকে শেয়ার দেন। 

পরে রোববার রাতেই নাটোরের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম ওসি মিজানুর রহমানকে পুলিশ লাইনসে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। তার নির্দেশনা ইমেইলে রাতেই ওসির কাছে পাঠানো হয়। 

পরে সোমবার দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ সুপার আরেকটি আদেশে রাতের আদেশ প্রত্যাহার করে নেন এবং ওসিকে সিংড়া থানায় পুনর্বহাল করেন।

ওসি মিজানুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আইনের ভেতরে যেভাবে কাজ করা যায় আমরা সেটাই করেছি। অভিযোগকারী সাদেক আলীর অভিযোগের বিষয়েও আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'প্রতিমন্ত্রী জনসমক্ষে যেভাবে বলেছেন ওভাবে না বললেই ভালো হতো।'

জানতে চাইলে নাটোরের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ওসির বদলি ও প্রত্যাহার দুটোই পুলিশের নিয়মিত কাজের অংশ। আইনের বাইরে পুলিশের কাজ করার কোনো সুযোগ নেই।'

প্রতিমন্ত্রীর ক্ষোভের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, 'পুলিশ পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করে। কেউ মন খারাপ করলে সেটা ব্যক্তিগত বিষয়।'

ওসি মিজানুরের পুনর্বহালের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং ডিএমপি গুলশান থানার ওসি বিএম ফরমান আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ওসি মিজানুর যেসব কথা বলেছেন তা আইনগত জায়গা থেকেই বলেছেন। মন্ত্রীর কথার প্রতিউত্তর করেননি ওসি। বিষয়টি জানার পরে আমরা আইজি স্যারকে বলেছি। আইজি স্যার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। পরে আমাদের ওসি মিজানুরকে প্রত্যাহারের আদেশ বাতিল করা হয়।'

এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও যাত্রাবাড়ি শিল্পাঞ্চল থানার ওসি মো. মাজহারুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গণশুনানিতে প্রতিমন্ত্রী জমি সংক্রান্ত বিষয়ে যেটা বলেছেন, সেটা পুলিশের এখতিয়ার নয়। জমি সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করার এখতিয়ার পুলিশকে দেওয়া হলে পুলিশ অবশ্যই কাজ করবে।'

এ বিষয়ে জানতে মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এ বিষয়ে জানতে চেয়ে মোবাইলে ও হোয়াটসঅ্যাপে টেক্সট পাঠানো হলে বিকেল ৪টার দিকে জবাব আসে, 'নো কমেন্টস।'

মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে তার সহকারী সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সুবিধা অনুযায়ী পরে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলিয়ে দেবেন।

Comments

The Daily Star  | English
cyber security act

A law that gagged

Some made a differing comment, some drew a political cartoon and some made a joke online – and they all ended up in jail, in some cases for months. This is how the Digital Security Act (DSA) and later the Cyber Security Act (CSA) were used to gag freedom of expression and freedom of the press.

9h ago