নটাখোলা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র: ৬ মাস আগে উদ্বোধন, শেষ হয়নি নির্মাণকাজ

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার নটাখোলা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র। ছবি: স্টার

ছয় মাস আগে উদ্বোধন হলেও এখনও নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়নি মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার নটাখোলা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের। আর্থিক বরাদ্দের অভাবে নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছে মানিকগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগ।

গত বছরের ২১ জুলাই পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রটির উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

এই তদন্ত কেন্দ্রে একজন ইনচার্জের নেতৃত্বে পুলিশের ২১ সদস্যের জনবল থাকার কথা থাকলেও উদ্বোধনের সাড়ে ছয় মাসেও তদন্ত কেন্দ্রের দরজাবিহীন ভবনটি পড়ে আছে পরিত্যক্ত অবস্থায়।

মানিকগঞ্জের নটাখোলা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র থেকে সম্প্রতি তোলা ছবি: স্টার

সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায় তদন্ত কেন্দ্রের ভবনটির দরজা না থাকায় কয়েকজন তরুণ চার তলা ভবনের বিভিন্ন তলায় ও ছাদে ঘোরাঘুরি করছেন। স্যানিটারি ফিটিংস এর কাজ কিছুটা হলেও বৈদ্যতিক সংযোগের কাজ পুরোটাই বাকি। প্রতিটি তলার মেঝেতেই ছাগল ও ভেড়ার মল শুকিয়ে আছে। বিভিন্ন স্থানে দেওয়ালের রং বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। ইটের খোয়া, শুড়কিসহ কিছু নির্মাণ সামগ্রীও রয়েছে বিভিন্ন ঘরের মেঝেতে। প্রধান গেটের ফটকের একটি অংশ ভেঙে পড়ে রয়েছে।

স্থানীয়রা বলেন, সরকার তো ভালোর জন্যই এটা বানাইছে। মনে করছি, পুলিশ আসবে। আমাদের গরু-ছাগল আর চুরি হইব না। কিন্তু পুলিশ তো আসে না। বিল্ডিং এর কাজই তো শেষ হয় না। পোলাপান আইসা নেশাপানি করে। বড় কোনো অঘটন ঘটলে তো আমরা বিপদে পইড়া যামু।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবক বলেন, 'প্রতিদিন এখানে বিভিন্ন জায়গা থেকে ছেলে-পেলেরা আসে। মাদক নেয়। যেকোনো সময় বড় ধরনের ঘটনাও ঘটতে পারে। এখানে পুলিশের আসা দরকার।'

এক গৃহবধূ বলেন, তদন্ত কেন্দ্রের কাজই তো এখনো শেষ হয় নাই। পুলিশও আসে নাই।'

মানিকগঞ্জের নটাখোলা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বর্তমান অবস্থা। ছবিটি সম্প্রতি তোলা হয়েছে। ছবি: স্টার

হরিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান সাইদুর রহমান বলেন, 'পদ্মা নদীর কারণে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার মূল ভুখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন লেছড়াগঞ্জ, সুতালড়ি ও আজিমনগর ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ। এছাড়া ফরিদপুর জেলার সদর উপজেলার দুটি ইউনিয়ন-নর্থ চ্যানেল ও ডিগ্রির চর এবং চরভদ্রাসন উপজেলার দুটি ইউনিয়নসহ মোট সাতটি ইউনিয়ন এই চরে অবস্থিত। পদ্মা নদী বেষ্ঠিত এই দুর্গম চরে গবাদি পশু চুরি, জমি নিয়ে বিরোধ লেগেই থাকে। দীর্ঘদিন ধরে চরবাসীর দাবির পর লেছড়াগঞ্জের নটাখোলায় একটি পুলিশি তদন্ত কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। গত বছরের ২১ জুলাই এটার উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। আমিও তখন উপস্থিত ছিলাম। এটার নির্মাণকাজ যে এখনো শেষ হয়নি, তা আমি জানি না। আমি ভাবছি, এটা চালু হয়ে গেছে। পুলিশের ব্যাপার তো। এজন্য আমি আর খোঁজ খবর নেই নাই।'

হরিরামপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবুল বাশার সবুজ বলেন, পদ্মার দুর্গম চরে একটি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু এখনো নির্মাণকাজ সম্পন্ন না হওয়ায় চরাঞ্চরের লোকজন এর সুফল পাচ্ছে না। দ্রুত নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে সেখানে পুলিশ সদস্য নিয়োগের দাবি জানান তিনি।

মানিকগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শারমিন আক্তার বলেন, 'আর্থিক সংকটের কারণে ভবনটির নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। তবে, বরাদ্দ পাওয়া গেলে অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করতে এক মাসের বেশি সময় লাগবে না।'

তিনি বলেন, 'ছয় তলা ভিতের ওপর চার তলা পর্যন্ত নটাখোলা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের (সিভিল, স্যানিটারি ও বৈদ্যুতিক কাজ) নির্মাণ ব্যয় তিন কোটি ৭৯ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত মোট দেওয়া হয়েছে দুই কোটি ৫৫ লাখ টাকা। নির্মাণকাজ শেষ করতে আরও প্রয়োজন এক কোটি ২৪ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। যা বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগ এখন দিতে পারছে না।'

গত বছরের ২১ জুলাই পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রটির উদ্বোধন করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান বলেন, 'নটাখেলা তদন্ত কেন্দ্রে একজন ইনচার্জের নেতৃত্বে ২১ সদস্যের জনবল রয়েছে। তবে, আর্থিক সংকটের কারণে ভবনটির নির্মাণকাজের কিছুটা বাকি আছে। দ্রুত হয়ে যাবে এবং চরাঞ্চলের মানুষ পুলিশি সেবা পাবে।'

Comments

The Daily Star  | English

What if India and China stop buying Russian oil?

Donald Trump is tightening sanctions loopholes that fund Moscow's war machine. What does a crackdown on Russia's oil trade mean for global markets — and economic heavyweights like China and India?

4h ago