এপ্রিলে তাপপ্রবাহ বাড়ছে

চলমান তাপপ্রবাহ থেকে কিছুটা স্বস্তি পেতে নলকূপ থেকে শরীরে পানি ঢালছেন এক ব্যক্তি। ছবিটি গত ২১ এপ্রিল খুলনা থেকে তুলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের আলোকচিত্রী হাবিবুর রহমান।

এপ্রিলের হালকা থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বছরের পর বছর ধরে দীর্ঘায়িত হয়েছে বলে এক গবেষণায় পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে।

এপ্রিলের ৪৩ বছরের তাপমাত্রার তথ্য নিয়ে গবেষণা করা আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ১৯৮১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে এপ্রিলের তাপপ্রবাহের সবচেয়ে কম সময়কাল ছিল দুই দিন এবং দীর্ঘতম সময় ছিল ২৩ দিন।

এপ্রিলে রাজশাহী, যশোর, পাবনা, চুয়াডাঙ্গা ও সাতক্ষীরায় সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

৩৬ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে তাপমাত্রা মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচিত হয়।

তবে তাপমাত্রা ৪০-৪২ ডিগ্রি এবং ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি রেকর্ড করা দিনের সংখ্যা বাড়েনি।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মল্লিক বলেন, তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ সর্বোচ্চ ছয় দিন স্থায়ী হয়।

৪৩ বছরে প্রতি এপ্রিলে অন্তত দুই দিন মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ ছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কখনো কখনো তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে এই তাপমাত্রা অব্যাহত ছিল।

তীব্র তাপপ্রবাহে ইতোমধ্যে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এবং চলতি এপ্রিলে ইতোমধ্যে চার দিন তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে।

এখনো প্রকাশ না হওয়া সেই গবেষণা অনুযায়ী, দেশের উত্তর, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি রেকর্ড করা হয়। এপ্রিলের এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি সময় ধরে কয়েকটি জেলায় তাপপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে।

৪৩ বছরের তথ্য নিয়ে করা গবেষণায় দেখা গেছে, এই সময়ে এপ্রিল মাসে মোট এক হাজার ২৯০ দিন ছিল। যার মধ্যে ঢাকায় ১৮৬ দিন, টাঙ্গাইলে ১৯৩ দিন, সাতক্ষীরায় ২৮৪ দিন, রাঙ্গামাটিতে ১৩৫ দিন, বগুড়া ও মাদারীপুরে ১৪৬ দিন এবং ফরিদপুরে ২৬৫ দিন মৃদু থেকে চরম তাপপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে।

বর্তমানে দেশজুড়ে মৃদু থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে এবং চলতি মাসের শেষ পর্যন্ত এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকবে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে।

১৯৮১ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত সময়ে এপ্রিলে তাপপ্রবাহ ছিল দুই দিন। ১৯৮৮ সালে ছিল পাঁচ দিন, ১৯৯১ সালে ছিল ১০ দিন, ১৯৯২ সালে নয় দিন, ১৯৯৪ সালে ১৬ দিন, ১৯৯৫ সালে ২৩ দিন, ২০০১ সালে ১৭ দিন, ২০০৮ সালে ১৬ দিন, ২০০৯ সালে ১৭ দিন, ২০১৪ সালে ২৩ দিন ও ২০২৩ সালের এপ্রিলে তাপপ্রবাহ ছিল ১৭ দিন।

১৯৮৯ সালে এপ্রিলে যখন তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যায়, তখন তা তিন দিন স্থায়ী ছিল। ১৯৯২ সালে পাঁচ দিন, ১৯৯৫ সালে চার দিন; ১৯৯৭-২০০৪ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরেই দুই দিন, ২০০৯-২০১০ সালে প্রতি বছর চার দিন, ২০১৪ সালে ছয় দিন, ২০১৬ সালে দুই দিন এবং ২০২২-২০২৩ সালে প্রতি বছর তিন দিন করে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যাহত ছিল।

আরও তিন দিনের জন্য 'হিট অ্যালার্ট'

দেশে চলমান তাপপ্রবাহ গতকাল সোমবার থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানানো হয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদের সই করা সতর্কবার্তায়।

গতকাল ৭২ ঘণ্টার জন্য তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া অফিস।

আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বলেন, আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকায় প্রকৃত তাপমাত্রার চেয়েও চার থেকে পাঁচ ডিগ্রি বেশি তাপমাত্রার গরম অনুভূত হচ্ছে।

গত ২১ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় এ মাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস করা হয়েছে।

নাজমুল হক বলেন, সরকারের বিভিন্ন সংস্থা যাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়, সেজন্য গতকাল আবহাওয়া অফিস থেকে ৭২ ঘণ্টার জন্য তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার থেকে তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে উল্লেখ করে আবারও সতর্কতা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সিলেট, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুয়েক জায়গা ছাড়া সারাদেশে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস নেই।

এর আগে গত ১৯ এপ্রিল হিট অ্যালার্ট দেয় আবহাওয়া অধিদপ্তর। সেখানে বলা হয়, ১৯ থেকে ২২ এপ্রিল সকাল পর্যন্ত সময়ের জন্য এই অ্যালার্ট দেওয়া হয়।

সবশেষ গতকাল এই অ্যালার্টের সময় বাড়িয়ে ২৫ এপ্রিল সকাল পর্যন্ত করা হয়।

Comments

The Daily Star  | English
road accidents death in Bangladesh April

Road accidents killed 583 in April: Jatri Kalyan Samity

Bangladesh Jatri Kalyan Samity (BJKS), a passenger welfare platform, said that a total of 583 people were killed and 1,202 injured in 567 road accidents across the country in the month of April, citing media reports

1h ago