সরকারি চাকরির ১৯ লাখ পদের এক চতুর্থাংশ শূন্য

প্রতীকী ছবি

সরকারি চাকরির ১৯ লাখ পদের মধ্যে এক-চতুর্থাংশেরও বেশি পদ এখন শূন্য। মূলত নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে কর্তৃপক্ষের অনীহাই এর কারণ।

২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারি অফিসগুলোতে রেকর্ড ৫ লাখ ৩ হাজার ৩৩৩টি শূন্যপদ সরকারি সুযোগ-সুবিধায় পরিষেবা পেতে মানুষের হয়রানির অন্যতম কারণ। আর এতে কাজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বেকাররাও।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ বেসামরিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২২ সালে মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য সরকারি অফিসে শূন্যপদের সংখ্যা দ্রুত বেড়েছে, যদিও আগের চার বছরে শূন্যপদ কমেছিল।

২০২১ সালে শূন্যপদ ছিল ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১২৫টি।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনী ইশতেহারে কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। গত ৫ ফেব্রুয়ারি সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শূন্য পদে নিয়োগের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।

২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সরকারি অফিসে শূন্যপদ কখনোই ৪ লাখ ছাড়িয়ে যায়নি।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে ৯ হাজার ১৩২টি পদ শূন্য রয়েছে, যা সংস্থার ২০ হাজার ১৯১টি পদের প্রায় অর্ধেক।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে সর্বোচ্চ ৭৪ হাজার ৫৭৪টি এবং প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ৪৪ হাজার ৭৯০টি পদ শূন্য রয়েছে।

তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরির জন্য ৪ দশমিক ৪১ লাখের বেশি শূন্যপদ রয়েছে। দুটি শ্রেণিতে মোট চাকরির সংখ্যা ১৩ লাখ ৪৩ হাজারের বেশি, যা বেসামরিক প্রশাসনে মোট চাকরির ৭৭ শতাংশ।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের (এমওপিএ) কর্মকর্তারা বলছেন, কোভিড-১৯ বিধিনিষেধের কারণে নিয়োগে দেরিতে নজিরবিহীন এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি জারি করা এক পরিপত্রে এমওপিএ সব মন্ত্রণালয় এবং বিভাগকে নিয়োগ প্রক্রিয়ার গতি বাড়াতে অনুরোধ জানিয়েছে।

তবে কর্মকর্তারা বলছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং নিয়োগকারী সংস্থাগুলোর উদ্যোগের অভাবের কারণে নিয়োগের গতি বাড়ছে না।

কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে থাকে। কিন্তু মন্ত্রণালয় ও সরকারি সংস্থাগুলো নিয়ন্ত্রিত নিম্ন গ্রেডে নিয়োগ বেশিরভাগ সময়ই বিলম্বিত হয়।

যেমন ২০২০ সালের ১৬ জুন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচিতে ১০৮টি শূন্য পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করে।

নিয়োগ পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয় ২০২১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর। কিন্তু পরে তদন্তে দেখা যায়, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়ম ছিল। যেমন পরীক্ষা ছাড়াই ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।

মন্ত্রণালয় ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করলেও এই শূন্যপদ পূরণে কিছুই করেনি। এই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

খাদ্য অধিদপ্তর ২০১৮ সালের ১১ জুলাই ১ হাজার ৬৬৬টি চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। গত বছরের শেষ প্রান্তিকে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হয়।

সরকারি নিয়োগে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ এতটাই সাধারণ হয়ে উঠেছে যে অনেক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারা নিয়োগ শুরু করতে অনীহা প্রকাশ করছেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনপ্রশাসনের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, 'বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীন অধিদপ্তর ও একই ধরনের প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়। যেহেতু সেই স্তরের কর্মকর্তারা  সচিব হতে চান, তাই তারা নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা থেকে বিরত থাকেন, তারা ভয় পান যে (তাদের পদোন্নতির সম্ভাবনায়) সমস্যা হতে পারে।

যোগাযোগ করা হলে, সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফিরোজ মিয়া বলেন, তৃতীয় শ্রেণির চাকরিতে নিয়োগের জন্য একটি পৃথক কমিশন গঠন করলে অনিয়ম কমবে কারণ পিএসসি ইতোমধ্যে প্রথম শ্রেণি ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে।

তিনি বলেন, 'নিয়োগ দুর্নীতিমুক্ত হলে সরকারি চাকরিতে কম অনিয়ম হবে। কেউ যদি সরকারি চাকরি পেতে ১০-১৫ লাখ টাকা দেয়, তাহলে তারা ঘুষ নেয়।'

সাবেক সচিব বদিউর রহমান বলেন, লোক না থাকায় সরকারি দপ্তরে সেবাপ্রার্থীরা বাড়তি চ্যালেঞ্জ আর দেরির সম্মুখীন হন।

২০১৯ সালে সরকার তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ কেন্দ্রীয়করণের জন্য উদ্যোগ নেয় এবং এ বিষয়ে পিএসসির মতামত জানতে চেয়েছিল এমওপিএ।

পিএসসির তৎকালীন চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সাদিক মতামত দিয়েছিলেন যে সরকার পর্যাপ্ত সহায়তা দিলে পিএসসি তা করতে পারে।

করোনাভাইরাস মহামারির কয়েক সপ্তাহ আগে ২০২০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি সরকার প্রস্তাবিত কেন্দ্রীভূত নিয়োগ প্রক্রিয়া মূল্যায়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করে।

মহামারীর প্রথম ধাপের পর, ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি এটি আবারও সামনে আসে। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ পিএসসিকে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরির জন্য কেন্দ্রীয় নিয়োগ প্রক্রিয়া আয়োজনের নির্দেশ দেন।

কিন্তু তারপর থেকে আর কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।

যোগাযোগ করা হলে জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে সরকার ব্যবস্থা নেবে।

তিনি বলেন, 'আমি নির্দিষ্ট কোনো তারিখ বলতে পারব না। তবে শিগগির আপনারা কিছু অগ্রগতি দেখতে পাবেন।'

Comments

The Daily Star  | English

Sagar-Runi murder: Inconclusive DNA test results stall probe

The task force investigating the 2012 murders of journalist couple Sagar Sarowar and Meherun Runi in its report submitted to the High Court last month said it required more time to complete the probe as the results of the DNA samples collected from the scene were inconclusive.

6h ago