চরে চাহিদার তুলনায় কম্বল বরাদ্দ কম
টানা দুই সপ্তাহের তীব্র শীতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন চরাঞ্চলের মানুষজন। কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার ও গঙ্গাধরসহ ২৬টি নদ-নদী অববাহিকায় পাঁচ শতাধিক চর এলাকায় পাঁচ লাখের বেশি মানুষ গরম কাপড়ের অভাবে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।
কুড়িগ্রামে চরের সংখ্যা প্রায় ৪০০টি আর লালমনিরহাটে আছে প্রায় ১০০টি। এসব অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ নিম্ন আয়ের। ঠান্ডায় কাবু হলেও অধিকাংশেরই শীতবস্ত্র কেনার সামর্থ্য নেই। উত্তরের জেলাগুলোয় সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হলেও দুর্গম চরগুলোতে শীতবস্ত্র পৌঁছায় না। অথচ বিস্তীর্ণ বালুকাময় এসব এলাকায় শীতের প্রকোপ বেশি।
কুড়িগ্রামের উলিপুরে ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে সাহেবের আলগা ইউনিয়নের দুর্গম চর ঘুঘুমারী। মুল ভূখণ্ড থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে এই চরের বাসিন্দা ৯৮ বছর বয়সী মোকছেদ আলী গত সোমবার দুপুরে উঠানে বসে ঠান্ডায় কাঁপছিলেন। তার গায়ে ছিল ১০ বছরের পুরনো চাদর। মাফলার না থাকায় গামছা জড়িয়ে রেখেছিলেন মাথায়।
মোকছেদ আলী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, গরম কাপড় না থাকায় মাঘের শীত তার কাছে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। যে কয়টি পুরোনো শীতবস্ত্র আছে তাই দিয়ে ঠান্ডা কাটানোর চেষ্টা করছেন। তার কম্বল দরকার। কিন্তু ছেলেদের সামর্থ্য না থাকায় কিনে দিতে পারছে না। বাড়ি দুর্গম এলাকায় হওয়ায় কেউ তাদেরকে শীতবস্ত্র দিতে আসেনি।
মোকছেদ আলীর স্ত্রী অশীতিপর মছিরন বেগম ডেইলি স্টারকে জানান, সকাল ও রাতে খড়কুটোর আগুনে শীত কাটানোর চেষ্টা করেন। আগুন পোহাতে না পারলে তার স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়েন। একটা কম্বল থাকলে তিনি এই দুর্দশা থেকে রেহাই পেতেন।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নুরনবী ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার এলাকায় পাঁচ শতাধিক শীতার্ত মানুষ আছেন। তাদের শীতবস্ত্র কেনার সামর্থ্য নেই। অথচ কম্বল বরাদ্দ পেয়েছি মাত্র ২০টি।'
তিনি আরও বলেন, 'প্রতিদিন আমার বাড়িতে মানুষ ভিড় করছেন। আমি তাদেরকে কম্বল দিতে পারছি না। দুর্গম এলাকা হওয়ায় বেসরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগেও কেউ এখানে কম্বল দিতে আসতে চান না।'
উলিপুরের সাহেবের আলগা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাফফার হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার ইউনিয়নে ছয় হাজারের বেশি কম্বলের চাহিদা আছে। সরকারিভাবে কম্বল পেয়েছি ৪০০টি। এই ইউনিয়নের সবগুলো চর এলাকা দুর্গম। দাতারা শীতবস্ত্র নিয়ে দুর্গম চরে আসতে চান না।'
লালমনিরহাট সদর উপজেলার রাজপুর ইউনিয়নে তিস্তার বুকে দুর্গম চর চিনাতুলি। এই চরের কৃষক মজিবর রহমান (৬৭) ঠান্ডা উপেক্ষা করে ফসলের খেতে কাজ করতে যান। কিন্তু শীতের বাতাসে খেতে বেশিক্ষণ টিকতে পারেন না। তিনি বলেন, 'হামার কম্বল নাই। বাজার থাকি কম্বল কিনবার সাধ্যিও নাই। পুরান কাপড়চোপড় দিয়া ঠান্ডা কাটবার নাইকছি। কাইও হামাক কম্বলও দিবার আইসে না।'
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস জানায়, কুড়িগ্রামের নয় উপজেলায় ৬৬ হাজার কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেগুলো বিতরণের কাজ চলছে। গত সোমবার আরও ২০ হাজার কম্বলের চাহিদা জানিয়ে মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
লালমনিরহাটের পাঁচটি উপজেলায় ২৯ হাজার কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে। গত সোমবার আরও ২০ হাজার কম্বলের চাহিদার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চরের মানুষের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দেয় না মন্ত্রণালয়। কুড়িগ্রামে চরের সংখ্যা বেশি হওয়ায় কম্বলের চাহিদা অনেক। দুর্গম চরে যাওয়া কষ্টসাধ্য হওয়ায় দাতারাও সেখানে যেতে চান না। এসব এলাকার জন্য বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হলে শীতার্তরা উপকৃত হবেন।'
Comments