গ্রামীণ নারীর ক্ষমতায়নে ‘পল্লী ফোন’

ড. মুহাম্মদ ইউনূস
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: স্টার

১৯৯৭ সালে মাত্র ২৪ জন গ্রাহক নিয়ে পল্লী ফোন চালু হয়। বাংলাদেশে শহর ও গ্রামের মধ্যে প্রযুক্তিগত ব্যবধান দূর করতে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখে এই কর্মসূচি। গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণগ্রহীতাদের মাধ্যমে পরিচালিত পল্লী ফোনের গ্রাহকের সংখ্যা ২০১৬ সালের জুনে ১৭ লাখ ছাড়িয়ে যায়।

গ্রামীণ ব্যাংকের দরিদ্র মহিলা সদস্যদের উদ্যোক্তা-দক্ষতা ব্যবহার করে দারিদ্র্য বিমোচনের একটি অনন্য হাতিয়ার হিসেবে এই পল্লী ফোন চালু করা হয়েছিল।

১৯৯৭ সালে মোবাইল ফোন শুধু বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে নয়, বিশ্বের যেকোনো দেশে বিলাস পণ্য হিসেবে বিবেচিত হতো। তখন বাংলাদেশের গ্রামের মানুষের জন্য মোবাইল ফোন ছিল অনেকটা রূপকথার মতো। গ্রামে তখন কোনো ধরনের টেলিফোন সেবা পাওয়া যেত না। শহরেও এটা বেশিরভাগ মানুষের সামর্থ্যের বাইরে ছিল। ঠিক তখনই গ্রামীণ দরিদ্রদের জন্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণফোনের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামে অন্তত একটি মোবাইল ফোন পৌঁছে দিয়ে পুরো দেশকে টেলিফোন সেবার আওতায় নিয়ে আসার কর্মসূচি হাতে নেন। তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের দরিদ্র ঋণগ্রহীতা নারীদের মাধ্যমে - যারা পরবর্তীতে 'টেলিফোন লেডি' নামে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেন - সর্বসাধারণের কাছে ফি'র বিনিময়ে মোবাইল ফোন সুবিধা পৌঁছানোর উদ্যোগ নেন।

গ্রামীণ টেলিকম গ্রামীণ প্রযুক্তি উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি অগ্রগামী শক্তি হিসেবে গ্রামের দরিদ্র মহিলাদেরকে টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি বৈপ্লবিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রমাণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি সামাজিক ব্যবসা হিসেবে ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ টেলিকম ডিজিটাল বিভাজন দূর করতে এবং বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকার জনগোষ্ঠীকে দেশের আর্থ—সামাজিক উন্নয়নে অগ্রগণ্য ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

স্কটল্যান্ডের জাতীয় জাদুঘরে পল্লী ফোন কর্মসূচির বিশেষ গ্যালারি। ছবি: সংগৃহীত

গ্রামীণ টেলিকমের ইতিহাস

সকলের কাছে টেলিযোগাযোগ সহজলভ্য করার দূরদর্শী প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ টেলিকম গ্রামীণ জনগণ বিশেষত গ্রামীণ নারীদের ক্ষমতায়নকে লক্ষ্য হিসেবে নিয়ে যাত্রা শুরু করে। গ্রামীণ টেলিকমের 'পল্লী ফোন কর্মসূচি' দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে মোবাইল ফোন প্রযুক্তি ব্যবহারের একটি প্রতীক হয়ে ওঠে। গ্রামীণ ফোনের সহযোগিতায় পরিচালিত এই কর্মসূচিটি গ্রামীণ নারী উদ্যোক্তাদের ক্ষমতায়নের পাশাপাশি তাদের নিজ নিজ গ্রামে গুরুত্বপূর্ণ টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানের সুযোগ করে দেয়।

পল্লী ফোন কর্মসূচি বিশ্বজুড়ে অনেক দেশ থেকে পুরস্কার ও প্রশংসা পেয়েছে। স্কটল্যান্ডের জাতীয় জাদুঘরে গ্রামীণ টেলিকমের পল্লী ফোন কর্মসূচির একটি বিশেষ গ্যালারি আছে। পুরস্কারের মধ্যে আছে ক্যাপাম ব্রোঞ্জ অ্যাওয়ার্ড ফর সার্ভিস টু দ্য পাবলিক (১৯৯৮), জিএসএম কমিউনিটি সার্ভিস (১৯৯৮), পিটার্সবার্গ প্রাইজ ফর ইউজ অব দ্য আইটি টু ইমপ্রুভ পুওর পিপলস লাইভস (২০০৪), ফার্স্ট আইটিইউ ওয়ার্ল্ড ইনফরমেশন সোসাইটি অ্যাওয়ার্ড (২০০৫)।

Comments

The Daily Star  | English
rooppur-nuclear-power-plant

Gridline woes delay Rooppur Power Plant launch

The issue was highlighted during an International Atomic Energy Agency (IAEA) inspection in March

1h ago