কুয়াকাটার পর্যটন ব্যবসায় তীব্র তাপদাহের প্রভাব, বাতিল হচ্ছে বুকিং

কাঙ্ক্ষিত পর্যটক পাচ্ছেন না কুয়াকাটার পর্যটন ব্যবসায়ীরা। ছবি: স্টার

দেশব্যাপী চলমান তীব্র তাপদাহের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পর্যটন শিল্পে। এর প্রভাবে পটুয়াখালীর সাগর সৈকত কুয়াকাটায় পর্যটন ব্যবসায় মন্দা চলছে। প্রখর রোদে সৈকতের বালুও স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি গরম হয়ে উঠেছে। সাগরের লবণাক্ত পানিও অনেকটা গরম হওয়ায় পর্যটকরা সাগরের পানিতে গোসলেও নামতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন না। সেই কারণে সপ্তাহের ছুটির দিনগুলোতেও কাঙ্ক্ষিত পর্যটক আসছেন না। আবহাওয়া সহনীয় পর্যায়ে না থাকায় অনেকেই শুক্র ও শনিবারের বুকিংও বাতিল করছেন।

কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ আজ মঙ্গলবার জানান, চলমান প্রচণ্ড তাপদাহের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পর্যটন খাতে। প্রখর রোদে সৈকতের বালুও স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি গরম হয়ে উঠেছে। সাগরের পানিও কিছুটা গরম। তাই যে সামান্য সংখ্যক পর্যটক আছেন, তারাও সাগরে গোসল করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন না।

'আবার সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার দেশের বিভিন্ন স্থানের পর্যটকরা কুয়াকাটার বিভিন্ন আবাসিক হোটেল-মোটেলে আগাম বুকিং দিয়ে থাকেন, তাদের অনেকেই এ তাপদাহের কারণে বুকিং বাতিল করছেন। এতে কুয়াকাটার পর্যটন ব্যবসায় মন্দা চলছে', বলেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, পর্যটকদের কেউ কেউ দুই-তিন দিন থাকার জন্য এসে গরমে একদিন থেকে ফিরে যাচ্ছেন। এতে কাঙ্ক্ষিত পর্যটক পাওয়া যাচ্ছে না।

কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইব্রাহিম ওয়াহিদ জানান, অগ্রিম বুকিং করা পর্যটকরা পরিবারের শিশু-বৃদ্ধদের কথা চিন্তা করে তা বাতিল করছেন। প্রতিটি ঈদের পর আমরা প্রথম সপ্তাহ পুরোপুরি বুকিং পাই, দ্বিতীয় সপ্তাহে ৫০-৭০ শতাংশ বুকিং থাকে। এভাবে কমপক্ষে ১৫ দিন পর্যটকদের ভিড় থাকে। তবে এই ঈদের পরে হঠাৎ পর্যটকদের সংখ্যা কমে ২০-৩০ শতাংশে নেমে এসেছে।

খুলনা থেকে আগত পর্যটক খালিদ হোসেন বলেন, পরিবারের পাঁচ সদস্যকে নিয়ে কুয়াকাটায় এসেছি। দুই-তিন দিন থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রচণ্ড দাবদাহের কারণে একদিন থাকার পরে মনে হচ্ছে এখানে আর থাকা সম্ভব নয়।

ছবি: স্টার

'হোটেল সমুদ্র বাড়ি' রিসোর্টের পরিচালক নজরুল ইসলাম সজিব বলেন, আমাদের হোটেলে ঈদের পরে বেশ ভালো অগ্রিম বুকিং পেয়ে থাকি। কিন্তু অসহনীয় তাপমাত্রার কারণে এখন চিত্র ভিন্ন। শুক্র ও শনিবারের জন্য আগাম বুকিং দেওয়া চারটি রুম আজ বাতিল করেছেন পর্যটকরা। তারা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত গরমের কারণে শিশু ও পরিবারের লোকজন নিয়ে নিরাপদ মনে না করায় এ বুকিং বাতিল করেছেন।

ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার (টোয়াক) সাধারণ সম্পাদক জেনারেল জহিরুল ইসলাম বলেন, ঈদ-পরবর্তী সময়কে আমরা পর্যটক মৌসুমের একটি বড় সময় ধরে থাকি। এ বছর মৌসুমে পর্যটক আসা শুরু করলেও অতিরিক্ত তাপমাত্রা সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছে। কুয়াকাটায় প্রায় ২০০ আবাসিক হোটেল-মোটেল-রিসোর্টে এখন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বুকিং রয়েছে। সব মিলিয়ে পর্যটক কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র আবহাওয়া পর্যবেক্ষক মো. জিল্লুর রহমান জানান, কুয়াকাটায় গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা এর আশপাশে অবস্থান করছে। আরও এক সপ্তাহ অবস্থা এমন থাকতে পারে।

ট্যুরিস্ট পুলিশের (কুয়াকাটা রিজিয়ন) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, পর্যটকদের বারবার মাইকিং করে সাবধানে থাকতে বলা হচ্ছে। এ ছাড়াও আমাদের সদস্যরা বাড়তি নজরদারি রাখছে, যাতে কোনো পর্যটক অসুস্থ হলেও দ্রুত চিকিৎসা দেওয়া যায়।

Comments

The Daily Star  | English

Can't afford another lost decade for education

Whenever the issue of education surfaces in Bangladesh, policymakers across the political spectrum tend to strike a familiar chord. "Education is our top priority," they harp

3h ago