টেলিটকে বিনিয়োগ করতে চায় বসুন্ধরা গ্রুপ

টেলিটক এই প্রস্তাব মূল্যায়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে।

খুঁড়িয়ে চলা রাষ্ট্রায়ত্ব সেল ফোন অপারেটর টেলিটকে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। কৌশলগত বিনিয়োগকারীর হওয়ার এই প্রস্তাবটি যাচাই করে দেখছে টেলিটক। এটি এমন একটি পদক্ষেপ যা দেশের মোবাইল ফোন ব্যবসার চিত্র পাল্টে দিতে পারে।

১৯ বছরের পথচলায় প্রথম দুই বছর ছাড়া বাকি সব বছরেই লোকসানে থাকা টেলিটকের জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে জমা দেওয়া এই প্রস্তাবে নেটওয়ার্কের উন্নয়ন, গ্রাহক পরিসেবা বৃদ্ধি এবং টেলিটকের সিস্টেম আপগ্রেড করার একটি রূপরেখা দেওয়া হয়েছে বসুন্ধরা টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেডের পক্ষ থেকে।

টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের নির্দেশে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২২৩ দশমিক ১ কোটি টাকা অর্থাৎ ২৭ দশমিক ২ শতাংশ সার্বিক লোকসানে থাকা টেলিটক এই প্রস্তাব মূল্যায়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে।

টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে থাকা নুরুল মাবুদ চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, 'আমরা প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাই করছি, আমাদের কয়েকজন কর্মকর্তা এটি খতিয়ে দেখছেন।'

পুরো বিষয়টি প্রাথমিক পর্যায়ে আছে জানিয়ে প্রস্তাবের বিশদ বিবরণ এবং বসুন্ধরা কতটা বিনিয়োগ করতে চায় তার বিস্তারিত দিতে রাজি হননি নুরুল মাবুদ চৌধুরী।

সেল ফোন ব্যবসায় বসুন্ধরা গ্রুপ এমন একটি সময়ে ঢোকার চেষ্টা করছে যখন বিশাল অংকের বিনিয়োগ দরকার হয় বলে দেশের অন্য বড় বাণিজ্যিক গ্রুপগুলো এ থেকে দূরে সরে আছে। দুটি সেলফোন কোম্পানি বাংলালিংক এবং রবি স্থানীয় বিনিয়োগেই গড়ে উঠেছিল। প্রতিষ্ঠান দুটি যথাক্রমে ২০০৪ এবং ২০০৭ সালে বিদেশি কোম্পানির কাছে বিক্রি হয়ে যায়।

রিয়েল এস্টেট থেকে নির্মাণ সামগ্রী, ভোগ্যপণ্য থেকে শুরু করে গণমাধ্যম পর্যন্ত সবক্ষেত্রে বসুন্ধরা গ্রুপের বিনিয়োগ আছে। টেলিটক তাদের দ্বিতীয় কৌশলগত বিনিয়োগের প্রস্তাব। গত বছরের সেপ্টেম্বরে বসুন্ধরা গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এবিজি লিমিটেড ২৪০ কোটি টাকায় চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ২৫ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয়।

টেলিটক বোর্ডের চেয়ারম্যান টেলিকম সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান বলেন, 'আমরা এই মুহূর্তে প্রস্তাবে সম্মতি কিংবা অসম্মতি কোনোটাই দিইনি। পুরো বিষয়টিই পর্যালোচনা করা হচ্ছে।'

সরকার ও টেলিটকের জন্য প্রস্তাবটি লাভজনক হবে কিনা তা কমিটি মূল্যায়ন করবে বলেও জানান তিনি।

যোগাযোগ করা হলে টেলিকম মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন: '[বসুন্ধরা গ্রুপ] টেলিটকে বিনিয়োগের আগ্রহ জানিয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছে, কিন্তু তাতে বিস্তারিত কিছু নেই। যে কারো আগ্রহ থাকতে পারে, কিন্তু তারা ঠিক কী চায় তা আমাদের জানতে হবে।'

২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে টেলিটক, যার মার্কেট শেয়ার আগস্ট পর্যন্ত ৩ দশমিক ৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বিদেশ থেকে বেশ কয়েকটি বিনিয়োগ প্রস্তাব পেলেও সরকার সেগুলোর একটিকেও সবুজ সংকেত দেয়নি।

যেমন, ২০০৮ সালের এপ্রিলে আরব আমিরাতের ফোন কোম্পানি এতিসালাত বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মোবাইল অপারেটরের একটি অংশ কেনার আগ্রহ প্রকাশ করে।

২০১৯ সালে, ভিয়েতনামের ভিয়েটেলও টেলিটকে ২৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে চেয়েছিল। এগুলোর একটিও শেষ পর্যন্ত হয়নি।

বছর খানেক পর, কোরিয়ান কোম্পানি এলজি ইউ প্লাস ২৫ বছরের জন্য কোনো গ্যারান্টি ছাড়াই ৩ শতাংশ সুদে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রস্তাব দেয়। সেটিও শেষ পর্যন্ত আর হয়নি।

টেলিকম বাজারের ৯৬ দশমিক ৫ শতাংশ দখল করে রাখা বেরসরকারি অপারেটরদের সাথে তাল মেলাতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকার টেলিটকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ঢেলেছে।

গ্রাম পর্যায়ে টেলিটকের ফোরজি নেটওয়ার্ক বিস্তারের জন্য ২৫০০ টাওয়ার বসাতে গেল বছর ২ হাজার ২০৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়।

হাওর এলাকায় টেলিটকের কভারেজ সম্প্রসারণের জন্য গত বছর মার্চ থেকে ৫১৯ টাকার একটি প্রকল্প শুরু হয়। এই প্রকল্পের অর্থের বড় একটি অংশই এসেছে গ্রামীণফোন, রবি এবং বাংলালিংকের সামাজিক বাধ্যবাধকতা তহবিল থেকে যেখানে এই তিনটি বেসরকারি অপারেটর তাদের মোট আয়ের ১ শতাংশ দিয়ে থাকে।

এছাড়াও, উপকূলীয় পাহাড় এবং অন্যান্য প্রত্যন্ত অঞ্চলে টেলিটকের মোবাইল ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক পরিষেবা সম্প্রসারণের জন্য সরকার সম্প্রতি ৫২০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।

এত কিছুর পরও যখন বেসরকারি অপারেটরদের গ্রাহক বাড়ছে তখন টেলিটক তাদের গ্রাহক হারাচ্ছে। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের আগস্ট পর্যন্ত সর্বশেষ প্রকাশিত হিসেবে টেলিটকের গ্রাহক সংখ্যা সাড়ে ৬৪ লাখ, যা এক বছর আগের তুলনায় ২ লাখ ৭০ হাজার কম। গত মাসের শেষে, দেশে প্রায় ১৮ কোটি ৯০ লাখ সক্রিয় মোবাইল সংযোগ ছিল।

টেলিকম বিশেষজ্ঞ আবু সাঈদ খান বলেন, যেকোন বিনিয়োগকারী যেকোনো কোম্পানিতে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করতে পারে, কিন্তু টেলিটক অন্য কোম্পানির মতো নয় -- এটি একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি যার অর্থায়ন অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে আসে।'

টেলিটকে বিনিয়োগের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অর্থ ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশের ইতিহাসে এ ধরনের বিনিয়োগ সিদ্ধান্তের জন্য দুটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির মতামতের পাশাপাশি বিডা'রও উচিত এ সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণ করা।'

মন্তব্যের জন্য ডেইলি স্টার বসুন্ধরা গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা কোনো সাড়া দেয়নি।

Comments

The Daily Star  | English

Horrors inside the Gaza genocide: Through a survivor’s eyes

This is an eye-witness account, the story of a Palestinian in Gaza, a human being, a 24-year-old medical student, his real human life of love and loss, and a human testimony of war crimes perpetrated by the Israeli government and the military in the deadliest campaign of bombings and mass killings in recent history.

5h ago