ভারতের নাগরিকত্ব আইন তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, প্রতিবেশী দেশ হিসেবে নজর রাখছি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

'যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশিরভাগ রাষ্ট্র আমাদের সঙ্গে ভবিষ্যতে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে। পৃথিবীর প্রায় ৮০টি দেশের সরকার এবং রাষ্ট্রপ্রধান আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টও প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে সম্পর্ক দ্বিতীয় পর্যায়ে উন্নীত করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। সুতরাং আমাদের বিবেচনায় এই অঞ্চলের নিরিখে অত্যন্ত সুন্দর, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে।'
ছবি: বাসস

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ভারতের নতুন নাগরিকত্ব আইন সিটিজেনশিপ এমেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট-সিএএ তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। যেহেতু বাংলাদেশ প্রতিবেশী রাষ্ট্র, সেই হিসেবে আমরা বিষয়টির দিকে নজর রাখছি।

আজ শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর দেওয়ানজি পুকুর লেনস্থ ওয়াইএনটি সেন্টারে মতবিনিময়কালে সাংবাদিকরা ভারতের নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিভিন্ন দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে উল্লেখ করে এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান জানতে চাইলে মন্ত্রী এ কথা বলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের একটি দপ্তর আবারও বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ড.হাছান মাহমুদ বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের যে কোনো দপ্তর তাদের মতামত দিতেই পারে। তারা বলেছে, বিরোধী দল অংশগ্রহণ করেনি। বাংলাদেশে ৪৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৯টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। এবং কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ করা না করা, সেটি সরকারের ওপর বর্তায় না, সেটি সেই দলের দায়িত্ব।'

দলটি বরং নির্বাচন প্রতিহত করার ডাক দিয়েছিল, সেই লক্ষ্যে দেশে সহিংসতা ঘটিয়েছিল এবং সেই সহিংসতার সঙ্গে যারা যুক্ত ছিল, তাদেরকেই শুধু গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

ড. হাছান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, বাংলাদেশের সাথে অংশীদারিত্ব এবং সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাবার লক্ষ্যে তারা কাজ করছে, আমরাও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে আরও ঘনিষ্ঠ করার জন্য এবং আমাদের যে বহুমাত্রিক সম্পর্ক, সেটিকে আরও বিস্তৃত করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। সামনের দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দেশে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একসাথে কাজ করার লক্ষ্যে আমরা আলোচনা করছি।

যে কোনো দেশের ভিন্নমতকে আমরা সম্মান করি উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশিরভাগ রাষ্ট্র আমাদের সঙ্গে ভবিষ্যতে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে। পৃথিবীর প্রায় ৮০টি দেশের সরকার এবং রাষ্ট্রপ্রধান আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টও প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে সম্পর্ক দ্বিতীয় পর্যায়ে উন্নীত করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। সুতরাং আমাদের বিবেচনায় এই অঞ্চলের নিরিখে অত্যন্ত সুন্দর, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে।'

সোমালিয়ায় জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ এবং ওই জাহাজের ২৩ নাবিককে মুক্ত করে আনার উদ্যোগ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান বলেন, 'বাংলাদেশের টেলিভিশনে কী দেখাচ্ছে, কী হচ্ছে সেটা কিন্তু যারা হাইজ্যাক করেছে তারা দেখে, স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশের সব টেলিভিশন দেখার সুযোগ আছে। যখন এই বিষয়টাকে অতি গুরুত্ব দেয়া হয়, জিম্মিদের পরিবারের প্রতিক্রিয়া যখন ওরা দেখে, তখন হাইজ্যাককারীদের অবস্থান আরও অনমনীয় হয় এবং হচ্ছে। এই নেগেটিভ ইম্পেক্টটা হচ্ছে।'

বিষয়টিকে সকলেরই সতর্কভাবে দেখা দরকার উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের মূল লক্ষ্য তো নাবিকদের এবং জাহাজটাকে মুক্ত করা। সুতরাং আমরা সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্বশীলভাবে যদি আচরণ করি তাহলে এই পরিস্থিতি উত্তরণ সহজ হবে।'

ড. হাছান বলেন, 'এটি নিয়ে সরকার কাজ করছে, অতীতেও সবার সম্মিলিত প্রচেষ্ঠার মাধ্যমে ১০০ দিনের মাথায় একই কোম্পানির জাহাজ এবং নাবিকদের মুক্ত করা সম্ভবপর হয়েছিল। এখনো আমরা আশা করছি আমাদের যে সমন্বিত প্রচেষ্টা আছে, সুস্থভাবে নাবিকদেরকে ও জাহাজটাকে মুক্ত করে নিয়ে আসতে পারব।'

রমজান কিংবা ঈদ উপলক্ষে কোনো পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার কোনো কারণ নেই জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাকিদের বলেন, 'দ্রব্যমূল্য যাতে মানুষের নাগালের মধ্যে থাকে, অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করতে না পারে সেজন্য সরকার নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। রমজান উপলক্ষে নায্যমূল্যে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। এক কোটি মানুষকে নায্যমূল্যে চালসহ অন্যান্য সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে। এরপরও দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গায় অসাধু ব্যবসায়ীরা, এমনকি খুচরা বিক্রেতারাও একটি বাজারে একটি পণ্যের দাম একরকম, আরেক বাজারে অন্যরকম করে ইচ্ছেমতো দাম নেওয়ার একটা প্রবণতা তৈরি হয়েছে। খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যে এই প্রবণতা আগে দেখা যায়নি।

হাছান মাহমুদ বলেন, 'সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখলাম, মানুষ এব্যাপারে আগের তুলনায় অনেক বেশি সোচ্চার হয়েছে। অহেতুক দ্রব্যমূল্য বাড়ানোর প্রবণতা রোধ করার ক্ষেত্রে মানুষের সোচ্চার হওয়াটা সহায়ক। একই পণ্য বিভিন্ন বাজারে বিভিন্ন দামে যে বিক্রি হচ্ছে তা নিয়ে বিভিন্ন টেলিভিশন ও পত্রিকা অনুসন্ধানী রিপোর্ট করেছে। এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের সহায়তা চাই, আমাদের সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে, যাতে কেউ অহেতুক পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করতে না পারে।'

Comments

The Daily Star  | English
World Press Freedom Day 2024

Has Bangladesh gained anything by a restrictive press?

The latest Bangladesh Bank restriction on journalists is anti-democratic, anti-free press and anti-public interest.

11h ago