দরিদ্র পরিবারে পুষ্টি যোগাচ্ছে ‘ক্লাইমেট স্মার্ট গার্ডেন’

দক্ষিণ কোলকোন্দ গ্রামে ‘ক্লাইমেট স্মার্ট গার্ডেন’ থেকে শাকসবজি সংগ্রহ করছেন এক নারী। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

মরিয়ম বেগমের স্বামী আব্দুল বারেক পেশায় রাজমিস্ত্রি। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে স্বামীর রোজগারে কোনো রকমে সংসার চলছিল তাদের, কিন্তু কোনো সঞ্চয় করতে পারছিলেন না।

সম্পদ বলতে তাদের রয়েছে ৬ শতাংশ জমি—৪ শতাংশের ওপর বসতভিটা আর ২ শতাংশ থাকতো পতিত। এই ২ শতাংশ জমিতেই মরিয়ম বেগম গড়ে তোলেন 'ক্লাইমেট স্মার্ট গার্ডেন'।

এই বাগানে তিনি উঁচু বেড পদ্ধতিতে জৈবসার ব্যবহার করে সারা বছরই ৬-৭ জাতের শাকসবজি উৎপন্ন করছেন। 'ক্লাইমেট স্মার্ট গার্ডেন' প্রতিদিন ৫০-৬০ টাকার শাকসবজি যোগান দিচ্ছে মরিয়মের পরিবারকে। ফলে, তাদেরকে আর বাজার থেকে শাকসবজি কিনতে হচ্ছে না।

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের দক্ষিণ কোলকোন্দ গ্রামের মরিয়ম বেগমের 'ক্লাইমেট স্মার্ট গার্ডেন' দেখে অনেকেই উদ্বুদ্ধ হয়ে এই পদ্ধতিতে শাকসবজি উৎপন্ন করছেন।

মরিয়ম বলেন, 'ক্লাইমেট স্মার্ট গার্ডেন আমাদের পরিবারের ব্যয় কমিয়েছে, আবার পুষ্টির চাহিদাও মেটাচ্ছে। বাড়তি সবজি বিক্রি করে আর্থিকভাবেও লাভবান হচ্ছি।'

এখন কিছুটা সঞ্চয়ও করতে পারছেন বলে জানান মরিয়ম।

মরিয়মের মতো দরিদ্র পরিবারের ১৮ হাজার ১৯৫ জনকে—যাদের ৭৫ শতাংশ নারী—'ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচারাল' প্রশিক্ষণ দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। বিশেষ করে বসতভিটায় বাগান তৈরি ও শাকসবজি উৎপাদনে উঁচু বেড, আন্ত:ফসল, জৈবসার ব্যবহার, শস্য বৈচিত্র্য ও মালচিং সম্পর্কে তাদের ধারনা দেওয়া হয়।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আর্থিক সহায়তায় জয়েন্ট অ্যাকশন ফর নিউট্রিশন আউটকাম (জানো) প্রকল্পের ব্যবস্থাপনায় এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রকল্পটির কো-ফান্ডিং করেছে অস্ট্রিয়ান ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (এডিএ)।

২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বেসরকারি সংস্থা কেয়ার, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল ও ইউএসডিও রংপুর ও নীলফামারী জেলার সাতটি উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

দক্ষিণ কোলকোন্দ গ্রামের ভ্যানচালক শহিদুল ইসলামের স্ত্রী মিনারা বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বসতভিটায় মাত্র দেড় শতাংশ জমির ওপর ক্লাইমেট স্মার্ট গার্ডেন করেছি। এখান থেকেই সারা বছর শাকসবজি পাচ্ছি। মাঝে মাঝে কিছু বিক্রিও করছি।'

তিনি বলেন, 'এখন আর বাজার থেকে সবজি কিনতে হয় না। এ কারণে কিছুটা সঞ্চয় করার সুযোগ পেয়েছি।'

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের মেলাবর গ্রামের সবিতা রানী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তাদের ৫ শতাংশ জমির দুই শতাংশ পতিত ছিল। প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর সেখানে 'ক্লাইমেট স্মার্ট গার্ডেন' করে শাকসবজি উৎপন্ন করছেন।

'প্রশিক্ষণে যেসব পদ্ধতি শিখেছি তা ব্যবহার করে শাকসবজি উৎপন্ন করছি গত পাঁচ বছর ধরে। বসতভিটায় এই বাগান না থাকলে বাজার থেকে এত দাম দিয়ে শাকসবজি কেনা আমাদের পক্ষে সম্ভব হতো না,' যোগ করেন তিনি।

প্রকল্পটির টেকনিক্যাল অফিসার (নিউট্রিশন সেনসিটিভ এগ্রিকালচার) নিহার কুমার প্রামাণিক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গ্রামের নিম্নআয়ের পরিবারগুলোকে বসতভিটা লাগোয়া ১-২ শতাংশ জমিতে ক্লাইমেট স্মার্ট গার্ডেন করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। তাদেরকে ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচারাল পদ্ধতিতে শাকসবজি উৎপন্ন করার কৌশল শেখানো হয়েছে এবং উন্নত জাতের বীজ দিয়ে সহায়তা করা হয়েছে।'

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বর্তমানে অল্প সময়ে অধিক ফসল উৎপন্ন করার আবশ্যকতা সৃষ্টি হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে কৃষির ধরনও পাল্টে গেছে। ক্লাইমেট স্মার্ট গার্ডেনিং পদ্ধতিতে বসতভিটা লাগোয়া স্বল্প জমিতে শাকসবজি উৎপন্ন করে  পুষ্টির চাহিদা পূরণ ও বাড়তি আয়ের সুযোগ পেয়েছেন গ্রামের নিম্নআয়ের মানুষ।'

Comments

The Daily Star  | English

Dengue cases see sharp rise in early July

Over 1,160 hospitalised in first 3 days, total cases cross 11,000

11h ago