হাকালুকি হাওড়

‘ঈদোর জামাতে দোয়া ফড়ছি যেন ধানো শিল না পড়ে’

হাকালুকি হাওড়ের বিস্তীর্ণ ধানখেত। ছবি: স্টার

মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার হাকালুকি হাওরপাড়ের মহেশ গৌরী গ্রামের কৃষক মইন উদ্দিন (৫০) আজ সকালে ঈদের নামাজ পড়েই ধানের জমিতে যান। 

হাওড়ের সোনালী ধান দেখতে কার না ভালো লাগে। আট সদস্যের পরিবার মইনের। হাওরে জমি আছে আট কিয়ার (৩০ শতকে এক কিয়ার)। এই জমির ধানের ওপর পুরো পরিবার নির্ভরশীল। 

গত বছর পানির কারণে হাওরে ফসল নষ্ট হওয়ায় বছরটি তেমন ভালো যায়নি এই পরিবারের। আর কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শেও কোন ফলাফল পাওয়া যায়নি।

দ্য ডেইলি স্টারকে কৃষক মইন বলেন, 'এই জমির ধানে চলে যায় বছর, কিছু বিক্রিও করা যায়। কিন্তু গতবার চার মাস চাল কিনে খেয়েছি।' 

'এবার অনেক ভালো ধান হয়েছে' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'কিন্তু আমার প্রায় এক একর জমি নিচু, সেখানে বৃষ্টির পানি জমে যায়। ঈদের পরদিন কাটব মনে করেছিলাম। বৃষ্টির পানির পরিস্থিতি দেখে ঈদের চার দিন আগে ভয়ে আধাপাকা ধান কেটে নিয়েছি। কোনো উপায় ছিল না।'

এই কৃষক আরও বলেন, 'ঈদের জামাতে একটাই দোয়া করেছি, যেন সহি সালামতে এবার ধানটা কাটতে পারি।'

এবার বোরো ধান ভালো হওয়ায় মইনের মতো হাওরের লাখো কৃষক পরিবারের সদস্যরা খুশি আছেন বলে জানা গেছে। তবে সবার মধ্যে একটা উৎকণ্ঠা আছে যেন ধান কাটার আগে শিলাবৃষ্টি, বৃষ্টি না পড়ে, বন্যা না হয়।

হাওড় পাড়ের কৃষক মনির আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এবারের ধান ভালো হয়েছে। এ ভরসায় অগ্রিম লোন নিয়ে সেই টাকা দিয়ে পরিবারের জন্য ঈদের কেনাকাটা করেছি। বাচ্চাদের নতুন পোশাক কিনে দিয়েছি।'

তিনি জানান, তার সাড়ে তিন কিয়ার জমিতে প্রতিবছরই বোরো ধানের আবাদ করেন। ওই ধান বিক্রি করে পুরো বছর চলেন। বর্ষায় হাওরে মাছ ধরার কাজও করেন কখনো। গত বছর বোরো আবাদের সময় ঋণ করেছিলেন। 

ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'গত বছর ঈদের দিন ঘরে কোনো চাল ছিল না। এক বেলা খাইছি। ঈদের আনন্দ থাকব কি-লা। এবার আল্লাহর রহমতে ধান ভালা অইছে। আইজ ঈদোর জামাতে দোয়া ফড়ছি যেন ধানো শিল না পড়ে। ধান বালা আছে কইয়া ইবার সবার মাঝেই ঈদের আনন্দ আছে।' 

এই কৃষক বলেন, 'কুটুম হকল কইরা কানাইঘাট, জকিগঞ্জে শিলে (শিলাবৃষ্টি) ধান নষ্ট করছে। গতবার আমারও নষ্ট হয়েছে। তবে আল্লাহর হুকুমে এখন পর্যন্ত ভালো আছে। আগামী দুই একদিনের মধ্যে ধান কাটব। আকাশে মেঘলা দেখলেই ডর লাগে।'

শাহপুর গ্রামের কৃষক মতলিব মিয়ার মতে, এবার হাওরের সব কৃষকই কমবেশি ধান পাবেন। তাই মানুষ ধান না রেখে বিক্রি করে দিচ্ছেন শুধু ঈদ আনন্দে কাটানোর জন্য। 

জানতে চাইলে মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার বোরোর ফলন অনেক ভালো। মৌলভীবাজারে বোরো আবাদ হয়েছে মোট ৬১ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে।'

কৃষকদের কীভাবে পরামর্শ দেওয়া হয়, জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'কৃষক চাইলেই সরাসরি যেকোনো সমস্যার জন্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে।'

Comments

The Daily Star  | English

'Frustrated, Yunus hints at quitting'

Frustrated over recent developments, Chief Adviser Prof Muhammad Yunus is considering stepping down, said sources familiar with what went down at the Chief Adviser’s Office and Jamuna yesterday.

7h ago