ঢাকার এক্সপ্রেসওয়ে: স্বপ্ন হলো সত্যি
বিশ্বব্যাংক ২০১৭ সালে যখন ঢাকা শহরের যানজট পরিস্থিতির একটি বিশ্লেষণ প্রকাশ করে তখন মোট নিবন্ধিত গাড়ির সংখ্যা ছিল ১১ লাখ ৮২ হাজার। বিশ্বব্যাংক তাদের বিশ্লেষণে জানায়, ট্রাফিকের গড় গতি ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার থেকে কমে ৭ কিলোমিটারে নেমে এসেছে, যা হাঁটার গড় গতির চেয়ে সামান্য বেশি। এতে আরও উল্লেখ করা হয়, ঢাকায় যানজটের কারণে প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা ব্যয় হয়।
গত সাড়ে পাঁচ বছরে রাজধানীর রাস্তায় অতিরিক্ত ৮ লাখ ৪৭ হাজার নিবন্ধিত যানবাহন যোগ হয়েছে, সেইসাথে আছে অনেক অনিবন্ধিত যানবাহনও। যা যানজট পরিস্থিতিতে অসহনীয় করে তুলেছে। নগরবাসীকে যখন রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটাতে হয়, তখন আংশিকভাবে উন্মুক্ত মেট্রোরেলে আশার আলো দেখতে পান তারা।
দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আজ আংশিকভাবে চালু হওয়াযর মধ্য দিয়ে নগরবাসীর জন্য এই স্বস্তি আরও কিছুটা বাড়ছে। বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত ১১.৫ কিলোমিটার অংশটি আজ উদ্বোধন হতে যাচ্ছে, যা শহরের অন্যতম ব্যস্ততম বিমানবন্দর সড়কে বিকল্প রুট হিসাবে কাজ করবে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই অংশটি চালু হলে বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেটে পৌঁছাতে ১০ মিনিটেরও কম সময় লাগবে, যা সাধারণত নিয়মিত রাস্তায় এক ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে।
পিপিপি প্রকল্পের অংশীদার ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ভাস্কন খান্নাভা বলেন, 'আমি মনে করি, ঢাকার মানুষ সহজে যাতায়াতের জন্য এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে পারলে খুশি হবে। এটি দ্রুততর হবে তাদের জন্য।'
কর্মকর্তারা জানান, যানজট এড়াতে ১১ দশমিক ৫০ মিটার মেইন লাইন ছাড়াও এক্সপ্রেসওয়েতে প্রবেশ ও বেরোনোর জন্য ১৩টি র্যাম্পও খোলা হবে।
পরিবহন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আংশিকভাবে উদ্বোধনের ফলে কিছু প্রাইভেট গাড়ি ব্যবহারকারী উপকৃত হলেও পুরো সুফল পেতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে চালু হওয়া পর্যন্ত জনগণকে অপেক্ষা করতে হবে।
বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ দুটি এক্সপ্রেসওয়ের উদ্দেশ্য ছিল ঢাকা শহরের অভ্যন্তরে যানবাহন, বিশেষ করে ভারী যানবাহনের জন্য একটি 'ভার্টিকাল বাইপাস' তৈরি করা।
ঢাকা আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নামে আরেকটি এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা ইপিজেড এলাকা থেকে আশুলিয়া ও আবদুল্লাহপুর হয়ে আসার পর বিমানবন্দর এলাকার কাছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সাথে যুক্ত হবে। ২০ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়েটিও ২০২৬ সালের জুনের সময়সীমা নিয়ে নির্মাণাধীন রয়েছে।
তিনি সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, একটি এক্সপ্রেসওয়ে আংশিকভাবে চালু হওয়ার পরে জনগণ এক্সপ্রেসওয়ে থেকে পুরোপুরি উপকৃত হবে না। তবে এটি কিছু প্রাইভেট কার ব্যবহারকারীদের স্বস্তি দেবে কারণ মানুষ যানজটপ্রবণ দুটি এলাকা বনানী ও ফার্মগেট এড়িয়ে চলতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, হাফ-ওয়ে এক্সপ্রেসওয়ের সুবিধা র্যাম্পগুলোর সঠিক ব্যবস্থাপনার উপর নির্ভর করবে।
বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক হাদিউজ্জামান বলেন, দুটি এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ হলে এক্সপ্রেসওয়ের প্রকৃত সুফল জনগণ পাবে।
তিনি ব্যাখ্যা করেন যে ট্রাকসহ ভারী যানবাহন, যা দিনের বেলা শহরের মধ্যে চলাচল নিষিদ্ধ এবং দূরপাল্লার বাস এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে শহরকে বাইপাস করতে পারবে।
যখন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যানবাহন এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে, তখন এটি সড়কে যানবাহনের সংখ্যা কমাবে, যার ফলে যানজট হ্রাস পাবে এবং যথাযথ গণপরিবহন সুবিধার সুযোগ তৈরি হবে, তিনি যোগ করেন।
তবে ভাস্কন খান্নাভা বলেন, এক্সপ্রেসওয়ে আংশিক উদ্বোধনের পরেও মানুষ প্রত্যাশিত সুবিধা পাবে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, আংশিক উদ্বোধন জনসাধারণকে কীভাবে এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে হয় সে সম্পর্কে জানতে সাহায্য করবে, যার মধ্যে লেন, ইলেকট্রনিক এবং ম্যানুয়াল টোল পেমেন্ট সিস্টেম রয়েছে।
২০০৫ সালে সরকার ঢাকা শহরের জন্য স্ট্র্যাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যান (এসটিপি) অনুমোদন করে, যেখানে তিনটি মেট্রোরেল লাইন, তিনটি বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লাইন এবং ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের সুপারিশ করা হয়। তবে ২০১৬ সালে এসটিপি সংশোধন করা হয়।
(সংক্ষেপিত)
Comments