আমাদের দেশে গণমাধ্যম মুক্ত শুধু নয়, উন্মুক্ত হয়ে আছে: আরাফাত

তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেছেন, আমাদের দেশে গণমাধ্যম মুক্ত শুধু নয়—উন্মুক্ত হয়ে আছে। এখানে কোনো ধরনের শৃঙ্খলা, নিয়ন্ত্রণ বা আইন-কানুনের কোনো কিছু নেই। মুক্ত গণমাধ্যম না উন্মুক্ত গণমাধ্যম বাংলাদেশে। ওই সীমারেখা টানা দরকার।
জাতীয় প্রেসক্লাবে সম্পাদক পরিষদ আয়োজিত ‘গ্রহের জন্য গণমাধ্যম: পরিবেশগত সংকট মোকাবিলায় সাংবাদিকতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত | ছবি: এমরান হোসেন/স্টার

তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেছেন, আমাদের দেশে গণমাধ্যম মুক্ত শুধু নয়—উন্মুক্ত হয়ে আছে। এখানে কোনো ধরনের শৃঙ্খলা, নিয়ন্ত্রণ বা আইন-কানুনের কোনো কিছু নেই। মুক্ত গণমাধ্যম না উন্মুক্ত গণমাধ্যম বাংলাদেশে। ওই সীমারেখা টানা দরকার।

তিনি বলেন, আমরা প্রচণ্ডভাবে বিশ্বাস করি, গণমাধ্যম যত মুক্ত হবে, তার স্বাধীনতার যত চর্চা করবে এবং অপতথ্যের বিপরীতে যত তথ্যের প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে ততই সমাজে গুজব, অপপ্রচার রোধ হবে। আমি মনে করি, সরকারের মধ্যে সেই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জায়গাও তৈরি হবে।

বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস-২০২৪ উপলক্ষে আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সম্পাদক পরিষদ আয়োজিত 'গ্রহের জন্য গণমাধ্যম: পরিবেশগত সংকট মোকাবিলায় সাংবাদিকতা' শীর্ষক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, 'গণমাধ্যমের সুরক্ষা ও গণমাধ্যমের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা নিশ্চিত করার ব্যাপারে আমাদের অঙ্গীকার আছে এবং সেটি থাকবে। তবে রাজনীতিতে যেমন অনেক ক্ষেত্রে অপরাজনীতি আছে, বিভিন্ন পেশায় যেমন কিছু নেতিবাচক বিষয় আছে, তেমন তথ্যের সঙ্গেও আমরা অপতথ্যের বিস্তৃতি আমরা অনেক সময় দেখি। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে অপসাংবাদিকতাও আমরা দেখি। এটি কিন্তু শুধু আমি বলছি না, আমার সাংবাদিক বন্ধুরাও বলেন।'

'আমি এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পরে এমন কোনো সাংবাদিক সংগঠন নেই যাদের সঙ্গে আমি বসছি না। যাদের সঙ্গে বসা হয়নি, আগামী দিনে তাদের সঙ্গেও বসব। সব সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি কথা বলা হচ্ছে, যেগুলো নিবন্ধন নেই সেগুলোকে বন্ধ করে দেন।'

নোয়াব সভাপতির বক্তব্যের জের ধরে তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'মফস্বলে সাংবাদিকতাটা একটু কঠিন। ঢাকায় তো বিভিন্ন ধরনের সুরক্ষা পাওয়া যায়। আমি একমত। কঠিন যেন সহজতর হয়, সেটারও পদক্ষেপ আমরা নেব। একইসঙ্গে এটিও সত্যি, মফস্বলে আবার অপসাংবাদিকতার চর্চাও অনেক হয়। যেখানে পেশাদারিত্বের অভাব দেখা যায়।'

'এই অপসাংবাদিকতার চর্চা সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে পেশাদার সাংবাদিকদের। সাংবাদিকরা বলছেন, এখানে একটি শৃঙ্খলা আনা দরকার। আমরা কিন্তু বলছি না। প্রতিটি সাংবাদিক সংগঠন বলছে, ন্যূনতম কোয়ালিফিকেশন থাকা দরকার। সব পেশায় আছে, এখানে থাকবে না কেন! তারা বলছেন, এক ধরনের শৃঙ্খলা আনা প্রয়োজন। অনেকে এসব বলতে বলতে নিয়ন্ত্রণ বলে ফেলেছেন। আমার শুনতেই বিব্রত লাগছে; সাংবাদিকতায় নিয়ন্ত্রণে আমরা বিশ্বাস করি না, করতে চাই না।'

প্রতিষ্ঠিত পত্রিকাগুলোর অনলাইন সংস্করণ, শুধু অনলাইন নিউজপোর্টাল, যেসব গণমাধ্যমকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এবং যে আবেদনগুলো অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে, সেগুলো তালিকা চেয়েছেন বলে জানান তথ্য প্রতিমন্ত্রী।

সবাই বলছে, এর বাইরে আরও অনেক অনলাইন পোর্টাল খোলা হয়, অপসাংবাদিকতা করা হয়, অপপ্রচার চালানো হয়। যার ফলে বদনাম হয় এবং বদনাম এসে পড়ে পেশাদার সাংবাদিকদের ঘাড়ে। এগুলো সব বন্ধ করে দিতে হবে। আমি বলেছি, তালিকা আমার মন্ত্রণালয়ে দিলে বিটিআরসিকে পাঠিয়ে বাকিগুলো সব বন্ধ করে দেবো। আমি তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে করছি।

গণমাধ্যমকর্মী আইন নিয়ে নতুন করে কাজ শুরু করেছেন বলেও জানান তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, 'আমাদের দেশে গণমাধ্যম মুক্ত শুধু নয়—উন্মুক্ত হয়ে আছে। এখানে কোনো ধরনের শৃঙ্খলা, নিয়ন্ত্রণ বা আইন-কানুনের কোনো কিছু নেই। মুক্ত গণমাধ্যম না উন্মুক্ত গণমাধ্যম বাংলাদেশে। ওই সীমারেখা টানা দরকার।'

'আমরা প্রচণ্ডভাবে বিশ্বাস করি, গণমাধ্যম যত মুক্ত হবে, তার স্বাধীনতার যত চর্চা করবে এবং অপতথ্যের বিপরীতে যত তথ্যের প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে ততই সমাজে গুজব, অপপ্রচার রোধ হবে। আমি মনে করি, সরকারের মধ্যে সেই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জায়গাও তৈরি হবে।'

বিভিন্ন সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার এ বিষয়ে কথা হয়েছে জানিয়ে আরাফাত বলেন, 'আমরা প্রকৃতপক্ষেই মনে করি, গণমাধ্যম ও পেশাদার সাংবাদিকতা আমাদের বন্ধু। তারা আমাদের সহযোগিতা করেন।'

সরকারের বিচ্যুতি ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'এ ধরনের সব সমালোচনাকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে যখন সমালোচনার নামে অপতথ্য, মিথ্যাচার, অপপ্রচারের মাধ্যমে এক ধরনের এজেন্ডা বেইজড সিস্টেমেটিক ডিজইনফরমেশন ক্যাম্পেইন করা হয়, সেগুলো কিন্তু আমরা বুঝি এগুলো কে করছে, কারা করছে, কেন করছে। সেই ব্যাপারগুলোকে আমরা নিন্দা জানাই। গঠনমূলক সমালোচনাকে আমরা সব সময় স্বাগত জানাই এবং স্বাগত জানাব।

আমরা মনে করি না, সরকার যারা পরিচালনা করছেন, তারা সবাই ফেরেশতা—সবাই মানুষ। আমাদের ভুল-ত্রুটি হতে পারে, ব্যত্যয়-বিচ্যুতি থাকতে পারে, ব্যর্থতা থাকতে পারে। গণমাধ্যম সেগুলো ধরিয়ে দিলে সেগুলো স্বীকার করে নিতে এবং সেই কাজগুলোকে শুদ্ধ করে নিতে কোনো সমস্যা নেই।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের জন্মের পর থেকে যেভাবে বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেছে, বিভিন্ন সময় সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে, রাজনীতিকে নষ্ট করা হয়েছে, মিলিটারি ক্যু করে যারা ক্ষমতায় এসেছে—তাদের পকেট থেকে যেসব রাজনৈতিক দল তৈরি হয়েছে এবং রাজনীতি ও গণতন্ত্রের পরিবেশকে বিনষ্ট করেছে, সেই বাস্তবতার মধ্যে কিন্তু আমাদের পরিচালনা করতে হয়।

আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, 'এগুলো কেউ অ্যাড্রেস করেনি কখনো অতীতে। কারা করবে? কেন করবে? যারা ক্ষমতায় ছিল একে তো অগণতান্ত্রিক অপশক্তি এবং তারপর তাদের পকেট থেকে জন্ম নেওয়া বিভিন্ন দলগুলো। যে কারণে তারা এগুলো চিন্তা করেনি।'

তিনি বলেন, 'আমরা চিন্তা করছি, আমরা কাজ করার চেষ্টা করছি। করতে গিয়ে কোথাও কোথাও বিচ্যুতি আছে, ব্যর্থতা আছে। আমি বলছি না যে নেই কিন্তু আমাদের নিয়মটা ঠিক আছে, আমরা চেষ্টা করছি।'

পরিবেশের দরকার নেই, উন্নয়নের দরকার—এই নীতিতে বিশ্বাস করেন না জানিয়ে আরাফাত বলেন, 'আবার উন্নয়ন বন্ধ করে পরিবেশ নিয়ে কিছু চূড়ান্ত ভাবনা আছে, আমি সেটাতেও বিশ্বাস করি না। আমি মনে করি, এখানে একটা ভারসাম্য খুবই দরকার।'

যে সাংবাদিকরা পরিবেশ নিয়ে সংবাদ করবেন, সঠিক তথ্য ও বৈজ্ঞানিক প্রমাণের ভিত্তিতে তাদের পূর্ণ সমর্থন আমি দেবো। কারণ পরিবেশ সুরক্ষা আমাদের কেন্দ্রীয় নীতির অংশ। যারা (সাংবাদিক) এখানে আমাদের সরকারকে সমর্থন করবেন জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে, তারা আমার কাছ থেকে, আমার মন্ত্রণালয় থেকে পূর্ণাঙ্গ সমর্থন পাবেন। তৃণমূলে যে যতই কঠিন বাস্তবতা তাদের জন্য তৈরি করুক না কেন, আমরা তাদের পূর্ণাঙ্গ সমর্থন, নিরাপত্তা ও যত ধরনের সহযোগিতা লাগে আমরা দেবো।

আমরা মনে করি, পরিবেশ বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে যারা নেতিবাচকভাবে অবদান রাখে, তাদের এক্সপোজ করবে যে সাংবাদিকরা তারা আমাদের বন্ধু।

আলোচনা সভায় প্রতিপাদ্যের ওপর সূচনা বক্তব্য দেন দ্য ডেইলি স্টারের প্রধান প্রতিবেদক পিনাকী রায়। সভাপতিত্ব করেন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম।

সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (নোয়াব) সভাপতি এ কে আজাদ, ভোরের কাগজের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক জাফর সোবহান, দেশ রূপান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তাফা মামুন। আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, ইনকিলাবের সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সাংবাদিকেরা।

Comments

The Daily Star  | English
Impact of esports on Bangladeshi society

From fringe hobby to national pride

For years, gaming in Bangladesh was seen as a waste of time -- often dismissed as a frivolous activity or a distraction from more “serious” pursuits. Traditional societal norms placed little value on gaming, perceiving it as an endeavour devoid of any real-world benefits.

17h ago