শেখ হাসিনা-মোদির বৈঠকে তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয় উত্থাপিত হবে: পররাষ্ট্রসচিব

আগামী সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়টিও উত্থাপন করবে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। ছবি: সংগৃহীত

আগামী সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়টিও উত্থাপন করবে বাংলাদেশ।

আজ রোববার পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, 'আমাদের তিস্তার পানি বণ্টনের ইস্যু আছে, যা অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী উত্থাপন করবেন। আমাদের আরও কিছু সমস্যা আছে। আমাদের ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে।'

তিনি বলেন, 'গঙ্গার পানি চুক্তি আরেকটি বিষয়, যা শিগগিরই শেষ হয়ে যাবে।'

দীর্ঘ আলোচনার পর ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ-ভারত গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি সই হয়।

৩০ বছরের চুক্তির মেয়াদ ২০২৬ সালের মধ্যে শেষ হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, 'বাংলাদেশ-ভারত সবসময়ই সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পর্যায়ে তিস্তা ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছে। আমরা এটাকে সবসময় আলোচনার এজেন্ডায় রাখতাম। এবারও আমরা আশা করছি প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে কথা বলবেন।'

বাংলাদেশ মনে করে ২ দেশের পানি বণ্টন সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে, কারণ ২ দেশ পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে কাজ করতে 'মানসিকভাবে একমত'।

পূর্ববর্তী আলোচনার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিস্তা নদীর পানি বণ্টন সংক্রান্ত অন্তর্বর্তী চুক্তি শেষ করার জন্য বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত অনুরোধ পুনর্ব্যক্ত করেছেন। যার খসড়া ২০১১ সালে চূড়ান্ত করা হয়েছিল।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে রাষ্ট্রীয় সফরের সময়, উভয় নেতা নদী দূষণের মতো সমস্যাগুলো মোকাবিলা করতে এবং অভিন্ন নদীর ক্ষেত্রে নদীর পরিবেশ ও নদীর নাব্যতা উন্নত করার জন্য কর্মকর্তাদের একসঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দেন।

এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ৯-১০ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অংশগ্রহণ ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কের 'সুবর্ণ অধ্যায়ে' আরও একটি পালক যুক্ত করবে।

ভারত সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

পানি বণ্টন ইস্যুতে ফলোআপ আলোচনা

এর আগে, পররাষ্ট্রসচিব ২০২৩ সালের জাতিসংঘের পানি সম্মেলনে বাংলাদেশের দেওয়া ১০টি প্রতিশ্রুতি নিয়ে একটি ফলোআপ আলোচনায় অংশ নেন।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, তারা মূলত আলোচনা করেছেন কীভাবে সেই প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন করা যায় এবং উন্নয়ন সহযোগীরা কীভাবে এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশকে সহায়তা করতে পারে।

পররাষ্ট্রসচিব বলেন, 'অধিকাংশ অঙ্গীকার ২০৩০ সালের মধ্যে পূরণ হবে এবং বিশ্বের অনেক দেশ আলাদাভাবে তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।'

ইউএন ২০২৩ ওয়াটার কনফারেন্সে ওয়াটার অ্যাকশন এজেন্ডা গ্রহণ করা হয়েছে, যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজিস) এবং পানির সঙ্গে যুক্ত তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য দেশ ও অংশীজনদের স্বেচ্ছামূলক প্রতিশ্রুতির প্রতিনিধিত্ব করে।

আয়োজনটিতে ৬ হাজার ৫০০ জনের বেশি মানুষ অংশ নিয়েছিল।

সভায় ওয়াটার অ্যাকশন এজেন্ডা বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান এবং অপরিবর্তনীয় সম্পদ রক্ষার জন্য আর্থিক প্রতিশ্রুতি, সহযোগী প্রকল্প এবং পদক্ষেপের আকারে প্রায় ৭০০ প্রতিশ্রুতি পেয়েছে।

পররাষ্ট্রসচিব বলেন, জীবিকা ও বেঁচে থাকার জন্য পানি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তারা উপকূলীয় অঞ্চল, লবণাক্ততা সমস্যা, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর হ্রাস, প্লাস্টিক দূষণ, কৃষিজ পানির অপচয়, বৃষ্টির পানি সংগ্রহ এবং পানি ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বাড়ানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করেছেন।

তিনি বলেন, কয়েক বছর পর উদ্বিগ্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তারা আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সম্পদ সংগ্রহের ওপর জোর দিয়েছেন।

জাতিসংঘ বলেছে, পানি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এবং মানুষ ও গ্রহের অন্যদের জীবনের স্বাস্থ্য ও সমৃদ্ধির জন্য একটি আবশ্যিক উপাদান।

জাতিসংঘ আরও বলেছে, কিন্তু পানি সংক্রান্ত লক্ষ্য ও লক্ষ্যমাত্রার অগ্রগতি উদ্বেগজনকভাবে আলোচনার বাইরে রয়েছে। যা সমগ্র টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডাকে বিপন্ন করে তুলেছে।

Comments