অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা: বরাদ্দ কম স্বাস্থ্য-শিক্ষায়

বুধবার পরিকল্পনা কমিশনের বৈঠকে উত্থাপিত নথিতে দেখা যায়, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি ও সামাজিক সুরক্ষাসহ বেশ কয়েকটি খাতে গত চার অর্থবছরে প্রাক্কলিত বরাদ্দের চেয়ে কম বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে প্রাক্কলিত বরাদ্দের চেয়ে কম বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এতে গুরুত্বপূর্ণ এই দুই খাত নিয়ে সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

বুধবার পরিকল্পনা কমিশনের বৈঠকে উত্থাপিত নথিতে দেখা যায়, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি ও সামাজিক সুরক্ষাসহ বেশ কয়েকটি খাতে গত চার অর্থবছরে প্রাক্কলিত বরাদ্দের চেয়ে কম বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

যেমন: চলতি অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে এডিপি বরাদ্দ ১১ দশমিক এক শতাংশের বিপরীতে দেওয়া হয়েছে ছয় দশমিক ১৬ শতাংশ। শিক্ষা খাতেও প্রাক্কলিত ১৬ দশমিক পাঁচ শতাংশের বিপরীতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

বৈঠকে উত্থাপিত অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মধ্যবর্তী পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় কম বাজেট বরাদ্দের প্রভাব স্বাস্থ্যসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়নের মানের ওপর পড়বে এবং এর কারণে পরিবারের বাড়তি খরচও (আউট অব পকেট এক্সপেন্ডিচার) বাড়তে পারে।

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট অব এডুকেশনাল ডেভেলপমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা মনজুর আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, সুশিক্ষিত ও স্বাস্থ্যবান জনগোষ্ঠীর জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি উপাদান।

'পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় প্রাক্কলিত ও প্রকৃত বরাদ্দের মধ্যে ব্যবধান দেখায় যে, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মধ্যে একটি অসঙ্গতি রয়েছে, যা এই ধরনের ব্যবধান সামগ্রিক পরিকল্পনাকে বিপর্যস্ত করে', বলেন তিনি।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আহমেদ বলেন, 'দেশের জন্য অগ্রাধিকার কী, তা বুঝতে কর্তৃপক্ষ ব্যর্থ হচ্ছে।'

মধ্যবর্তী পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য খাতের স্বল্প বাজেট বাংলাদেশের জন্য 'ব্যাপক উদ্বেগ'র।

স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির প্রায় তিন শতাংশ বাজেট বরাদ্দ দিতে ব্যর্থ হয়েছে কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে এই খাতে বরাদ্দ জিডিপির এক শতাংশেরও কম।

২০২১ সালে তা সামান্য বেড়ে জিডিপির দশমিক ৮৯ শতাংশে উঠলেও পরের বছর আবার দশমিক আট শতাংশে নেমে আসে।

পর্যালোচনায় বলা হয়, এই খাতে স্বল্প বরাদ্দ বাংলাদেশে একজন ব্যক্তির স্বাস্থ্য বাজেটের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। এর ফলে স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় বেড়ে যায়।

বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবায় পরিবারের বাড়তি খরচ ৭২ শতাংশ, যা ভারত, ভুটান, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার চেয়েও বেশি।

পর্যালোচনায় বলা হয়, এটি স্বাস্থ্যসেবায় উচ্চ বৈষম্য এবং দারিদ্র্যের একটি সূচক।

ইউনেস্কোর গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং রিপোর্ট ২০২২ অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট শিক্ষা ব্যয়ের ৭১ শতাংশ বহন করে পরিবার।

শিক্ষায় অর্থায়নের বিষয়টি শিক্ষা খাতের সমস্যার মূল বিষয় হিসেবে রয়ে গেছে।

যদিও সরকার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়িয়েছে, তবুও এই খাতে আরও বেশি বিনিয়োগ প্রয়োজন।

পর্যালোচনায় বলা হয়, ২০২৩ সালে শিক্ষায় সরকারি ব্যয় ছিল জিডিপির মাত্র এক দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশগুলো তাদের জিডিপির পাঁচ থেকে ছয় শতাংশ শিক্ষায় ব্যয় করে।

যদি সরকারি অর্থায়ন পরিচালনা করা না যায়, তাহলে সরকারকে অবশ্যই শিক্ষা খাতের জন্য অতিরিক্ত সম্পদ সংগ্রহের জন্য সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের মতো উদ্ভাবনী অর্থায়ন প্রক্রিয়া খুঁজতে হবে।

অধ্যাপক আহমেদ বলেন, 'পরিস্থিতি দেখে এমনটিই পরিলক্ষিত হচ্ছে যে—যাদের সামর্থ্য আছে, তারা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা পাবে।'

পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, মন্ত্রণালয়গুলো তাদের বাজেট ব্যয় করতে না পারায় কারণে এই দুই খাতে বরাদ্দ কম হচ্ছে। ব্যয় বৃদ্ধি ও প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্বও এর জন্য দায়ী।

অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার খসড়া প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকা শামসুল আলমও স্বীকার করেন, স্বাস্থ্যের মতো অনেক মন্ত্রণালয়ই বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় করতে পারে না এবং এই বিষয়টি একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য।

প্রাক্কলনের চেয়ে এডিপি বরাদ্দ কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে সদ্যবিদায়ী পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, সরকার অগ্রাধিকার বিবেচনায় রেখে বরাদ্দ দেয়।

'মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের পর আমাদের অগ্রাধিকারে পরিবর্তন আনা দরকার ছিল।'

শামসুল আলম বলেন, 'মহামারির কারণে প্রণোদনা প্যাকেজ, ব্যবসায় সহায়তার পাশাপাশি সামাজিক সুরক্ষা খাতের আওতা বাড়ানোর মতো অনেক উদ্যোগ নিতে হয়েছিল, যেগুলো ছিল অপ্রত্যাসিত। ফলে শিক্ষাসহ অন্যান্য খাতে বরাদ্দে পরিবর্তন আনতে হয়েছে।'

'শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে সরকার নিয়মিত এডিপি বরাদ্দের বাইরেও অর্থ ব্যয় করে', বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

7h ago