কবি সরোজ দেবের পাশে দাঁড়ালেন জেলা প্রশাসক

কবি সরোজ দেবের (৭৩) পাশে দাঁড়িয়েছেন গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসূল। কবির চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে জেলা প্রশাসন।
কবি সরোজ দেব, জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসূল। ছবি: সংগৃহীত

কবি সরোজ দেবের (৭৩) পাশে দাঁড়িয়েছেন গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসূল। কবির চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে জেলা প্রশাসন।

কবির অসুস্থতা নিয়ে গত ১৩ জানুয়ারি ডেইলি স্টার বাংলায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে ক্লিনিকে গিয়ে কবির খোঁজ-খবর নেন জেলা প্রশাসক। তিনি কবিকে নগদ ৫০ হাজার টাকা এবং সমাজ সেবা অধিদপ্তর থেকে আরও ৫০ হাজার টাকার একটি চেক কবিকে দিয়েছেন। এর পাশাপাশি কবির চিকিৎসার জন্য প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য গাইবান্ধা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) নির্দেশ দিয়েছেন বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন ইউএনও মাহমুদ আল হাসান।

৬০ দশকের লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনে উত্তরবঙ্গে অন্যতম ভূমিকা রেখেছেন গাইবান্ধায় জন্ম নেওয়া কবি সরোজ দেব। বর্তমানে তিনি গাইবান্ধায় একটি ক্লিনিকে ভর্তি রয়েছেন।

ঐশী ক্লিনিকের মালিক সাখওয়াত হোসেন বিপ্লব দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, কবির মূত্রথলিতে টিউমার হয়েছিল। পরে বায়োপসি পরীক্ষায় ক্যানসার ধরা পড়ে। বর্তমানে রংপুরের একজন ডাক্তারের অধীনে তার চিকিৎসা চলছে।

কেমন আছেন জানতে চাইলে কবি এই প্রতিবেদককে বলেন, 'আমি ভালো নেই রে দাদু। শরীরটা বড্ড ভেঙে পড়েছে। দীর্ঘদিনের অনিয়ম, অভাব, অনটন, অনাহার শরীরের উপর জেঁকে বসেছে।'

আজ প্রথম আলোতে কবিকে নিয়ে সম্পাদকীয় লেখা হওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, 'প্রথম আলোতে নাকি আমাকে নিয়ে সম্পাদকীয় লেখা হয়েছে। যাক শেষমুহূর্তে এসে কোনো ভালো পত্রিকা আমার বিষয়ে কিছু লিখেছে।'

সরোজ দেব ১৯৪৮ সালের ২৬ মার্চ গাইবান্ধা শহরের পূর্বপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা প্রখ্যাত ধ্রুপদী সঙ্গীত শিল্পী ওস্তাদ উপেন্দ্র নাথ দেব ও মাতা সান্তু দেব।

গত ২৫ ডিসেম্বর গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় কবিকে বেসরকারি একটি ক্লিনিকে নিয়ে যান সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বিপ্লব। পরে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করেন গাইবান্ধা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক প্রমতোষ সাহা ও সাখাওয়াত হোসেন বিপ্লব। পরে ২৮ ডিসেম্বর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কবির মূত্রথলি থেকে টিউমার অপসারণ করা হয়। গাইবান্ধার একটি ক্লিনিকে এখন তার কেমোথেরাপি চলছে।

স্কুল জীবনেই সরোজ দেবের কাব্যিক প্রতিভার উন্মেষ ঘটে। পরে কবিতা লেখার পাশাপাশি তিনি গাইবান্ধাসহ উত্তরাঞ্চলে লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সূত্রপাত করেন। শুরু করেন 'শব্দ' সম্পাদনা। কলেজ জীবন থেকেই 'শব্দ' সম্পাদক হিসেবে নাম অর্জন করেন তিনি। একটানা ৫৬ বছর 'শব্দ' প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও স্বজন শব্দাবলী, প্রাণেশ্বরীর মাচান, বজ্রে বাজে বেণু, লাল গোলাপের জন্য, শতদল, মোহনা, সংশপ্তক, শতাব্দী, নান্দনিক ইত্যাদি বিভিন্ন নামে দেড় শতাধিক সাহিত্য পত্রিকা বা লিটলম্যাগ বিভিন্ন সময়ে সম্পাদনা করেছেন। ষাট দশক থেকে তার পদচারণায় মুখরিত ছিল গাইবান্ধার সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গন। গাইবান্ধার সাংস্কৃতিক সংগঠন 'সূর্যকণা' তার হাতেই গড়া।

সরোজ দেব ১৯৬৯ সালে গাইবান্ধা কলেজ ছাত্র সংসদের ম্যাগাজিন সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার সরোজ দেব ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। বিজয়ী হয়ে ফিরে এসে তিনি ১৯৭৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেও গড়েছেন একাধিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

সরোজ দেব স্কুল জীবন থেকে কবিতা লেখা শুরু করলেও তার কবিতার বই বেরিয়েছে অনেক পরে। তার রচিত কাব্যগ্রন্থগুলো হচ্ছে, ধবল মেঘের দিনগুলো (২০০৬), অনন্ত রোদ্দুরে এসো (২০০৯), স্বরচিত সুখের সৎকার (২০১০), স্বপ্ন শুয়েছিল কুয়াশায় (২০১১) ও সময় আমাকে হত্যার কথা বলে গ্যাছে (২০১৩)। তার লেখার তুলনায় বইয়ের সংখ্যা অনেক কম।

এছাড়া তিনি অনেকগুলো গ্রন্থও সম্পাদনা করেছেন। সেগুলো হলো, রবীন্দ্রনাথের ভালোবাসার গল্প (২০০৬), শরৎচন্দ্রের ভালোবাসার গল্প (২০০৬), কবিতার যৌথ খামার (২০০৯), নির্বাচিত কবিতা (২০১২) ও ছোটদের শরৎচন্দ্র (২০১২)।

Comments

The Daily Star  | English

Love road at Mirpur: A youthful street

Certain neighbourhoods in Dhaka have that one spot where people gather to just sit back and relax. For Mirpur, it’s the frequently discussed street referred to as “Love Road”.

1h ago