ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাখোঁর সফর কেন গুরুত্বপূর্ণ

নয়াদিল্লিতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন শেষে মাখোঁ আজ সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকেলে নয়াদিল্লি থেকে দেশে ফিরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফরাসি প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানাবেন।
এমানুয়েল মাখোঁ
এমানুয়েল মাখোঁ। ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

অর্থনৈতিক ও কৌশলগত দিক থেকে বাংলাদেশের গুরুত্ব ক্রমেই বাড়ছে। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর আসন্ন সফর যেন সেই প্রমাণই দেয়।

আজ রোববার ফরাসি প্রেসিডেন্ট ২ দিনের সফরে ঢাকায় আসবেন। গত ৩৩ বছরে কোনো ফরাসি প্রেসিডেন্টের এই প্রথম ঢাকা সফর।

নয়াদিল্লিতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন শেষে মাখোঁ আজ সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌঁছবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকেলে নয়াদিল্লি থেকে দেশে ফিরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফরাসি প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানাবেন।

আজ রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে মাখোঁর সম্মানে প্রধানমন্ত্রী নৈশভোজের আয়োজন করবেন।

আগামীকাল সকালে মাখোঁ ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন এবং বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করবেন।

এরপর ২ নেতা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।

যে কারণে এই সফর গুরুত্বপূর্ণ

গত কয়েক বছরে ফ্রান্স ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী হয়েছে।

বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ তৈরি করেছে ফ্রান্সের মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান থালেস। মাখোঁর সফরকালে ২ দেশ দ্বিতীয় স্যাটেলাইটের জন্য চুক্তি সই করতে পারে।

বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট থালেস তৈরি করলেও এটি মহাকাশে উৎক্ষেপণ করেছিল ইলন মাস্কের স্পেসএক্স।

গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তবে এবার স্যাটেলাইটটি থালেস তৈরি ও উৎক্ষেপণ করবে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত এ আলোচনাই হয়েছে।'

বাংলাদেশের বিমানবন্দরে রাডার সিস্টেমসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে ফ্রান্স কাজ করছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, 'এগুলো বড় ধরনের চুক্তি।'

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশ ইউরোপীয় বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান এয়ারবাসের কাছ থেকে ২টি কার্গোসহ ১০টি উড়োজাহাজ কিনতে রাজি হয়েছে।

দেশে স্যাটেলাইট তৈরির ইউনিট স্থাপনের বিষয়ে ফরাসি প্রস্তাবকেও স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ।

ঢাকায় ফরাসি দূতাবাসের তথ্য মতে, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১৯৯০ সালে ২১০ মিলিয়ন ইউরো থেকে বর্তমানে ৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন ইউরোতে উন্নীত হয়েছে।

ফ্রান্স বাংলাদেশের পঞ্চম বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ। ফরাসি প্রতিষ্ঠানগুলো এখন প্রকৌশল, জ্বালানি, মহাকাশ ও পানিসহ বেশ কয়েকটি খাতে কাজ করছে।

ফরাসি দূতাবাস জানায়, এ পর্যন্ত পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনসহ গুরুত্বপূর্ণ ১৫ প্রকল্পে সহায়তার জন্য ফ্রান্স বাংলাদেশকে ১ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ইউরো ঋণ ও ৩১ মিলিয়ন ইউরো অনুদান অনুমোদন করেছে।

এতে আরও বলা হয়, 'ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ফরাসি প্রযুক্তি ও জ্ঞান কাজে লাগিয়ে ব্যবসা সম্প্রসারণে উভয় পক্ষের ক্রমবর্ধমান আগ্রহ দেখে আমরা রোমাঞ্চিত। এমানুয়েল মাখোঁর আসন্ন সফরের মধ্য দিয়ে কিছু প্রকল্প চূড়ান্ত করে নেওয়া ও অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করার সুযোগ হবে।'

মাখোঁ ভারত-প্রশান্ত অঞ্চলে ফ্রান্সের কৌশল বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখবেন।

দূতাবাসের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে বলা হয়, 'ফ্রান্সের সহায়তায় ও অংশীদারিত্বে বৈচিত্র্য আনতে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী একটি দেশের সঙ্গে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও গভীর করার এটি একটি সুযোগ।'

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সহায়তা করতে ফ্রান্স 'লস অ্যান্ড ড্যামেজ' উদ্যোগ নিয়েছে। জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে প্রথম সারিতে থাকা বাংলাদেশ 'লস অ্যান্ড ড্যামেজ' উদ্যোগটি কার্যকর করতে চায়।

তিনি আরও বলেন, 'অভিযোজন কার্যক্রমের জন্য আমাদের প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। কিন্তু উন্নত দেশগুলো এখনো এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে পারেনি। আমরা ফরাসি প্রেসিডেন্টকে এই উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানাব।'

ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতা এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে আন্তর্জাতিক ফোরামে ফ্রান্সের গুরুত্ব অনেক।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন গত সপ্তাহে সাংবাদিকদের বলেন, 'রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে আমরা তাদের সমর্থন চাইব।'

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষক ডেইলি স্টারকে বলেন, ফ্রান্স জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে শক্তিশালী দেশ হওয়া সত্ত্বেও তাদের স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি আছে, যা অন্য দেশকে পরামর্শ বা চাপ দেয় না।

তিনি আরও বলেন, 'মানবাধিকার ও গণতন্ত্র নিয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে ফ্রান্স মধ্যপন্থা নীতি মেনে চলে। যুক্তরাষ্ট্র যখন এসব ইস্যুতে বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছে, তখন বাংলাদেশ এটাই তো চাইবে।'

Comments