সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার বাতিলের ঘটনায় সম্পাদক পরিষদের তীব্র প্রতিবাদ

ছবি: সংগৃহীত

সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার বাতিলের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ।

আজ রোববার সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ এক বিবৃতিতে এই নিন্দা জানান।

এতে বলা হয়, গত ২৭ ডিসেম্বর শুক্রবার প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এক আদেশ জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সচিবালয়ে অগ্নিকাকাণ্ডের ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সচিবালয়ের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে জারি করা আদেশে বলা হয়, সাংবাদিকদের অনুকূলে ইস্যুকৃত অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড দ্বারা সচিবালয়ে প্রবেশাধিকার পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাতিল করা হলো। সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড এবং সচিবালয়ে প্রবেশাধিকার বাতিলের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে সম্পাদক পরিষদ। সংগঠন সংশ্লিষ্টরা মনে করে এ ধরনের আদেশ স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকি ও অন্তরায়।

সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকারের বিষয়টি নিয়ে ২৮ ডিসেম্বর দুঃখ প্রকাশ করে বার্তা দেওয়া হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে। সেই বার্তায় জানানো হয়েছে, প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের নিরাপত্তা বিবেচনায় অন্যান্য সব বেসরকারি পাসের পাশাপাশি বর্তমান অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড নিয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশও সীমিত করা হয়েছে। সরকার শিগগিরিই বিদ্যমান প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডগুলো পর্যালোচনা করবে।

সর্বশেষ গতকাল ২৯ ডিসেম্বর তথ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড পুনঃমূল্যায়ন করা হচ্ছে, খুব শিগগিরিই নতুন করে স্থায়ী বা অস্থায়ী অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বা পাস ইস্যু করা হবে। ৩০ ডিসেম্বর থেকে সাংবাদিকদের অস্থায়ী পাস দেওয়া হবে।

পর্যালোচনা ও পুনঃমূল্যায়নের উদ্যোগকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি এসব কাজে প্রয়োজনে ও অপেশাদার সাংবাদিক শনাক্তে সংগঠনের পক্ষ থেকে সহযোগীতারও সুযোগ রয়েছে বলে মনে করে সম্পাদক পরিষদ। কিন্তু ঢালাওভাবে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকারে বাধা দেওয়া সারা পৃথিবীতেই স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি আক্রমণ হিসেবে দেখা হয়।

আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী সরকারের ক্ষেত্রেও এ ধরনের প্রবণতা দেখা গিয়েছিল। আর্থিক খাতে যখন ক্রমাগত অনিয়ম চলছিল, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকে তখন সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকারে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছিল। ওই সব কর্মকাণ্ড নিয়ে সাংবাদিকদের অবস্থান, গণ-অভ্যুত্থানপূর্ব অতীত ওই সময়েও ছিল স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন।

গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে এলে সাইবার নিরাপত্তা আইন সংস্কার বা বাতিলের দাবি ওঠে। এ আইন বাতিলের বিষয়ে গত ৭ নভেম্বর নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর গত ২৪ ডিসেম্বর সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। নতুন এ অধ্যাদেশে পুলিশের ক্ষমতা আগের মতোই রাখা হয়েছে। সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৪-এর ৩৫ ও ৩৬ ধারায় পুলিশের ক্ষমতার বিষয়গুলো উল্লেখ রয়েছে। উল্লেখ্য, এরই মধ্যে বাতিলের নীতিগত সিদ্ধান্ত হওয়া সাইবার নিরাপত্তা আইনেও পুলিশকে একই ধরনের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। যেখানে আইনের ধারাগুলো নিয়ে সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগের বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল পুলিশের ক্ষমতার অপব্যবহার।

সম্পাদক পরিষদ মনে করে সাংবাদিকদের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড এবং সচিবালয়ে প্রবেশাধিকার বাতিলের অনাকাঙ্ক্ষিত পদক্ষেপটি অযৌক্তিক। এ ছাড়া সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া একতরফাভাবে অধ্যাদেশ গ্রহণ করা হতাশাজনক এবং কর্তৃত্ববাদী মনোভাবেরও বহিঃপ্রকাশ। প্রবেশাধিকার বাতিলের ঘটনায় প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের মতামত সাপেক্ষে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর খসড়ায় থাকা উদ্বেগের বিষয়বস্তু দূর করতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছে সম্পাদক পরিষদ।

Comments

The Daily Star  | English

Shut down Awami League offices in India: Dhaka to Delhi

Foreign ministry says attention of Bangladesh govt has been drawn to reported establishment of AL offices in Delhi, Kolkata

2h ago