নারায়ণগঞ্জ

বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ, পোশাক শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে আহত অন্তত ৬০

১৯ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বিসিক শিল্পাঞ্চলে বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভরত শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। ছবি: স্টার

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বিসিক শিল্পাঞ্চলে বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভরত শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে ১০ পুলিশসহ অন্তত ৬০ জন আহত হয়েছেন।

আজ রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ চলে। এসময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করে।

তবে সংঘর্ষ থামলেও দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে রাখে।

এর আগে, গত মার্চের বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন নারায়ণগঞ্জের বিসিক শিল্পাঞ্চলের অবন্তী কালার টেক্স লিমিটেডের হাজারো শ্রমিক। সড়কে বৈদ্যুতিক খুঁটি, বাঁশ ও কাঠ ফেলে অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিকরা। এতে সড়কটিকে অন্তত দুই কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের শান্ত করার চেষ্টা করে পুলিশ। পরে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে এবং জলকামান নিক্ষেপ করে। জবাবে শ্রমিকরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে পুলিশ টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।

শিল্প পুলিশ-৪ এর সহকারী পুলিশ সুপার আয়নুল হুদা জানান, শ্রমিকদের ছোড়া ইটপাটকেলে অন্তত ১০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

'শ্রমিকরা রাস্তায় গাড়ি ভাঙচুর শুরু করলে পুলিশ তাদের থামাতে চেষ্টা করে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে,' বলেন তিনি।

অন্যদিকে সংঘর্ষে অন্তত ৫০ শ্রমিক আহত হয়েছে বলে দাবি করেছেন আবন্তি কালার টেক্স লিমিটেডের কর্মী জারিদুল মন্ডল। তিনি বলেন, 'আমরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানাচ্ছিলাম। পুলিশ আমাদের ওপর লাঠিচার্জ ও গুলি ছুড়েছে। এতে অন্তত ৫০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে ২০ জন রাবার বুলেটে আহত হয়েছেন।'

কারখানার আরেক কর্মী মো. ফয়সাল বলেন, 'আমরা আমাদের বেতন দাবি করছি, এটা কি অপরাধ? তাহলে পুলিশ কেন আমাদের ওপর গুলি চালাল? আমরা যদি সময়মতো বেতন পেতাম তাহলে আমাদের রাস্তায় আসতে হতো না।'

কারখানার শ্রমিকরা দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, গত ৮ এপ্রিল দুপুর পর্যন্ত কাজের পর কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ঈদের আগে বোনাস পেলেও মার্চের বেতন বকেয়া ছিল।

কারখানার মালিক ঈদের আগেই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মার্চের বেতন পরিশোধ করবেন বলে আশ্বাস দিলেও শ্রমিকরা তা পাননি। এতে ঈদের মধ্যে অর্থ সংকটে দিন কাটিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন শ্রমিকরা।

কারখানাটির সুইং অপারেটর মো. মাসুদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এপ্রিলের ৮ তারিখ কারখানা বন্ধের সময় মোবাইলে বেতন পরিশোধের আশ্বাস দিয়েও কথা রাখেনি মালিকপক্ষ। গত ৮ মাস ধরে বেতন নিয়ে এভাবে গড়িমসি করছে মালিকপক্ষ। বেতনের দাবিতে রাস্তায় না নামলে শ্রমিকরা বেতন পান না।'

'ঈদের দিনও বারবার মোবাইল চেক করেছি। এই মনে হয় বেতন ঢুকলো এই আশায়। কিন্তু বেতন আসেনি। আপনারা ভাবতেও পারবেন না ঈদের সময় বেতন না পেলে কীভাবে শ্রমিকদের দিন কাটে। এবার ঈদে আনন্দ ছিল না। অন্তত অর্ধেক বেতন দিলেও তো হতো,' যোগ করেন তিনি।

ঈদের আগে বেতন না পাওয়াতে গ্রামে যেতে পারেননি বলে জানান কারখানার শ্রমিক সুমাইয়া। 'বাসের টিকেট কেটেও সিরাজগঞ্জে বাড়ি যেতে পারিনি,' বলেন তিনি।

'আমাদের ক্রোনীর শ্রমিকদের ঈদ বা উৎসব নাই। প্রতি মাসে বেতনের জন্য রাস্তায় নামতে হয়। বাসের টিকেট কেটেও গ্রামের বাড়ি যেতে পারি নাই। টাকা নাই, বাড়ি গিয়ে কী করবো? আমাদের ঈদের আনন্দ শেষ করে দিয়েছে ক্রোনীর মালিক।'

'আমরা কী মানুষ না অন্য কিছু?' বলেন সুমাইয়া।

এএইচ আসলাম সানির মালিকানাধীন কারখানায় অন্তত সাত হাজার শ্রমিক কর্মরত আছেন বলে জানিয়েছে শিল্প পুলিশ।

যোগাযোগ করা হলে সানি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা সব শ্রমিককে ঈদ বোনাস দিয়েছি। কিন্তু মার্চ মাসের শেষ মাসের বেতন বকেয়া রয়ে গেছে। কারখানা চালু হয়েছে, আগামী বুধবারের মধ্যে সবার বেতন পরিশোধ করে দেব।'

Comments

The Daily Star  | English
BNP demands national election by December 2025

BNP to sue election officials, CECs of last three polls

A three-member BNP team, led by its Standing Committee Member Salahuddin Ahmed, will file the complaint

2h ago