ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা: কষ্টে দিন পার করছেন পটুয়াখালীর ২০ হাজার জেলে

জেলেরা তাদের নৌকা ও জাল তদারকি করছেন। ছবি: সোহরাব হোসেন/ স্টার

নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিত করতে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞার শুরুর ১৩ দিন পেরুতে চললেও সরকারি খাদ্যসহায়তার চাল বুঝে পাননি পটুয়াখালী জেলার নিবন্ধিত প্রায় ২০ হাজার জেলে।

গত ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই নিষেধাজ্ঞা চলবে আগামী ২ নভেম্বর পর্যন্ত। এই ২২ দিন দেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয়, মজুত ও বিনিময় নিষিদ্ধ।

নিষেধাজ্ঞা চলাকালে ইলিশ আহরণে বিরত থাকা জেলেদের সরকারের পক্ষ থেকে খাদ্যসহায়তা হিসেবে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। কিন্তু পটুয়াখালীর ৮৫ হাজার নিবন্ধিত জেলের মধ্যে ৬৫ হাজার ৭৭১ জন জেলে এই চাল পেলেও বাকিরা তা পাননি।

সহায়তা না পাওয়া জেলেদের ভাষ্য, এমনিতেই ২২ দিনের জন্য ২৫ কেজি চাল প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। সেটাও না পেয়ে তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ বিপাকে পড়েছেন।

পটুয়াখালী সদর উপজেলার ইটবাড়িয়া এলাকার জেলে আব্দুর রশীদ জানান, বাড়ির পাশের পায়রা নদীতে মাছ ধরেই চলে তার পাঁচ সদস্যের সংসার। এখন নদীতে তেমন মাছও আসে না। তার ওপর এই নিষেধাজ্ঞার সময়টাতে সরকারি সাহায্যটুকু না পেয়ে তার বিপদ আরও বেড়েছে।

আব্দুর রশীদ বলেন, 'নিষেধাজ্ঞা শুরুর এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। তারপরও চালটুকু বুঝে পেলাম না।'

একই উপজেলার বড়বিঘাই এলাকার জেলে আবু হানিফও জানালেন একই কথা। তার ভাষ্য, 'মাছ ধরা ছাড়া অন্য কোনো কাজ জানা নেই। কাজ ছাড়া, আয় ছাড়া পরিবার নিয়ে চলতে সমস্যা হচ্ছে।'

রাঙ্গাবালীর উপজেলার ছোট বাইশদিয়া এলাকার জেলে হারুন চৌকিদার (৬০) জানালেন, তার সঙ্গে তার দুই ছেলেও মাছ ধরার কাজ করেন। তার নিজের জেলে কার্ডও আছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তিনি কোনো চাল পাননি।

এলাকার আরেক জেলে মামুন হাওলাদারের (৪০) ভাষ্য, ২৫ কেজির জায়গায় তিনি পেয়েছেন ২০ কেজি চাল। বলেন, '২০ কেজি চালে ২২ দিন কীভাবে চলে? আর ভাত খাওয়ার জন্য তো তেল-লবন, শাক-সবজিও কিনতে হয়। তাই চালের পাশাপাশি কিছু নগদ টাকা দিলেও ভালো হয়।'

অনেক জেলের হাতে সরকারি চাল না পৌঁছানোর কারণ জানতে চাইলে পটুয়াখালী সদর উপজেলার জ্যেষ্ঠ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যোগাযোগব্যবস্থা খারাপ থাকায় পটুয়াখালী সদর উপজেলার চারটি ইউনিয়নের জেলেদের মধ্যে চাল বিতরণ করা যায়নি। তবে দুয়েক দিনের মধ্যেই তারা চাল পেয়ে যাবেন।'

আর বাউফল উপজেলা মৎস্য অফিসের ক্ষেত্র সহকারী মো. আনিসুর রহমানের ভাষ্য, বরাদ্দ কম থাকায় তালিকাভুক্ত জেলেদের সবাইকে খাদ্যসহায়তায় আওতায় আনা যায়নি। এ কারণে উপজেলার তালিকাভুক্ত সাত হাজার জেলের মধ্যে ছয় হাজার জনকে চাল দেওয়া হয়েছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলামের কাছ থেকে জানা যায়, পটুয়াখালীতে প্রায় ৮৫ হাজার নিবন্ধিত জেলে আছেন। তাদের মধ্যে ৬৫ হাজার ৭৭১ জনকে ২৫ কেজি করে চাল দেয়া হচ্ছে। দুই বছর আগে চাল দেওয়া হতো ২০ কেজি করে।

কামরুল ইসলাম বলেন, 'খাদ্যসহায়তার আওতায় আনতে আরও ১০ হাজার নিবন্ধিত জেলের তালিকা অনুমোদনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। ওই তালিকা অনুমোদন পেলে তারাও এর আওতায় আসবেন।'

মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগের উপ-পরিচালক নৃপেন্দ্র নাথ বিশ্বাস জানান, নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন খাদ্যসহায়তার পরিমাণ ও সুবিধাভোগীদের সংখ্যা বাড়াতে আরও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

Comments

The Daily Star  | English

Exporters fear losses as India slaps new restrictions

Bangladesh’s exporters fear losses as India has barred the import of several products—including some jute items—through land ports, threatening crucial trade flows and millions of dollars in earnings.

6h ago