নরসিংদী

সড়কবিহীন কোটি টাকার সেতু

সেতুগুলোর একটি অবস্থিত নরসিংদী সদর উপজেলার আলোকবালী, দুটি একই উপজেলার চরদিঘলদি ইউনিয়নে এবং অন্য দুটির অবস্থান রায়পুরা উপজেলার আমীরগঞ্জে ও শিবপুর উপজেলার মাছিমপুরে। এই সেতুগুলোর বেশিরভাগই ৬-৭ বছর আগে তৈরি।
সড়কবিহীন কোটি টাকার সেতু
ছবি: জাহিদুল ইসলাম/স্টার

প্রায় ১ কোটি ৬২ লাখ টাকার বেশি ব্যয়ে নরসিংদীর ৩টি উপজেলায় ৫টি সেতু নির্মাণ করা হলেও সংযোগ সড়ক না থাকায় সেতুগুলো এলাকাবাসীর কোনো কাজে আসছে না।

প্রায় অর্ধ যুগ আগে নির্মাণ করা এই সেতুগুলো অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। সরকারের অর্থ ব্যয় হলেও ভোগান্তি কমেনি এলাকাবাসীর। এসব সেতুতে উঠতে ব্যবহার করতে হচ্ছে বাঁশের সাঁকো।

সেতুগুলোর একটি অবস্থিত নরসিংদী সদর উপজেলার আলোকবালী, দুটি একই উপজেলার চরদিঘলদি ইউনিয়নে এবং অন্য দুটির অবস্থান রায়পুরা উপজেলার আমীরগঞ্জে ও শিবপুর উপজেলার মাছিমপুরে। এই সেতুগুলোর বেশিরভাগই ৬-৭ বছর আগে তৈরি।

সরেজমিনে দেখা যায়, আলোকবালী ইউনিয়নের কাজিরকান্দি ও বকশালীপুর গ্রামের সংযোগ রক্ষা করতে খালের উপর ৪০ ফুট দীর্ঘ একটি সেতু নির্মাণ করা হয়।

২০১৫-১৬ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু নির্মাণ প্রকল্পের অর্থায়নে ৩০ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু সেতুটির সংযোগ সড়ক না থাকায় চলাচল করতে পারছেন না এলাকাবাসী।

এলাকাবাসী বলছেন, দুটি গ্রামের মাঝে প্রায় ১ কিলোমিটার সড়ক আছে। কিন্তু সড়কটি নিচু হওয়ায় পানিতে তলিয়ে গেছে। শুকনো মৌসুমেও রাস্তাটি ব্যবহার করা যায় না। অন্যদিকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩৮ লাখ ৮৯ হাজার টাকা ব্যয়ে ৫০ ফুট দীর্ঘ চরদিঘলদি বাজারের রাস্তায় তৈরি সেতুটিও একই অবস্থায় পড়ে আছে।

ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন শাহীন জানান, একই ইউনিয়নের জিতরামপুর এলাকায় আরেকটি সেতু একই অবস্থায় পড়ে আছে যার নির্মাণ ব্যয় প্রায় ৪০ লাখ টাকা।

সংযোগ সড়কের অভাবে পড়ে থাকা আমীরগঞ্জ এলাকায় ৩০ ফুট দীর্ঘ সেতুটি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩২ লাখ ২৭ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়।

শিবপুরে মাছিমপুর ইউনিয়নের খড়িয়া এলাকায় বিলের উপরে অবস্থিত সেতুটি একপাশে রাস্তা থাকলেও আরেক পাশে রাস্তা নেই। সেতুটি প্রায় ১৫ বছর আগে ২০ লাখ টাকা খরচ করে নির্মাণ করা হয়।

এ পাঁচটি সেতু নির্মাণে সরকারের প্রায় ১ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। এ সেতুগুলো ব্যবহার উপযোগী করা গেলে লক্ষাধিক মানুষের উপকার হবে।

আলোকবালীর ইউনিয়নের বকশালীপুর গ্রামের আব্দুল লতিফ মিয়া (৪৫) বলেন, 'সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল দুটি গ্রামের স্বাভাবিক যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য। কিন্তু বর্ষাকালে সেতুর সংযোগ সড়কে উভয় পাশের রাস্তায় ৪-৫ ফুট পানি থাকে। সেতুটি ব্যবহার করতে না পারায় এক কিলোমিটারের পথ দুই-তিন কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। সেতু নির্মাণের পর এখানে কখনো রাস্তা সংস্কার করা হয়নি।'

তিনি আরও বলেন, 'আমাদের গ্রামটি বিভিন্নভাবে বঞ্চিত। শিক্ষার্থীরা এ রাস্তাটি ব্যবহার করতে পারলে পাশের দুটি গ্রামে ঘুরে যেতে হতো না, কষ্ট লাঘব হতো। আমরা দ্রুত এ সেতুটির সংযোগ রাস্তা চাই।'

চরদিঘলদি ইউনিয়নের বাসিন্দা সাঈদ আব্দুল্লাহ (৫৫) বলেন, 'চরদিঘলদি বাজারের পাশেই সংযোগ রাস্তা বিহীন সেতু পড়ে আছে। এ সেতুর মাধ্যমে পাশের আরও তিন গ্রামের মধ্যে সরাসরি চলাচল করা যেত। কিন্তু সংযোগ রাস্তা না থাকায় মালামাল পরিবহনে কষ্ট হচ্ছে। আমাদের দাবি এ সেতুর সংযোগ সড়ক স্থাপন করে কষ্ট লাঘব করা হোক।'

রায়পুরা উপজেলার আমিরগঞ্জ শাহাদাৎ ইসলামের (৩২) অভিযোগ সেতুরটির সংযোগ সড়ক তুলনামূলক নিচু হওয়ায় বর্ষাকালে পানির নিচে তলিয়ে যায়। ফলে, এটি জনগণের ব্যবহারের জন্য কোনো কাজে আসছে না।

চরদিঘলদি ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন শাহীন বলেন, 'আমাদের এলাকার চরদিঘলদি বাজারের পাশাপাশি জিতরামপুরেও একটি সেতু রয়েছে যার সংযোগ রাস্তা নেই। আমরা এলজিইডিকে সংযোগ সড়ক নির্মাণের অনুরোধ করে চিঠি লিখেছি। তারা আমাদের জানিয়েছেন, অচিরেই তারা রাস্তাগুলো নির্মাণ করে দেবেন। আমরা আশাবাদী সমস্যাগুলো অচিরেই সমাধান হয়ে যাবে।'

আলোকবালী ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন সরকার দীপু বলেন, 'ইতোপূর্বে সেতুরটির জন্য দুবার রাস্তা মেরামত করেছি। কিন্তু বর্ষাকালে স্রোতের কারণে ও নৌকার ঘর্ষণে রাস্তাটি ভেঙে গেছে। এবার পানি কমে যাবার পর রাস্তা আবারও ঠিক করে দেওয়া হবে।' 

তবে, এলাকাবাসী জানান, কখনো রাস্তা মেরামত করা হয়নি, বরং সেতুটি নির্মাণ করে দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছেন।

শিবপুর উপজেলার মাছিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হারিছ রিকাবদার বলেন, 'জমির মালিকানা সংক্রান্ত জটিলতায় আমরা রাস্তাটি মেরামত করতে পারিনি। জমির মালিক রাস্তা দিচ্ছেন না। আমরা চেষ্টা চালিয়েছি বহুবার। তারপরও প্রশাসনের সহায়তা চাইব যাতে করে এলাকাবাসী এটি ব্যবহার করে সহজে যাতাযাত করতে পারেন।'

নরসিংদী জেলা প্রকল্প পরিচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, 'অধিকাংশ সময় দেখা যায়, নির্মাণকৃত সেতু থেকে উভয় পাশের এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে কোথাও কোথাও প্রায় ৫০০ মিটার থেকে ১ কিলোমিটার পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণের দরকার হয়। তখন, সেতু নির্মাণ থেকে রাস্তার নির্মাণের ব্যয় বেশি হয়ে যায়। ফলে, অধিকাংশ সময় সেতু থাকলেও সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা সম্ভব হয় না।'

তিনি আরও বলেন, 'আসলে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মীত নরসিংদীতে ৫টি সেতুর সংযোগ রাস্তা না থাকায় বিপাকে এলাকাবাসী।'

 

 

Comments