৪৮ ঘণ্টায় ৪৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টিতে হবিগঞ্জ শহরে বন্যা পরিস্থিতি
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টায় ৪৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টিতে হবিগঞ্জ শহরে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই মুহুর্তে শহরের প্রধান-অপ্রধান সড়কগুলোর কোথাও হাঁটু সমান, আবার কোথাও কোমরপানিতে তলিয়ে আছে। এছাড়া শহরের নিচু এলাকাগুলোর বেশিরভাগ জায়গার বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে গতকাল শুক্রবার দিনভর বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় নগরবাসীর দুর্ভোগের মাত্রা চরমে ওঠে।
স্থানীয়রা বলছেন, গত বৃহস্পতিবার থেকে হবিগঞ্জ শহর ও আশপাশের এলাকায় টানা বৃষ্টি শুরু হয়। শুক্রবার সকাল থেকে বৃষ্টির তীব্রতা বাড়তে থাকে। এদিন রাত ৮টা পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে নগরীর বেশিরভাগ সড়ক ও বাড়িঘর বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায়। আজ সকাল থেকে চলে থেমে থেমে বৃষ্টি।
হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ৪৮ ঘণ্টায় হবিগঞ্জে ৪৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ভারী বর্ষণের পাশাপাশি উজানের পানিতে জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় কালনী-কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। আর ২০ সেন্টিমিটার বাড়লেই নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করবে।'
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আজ শনিবার দুপুর পর্যন্তও নগরীর সার্কিট হাউস চত্বর, সদর থানা এলাকা, জেলা প্রশাসকের বাসভবন, বেবিস্ট্যান্ড, মোহনপুর সিএনজি স্ট্যান্ড, অনন্তপুর, শায়েস্তানগর পানি ভবন এলাকা, টাউন মডেল স্কুল, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, সিনেমা হল রোড, নিউ মুসলিম কোয়ার্টার, শ্যামলী, পুরান মুন্সেফী, আহছানিয়া মিশন, চিড়াকান্দি, শংকরমুখ ও চৌধুরী বাজার এলাকায় পানি জমে আছে।
শহরের বাসিন্দা আবু সালেক জানান, টানা বৃষ্টির কারণে গত তিন দিন তিনি দোকান খোলার সুযোগ পাননি। পানিতে তার দোকানের অনেক মালামাল নষ্ট হয়েছে। বাড়িতেও পানি উঠেছে।
টমটম চালক রাজু মিয়ার ভাষ্য, টানা বৃষ্টিতে শহরের প্রধান সড়কে এখনো হাঁটু সমান পানি জমে আছে। রাস্তায় লোক চলাচল কমে গেছে। কমেছে তার আয়ও।
গৃহবধূ আসমা আক্তার জানান, তিনি শহরের একটি বাড়ির নিচতলায় ভাড়া থাকেন। সেখানে পানি উঠে যাওয়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেলের বক্তব্য, হবিগঞ্জের মূল শহর এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নত হলেও শহরতলীর দিককার ড্রেনেজ ব্যবস্থা একেবারেই নাজুক। ফলে সেসব এলাকার পরিস্থিতি এখন আরও খারাপ।
এর পাশাপাশি দীর্ঘদিনেও টেকসই পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা তৈরি না হওয়া, পুকুর ভরাট, নদী-জলাশয় দখলসহ বিভিন্ন কারণে আজকের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য তার।
পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে না ওঠার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আতাউর রহমান সেলিম বলেন, 'এখন বেশ কয়েকটি ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। আর যে ড্রেনগুলো আছে, ময়লা-আবর্জনা ফেলে সেগুলোর বেশিভাগ অকার্যকর করে ফেলা হয়েছে।'
এছাড়া বৃষ্টিতে আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় ৯৭৫ হেক্টর রোপা আমনের খেত তলিয়ে গেছে জানিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফে আল মুঈজ বলেন, 'অতিবৃষ্টিতে শীতের আগাম শাক-সবজি ও মৌসুমী শাক-সবজির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।'
Comments