নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুর: পানি কমলেও ত্রাণ যাচ্ছে না প্রত্যন্ত এলাকায়

লক্ষ্মীপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত

নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার কোথাও কোথাও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও, অবনতি হয়েছে অনেক জায়গায়। বন্যাকবলিত বেশিরভাগ এলাকায় পানি কমতে শুরু করেছে। 

পানিতে ডুবে ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুই জেলার অন্তত ১০ জন মারা গেছেন। 

তবে দুর্গম এলাকায় অনেকেই ত্রাণ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। প্রশাসন থেকে বলা হচ্ছে, পরিবহনের অভাবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ত্রাণ পৌঁছাতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। 

পানি না কমায় অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে থেকে যাচ্ছেন। বন্যাদুর্গত এলাকায় বানভাসি মানুষের জন্য সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা এবং সংস্থা রান্না করা খাবার, শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, পানি বিশুদ্ধকরন ট্যাবলেট, ডায়রিয়া প্রতিরোধক ট্যাবলেট ও খাবার স্যালাইন বিতরণ করে যাচ্ছে।

নোয়াখালী সদরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার আঁখি নূর জাহান নিলা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'উপজেলায় বন্যার পানি ২-৩ ইঞ্চি বেড়েছে। ২২৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২৮ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছেন।'

কোম্পানীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার হোসাইন পাটোয়ারী বলেন, 'মুছাপুর ক্লোজারের রেগুলেটর ভেঙে যাওয়ায় জোয়ারের পানিতে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। পূর্ণিমার প্রভাব ও বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপ কেটে যাওয়ায় জোয়ারের গতি কম।' 

ত্রাণ নিয়ে ফিরছেন বন্যা দুর্গতরা। ছবি: সংগৃহীত

সুবর্ণচরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আল-আমিন সরকার বলেন, 'এখানে পানি বাড়ছে। চরজব্বর ইউনিয়নটি লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার সীমান্তবর্তী হওয়ায় ভুলুয়া নদী দিয়ে পানি প্রবেশ করছে। আটটি আশ্রয়কেন্দ্রে অল্প কয়েকজন আছে। সরকারিভাবে ৭৬ টন চাউল ও নগদ সাড়ে ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। দুর্গম এলাকায় ত্রাণ পৌঁছানোর চেষ্টা চলছে।' 

কবিরহাটের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সরোয়ার উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বৃষ্টি না হলে পানি কমে যাবে। সরকারি ও বেসরকারি ত্রাণ অপ্রতুল। কবিরহাট অবহেলিত উপজেলা, এখানে বেসরকারি কোনো সংস্থা ত্রাণ নিয়ে আসে না। তিন সপ্তাহ ধরে বন্যা চলছে। বন্যার্তদের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে দুই লক্ষাধিক পানিবন্দি লোকের জন্য ৯৬ মেট্রিকটন চাউল ও নগদ সাড়ে ৪ লাখ টাকা পাওয়া গেছে। নৌকার অভাবে দুর্গম এলাকায় ত্রাণ পৌঁছানো যাচ্ছে না।'

জানতে চাইলে নোয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী আমির ফয়সাল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সোমবার মুছাপুর রেগুলেটর ভেঙে যাওয়ার কারণে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নতুন করে প্লাবিত হওয়ার যে আশঙ্কা ছিল তা আপাতত নেই। পানি রেগুলেটরের ভেতর দিয়ে সন্দ্বীপ চ্যানেল হয়ে বঙ্গোপসাগরে যাচ্ছে।'

নোয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শারমিন আরা বলেন, 'জেলার ৮টি উপজেলা ও ৭টি পৌরসভার ৮৭টি ইউনিয়নে ২০ লাখ ৩৬ হাজার ৭০০ জন লোক পানিবন্দি হয়ে আছে। এক হাজার ১৬৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২ লাখ ১৬ হাজার ৮৩৪ জন নারী, পুরুষ ও শিশু আশ্রয় নিয়েছে। বন্যার্তদের চিকিৎসার জন্য ৮৮টি মেডিকেল টিম মাঠে কাজ করছে।'

লক্ষ্মীপুর

জেলার কোথাও বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হলেও, অনেক স্থানে এখনো পরিস্থিতি অবনতির দিকে। জেলার দুর্গম এলাকাগুলোতে পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে বলে জানা গেছে।

রামগতির উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ আমজাদ হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গতকাল থেকে ৫-৭ ইঞ্চি পানি বেড়েছে। বানভাসি ২৫ হাজার লোক ৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। উপজেলার চরপোড়া, চরবাদ্দাম ও চরআলগী ইউনিয়নে কোমর সমান পানি। এই তিন ইউনিয়ন ও ভুলুয়া নদীর তীরবর্তী বাসিন্দাদের দুর্ভোগ বেশি। নৌকার অভাবে দুর্গম এলাকায় ত্রাণ পৌঁছানো যাচ্ছে না।'

লক্ষ্মীপুর সদরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুর রহমান বলেন, 'জেলার ২১টি ইউনিয়ন বন্যা আক্রান্ত। ১৮০টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১৭ হাজার লোক আশ্রয় নিয়েছে। সরকারিভাবে ১২৬ টন চাউল ও নগদ ৪ লাখ টাকা চাল পাওয়া গেছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।'

রায়পুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার ইমরান খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'উপজেলার সোনাপুর, চরপাতা, কেরোয়া ও বামনি ইউনিয়ন বেশী ক্ষতিগ্রস্ত। সরকারি বরাদ্দ অপ্রতুল। বেসরকারি ত্রাণ পাওয়া যাচ্ছে না। সড়ক থেকে দূরে নৌকার অভাবে অনেক পরিবারের মাঝে এখনো ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।'

কমলনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুচিত্র রঞ্জন দাস জানান, এ উপজেলায় পানি কমেছে। ১৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ৫ হাজার লোক। উপজেলার চর কাদিরা, তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নের অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ। দুর্গতদের জন্য ১০৪ মেট্রিকটন চাউল ও ২ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে, যা অপ্রতুল। 

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক)  জে পি দেওয়ান বলেন, 'লক্ষ্মীপুরে ৭ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন। এদের মধ্যে ১৮৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৩০ হাজার লোক আশ্রয় নিয়েছেন। এ পর্যন্ত ৭৯৯ মেট্রিকটন চাল ও নগদ ২০ লাখ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।' 

Comments

The Daily Star  | English
tax collection target for IMF loan

Talks with IMF: Consensus likely on exchange rate, revenue issues

The fourth tranche of the instalment was deferred due to disagreements and now talks are going on to release two tranches at once.

11h ago