সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা বাতিল হতে পারে

১৯৮৭ সালে এইচএম এরশাদের শাসনামলে সংসদ সদস্যদের খুশি করতে এবং সরকারের প্রতি অনুগত রাখতে প্রথম শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালে বিধানটি বাতিল করা হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার এটি পুনরায় চালু করে।
প্রতীকী ছবি

সংসদ সদস্যদের আমদানি করা গাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। বর্তমানে তাদের গাড়ি আমদানি করতে কোনো শুল্ক দিতে হয় না। গত ১৫ বছরে এই নিয়মের আওতায় ৫ হাজার ১৪৭ কোটি টাকার শুল্ক দিতে হয়নি এ সময়কালের সংসদ সদস্যদের।

এনবিআরের আমদানি তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় ৫৭২টি গাড়ি আমদানি করেছেন সংসদ সদস্যরা।

কাস্টমসের হিসাবে, এসব যানবাহনের মূল্য প্রায় ৩৯৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।

এনবিআর কর্মকর্তারা জানান, সুবিধার আওতায় এসব গাড়ির জন্য সরকার অন্তত ৫ হাজার ১৪৭ কোটি টাকার কর মওকুফ করেছে।

তারা আরও জানান, আজ মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের সময় এই সুবিধা প্রত্যাহারের প্রস্তাব উত্থাপন করবে এনবিআর।

প্রধানমন্ত্রী রাজি হলে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সংসদ সদস্যদের গাড়ির ওপর আমদানি শুল্ক আরোপ করা হতে পারে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাতের যে রেশিও সেটি উন্নত করা প্রচেষ্টার অংশ এই প্রস্তাব।

তিনি বলেন, 'আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের শর্ত অনুযায়ী, আমরা এমন শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়ে যেতে পারব না।'

তিনি জানান, চাল, গম ও সারের মতো ২০-২৫টি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ছাড়া বাকি সব ধরনের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করা উচিত।

এনবিআর কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর সামনে সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানিতে শুল্ক ছাড় সুবিধার সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করবেন। এর অধীনে আইন প্রণেতারা ২০২২-২৩ অর্থবছরে গাড়ি আমদানিতে ৮১৬ কোটি টাকা এবং চলতি অর্থবছরের ৩০ মার্চ পর্যন্ত ৩৫১ কোটি টাকা শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়েছেন।

এনবিআরের ওই কর্মকর্তা বলেন, 'প্রস্তাব অনুযায়ী, সংসদ সদস্যদের আমদানি করা গাড়ির উপর অন্যান্য করের সঙ্গে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করা হবে।'

এনবিআরের তথ্যে দেখা যায়, ২০০৯ সাল থেকে সংসদ সদস্যদের আমদানি করা ৫৭২টি গাড়ির মধ্যে অন্তত ৫৬৩টি জাপান থেকে আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার, রেঞ্জ রোভার ও মিতসুবিশি পাজেরোস। এই গাড়িগুলোর বেশিরভাগের ইঞ্জিন ক্ষমতা ৪.৫ লিটারের উপরে।

একজন আমদানিকারককে ইঞ্জিনের ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে গাড়ি প্রতি ৮৯ থেকে ৮৫০ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়।

এনবিআরের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'এটি একটি সময়োপযোগী এবং সঠিক উদ্যোগ।'

তিনি বলেন, 'বিশ্বের আর কোনো দেশে এই ধরনের সুবিধা আছে বলে আমার জানা নেই।'

'আমরা অতীতে দেখেছি যে কিছু সংসদ সদস্য এই সুবিধার অপব্যবহার করেছেন। তারা তাদের আমদানি করা গাড়ি বিক্রি করে দিয়েছেন এবং কম দামের অন্য গাড়ি কিনে ব্যবহার করেছেন। এই শুল্কমুক্ত আমদানির সুবিধা অবিলম্বে বাতিল করা উচিত,' যোগ করেন তিনি।

এনবিআর কর্মকর্তারা জানান, ১৯৮৭ সালে এইচএম এরশাদের শাসনামলে সংসদ সদস্যদের খুশি করতে এবং সরকারের প্রতি অনুগত রাখতে প্রথম এই শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা দেওয়া হয়েছিল। ১৯৮৮ সালের ২৪ মে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন দেওয়া হয়।

পরবর্তীতে ক্ষমতায় এসে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ এ সুবিধা অব্যাহত রাখে।

অষ্টম সংসদের অনেক সদস্য তাদের বিলাসবহুল গাড়ি বিক্রি করে দেন। যদিও আইন অনুযায়ী, শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানির তিন বছরের মধ্যে সেটি বিক্রি করার অনুমতি নেই।

এই সুবিধার চরম অপব্যবহারের পরিপ্রেক্ষিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালে একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে বিধানটি বাতিল করা হয়।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার এটি পুনরায় চালু করে।

Comments