পশ্চিমবঙ্গের গণমাধ্যমে এমপি আনোয়ারুল আজীম খুনের সংবাদ

বাংলাদেশ ও ভারত—উভয় দেশের পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করছে।

বাংলাদেশের ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনারের মরদেহ এখনো উদ্ধার করতে পারেনি কলকাতা পুলিশ।

গত সপ্তাহে নিখোঁজ হওয়া আনারের হত্যার বিষয়টি গতকাল বুধবার জানা গেছে। এই ঘটনায় ইতোমধ্যে সন্দেহভাজন তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

বাংলাদেশ ও ভারত—উভয় দেশের পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করছে। বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোও।

জিনিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারাই এমপি আনারকে হত্যা করেছেন। পরে তার মরদেহ লুকানোর দায়িত্ব ছিল অন্যদের। তারাও বাংলাদেশি বলে জানতে পেরেছে তদন্তকারীরা। বাংলাদেশে গ্রেপ্তার ওই তিনজন ৩০ এপ্রিল কলকাতায় যান। সেখানে ভাড়া নেওয়া গাড়িতে করে কয়েকদিন তারা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেন। গত ১৩ মে এমপি আনারকে নিয়ে তারা নিউ টাউনের ওই ফ্ল্যাটে যান। পরদিন ১৪ মে আলাদা আলাদা সময়ে ওই ফ্ল্যাট থেকে তারা বের হন। এরপরই তারা বাংলাদেশে ফেরেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বর্তমানে এমপির মরদেহ উদ্ধারের চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা।

এই সময়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজে এমপি আনারকে নিউ টাউনের ওই ফ্ল্যাটে ঢুকতে দেখা গেলেও বের হতে দেখা যায়নি। তাই ওই ফ্ল্যাটে তাকে খুন করে মরদেহ টুকরো টুকরো করে বাইরে কোথাও ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পুলিশের বরাত দিয়ে এমপি আনারকে হত্যা করতে পাঁচ কোটি টাকার চুক্তি হয়েছিল বলেও এই সময়ের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এবিপি আনন্দের প্রতিবেদনে বলা হয়, এক ক্যাবচালককে জিজ্ঞাসাবাদে নতুন তথ্য পাওয়া গেছে। গত ১৩ মে যে গাড়িতে করে এমপি আনার তিনজনসহ নিউ টাউনের ওই বাসায় যায়, পরদিন ওই গাড়িতে করেই তিনজন একটি ট্রলি ব্যাগ নিয়ে বের হন। সেই সময় আনারকে দেখা যায়নি। পুলিশের ধারণা, সেই ট্রলিতেই আনারের দেহাংশ ছিল।

এমপি আনারকে নিয়ে হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দাবি করা হচ্ছে- এক সময় আনোয়ারুল ঝিনাইদহ এলাকার অপরাধীদের 'গডফাদার' হয়ে উঠেছিলেন। হুন্ডি, অস্ত্র ও মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ইন্টারপোল থেকে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল ২০০৬ সালে। ২০০৯ সালে তার নাম ইন্টারপোলের তালিকা থেকে বাদ পড়ে। এরপর ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচনে জিতে প্রথমবার এমপি হন আনার। এরপর পরপর তিনবার ঝিনাইদহ-৪ আসনে জয়ী হন তিনি। এর আগে অবশ্য একটা সময়ে আনোয়ারুলের বিরুদ্ধে ২৪টি মামলা ছিল। সীমান্তপথে চোরাচালানের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন তিনি।

অন্তত এক মাস আগে ঝিনাইদহে তাকে খুনের পরিকল্পনা শুরু করা হয় বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।

বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আনার গত ১৩ মে নিউ টাউনের ফ্ল্যাটে ঢোকার ২০ মিনিটের মধ্যেই তাকে খুন করা হয়। মৃত্যু নিশ্চিত করতে তার মাথায় ভারী বস্তু দিয়ে আঘাত করা হয়। দেহে যাতে পচন না ধরে, সেজন্য দেহ টুকরো টুকরো করে কেটে ফ্রিজে রেখে দেওয়া হয়েছিল।

আনারের হত্যাকাণ্ড নিয়ে আনন্দবাজার অনলাইনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিকিৎসার জন্য কলকাতায় গিয়ে প্রথমে বরাহনগরে এক বন্ধুর ফ্ল্যাটে উঠেছিলেন আনার। দুই দিন সেখানে থাকার পর এক দিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফিরে আসেননি তিনি। পরে তার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। অভিযোগ পাওয়ার পরেই তদন্ত শুরু করে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট। পরে এই মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে কলকাতা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এমপি আনার হত্যার ঘটনা তদন্তে স্থানীয় পুলিশ নিউ টাউনে যে ফ্ল্যাটের খোঁজ পান, সেখানে রক্তের দাগ পাওয়া গেছে। সেখান থেকে ইতোমধ্যে নমুনা সংগ্রহ করেছেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা।

তদন্তকারী কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, নিউ টাউনের ওই ফ্ল্যাটেই ছিলেন এমপি আনার। কীভাবে তিনি ওই ফ্ল্যাটে গেলেন, তা জানতে ওই এলাকার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, বরাহনগর থেকে একটি গাড়িতে তিনি নিউ টাউনের ওই ফ্ল্যাটে পৌঁছান। সিআইডি ইতোমধ্যেই সেই গাড়ির চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। আবাসনের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে গোয়েন্দারা একটি ক্যাবের খোঁজ পান। ওই ক্যাবে করে সন্দেহজনক কয়েকজনকে সেই বাসা থেকে যেতে দেখা যায়। তাদের তথ্য সংগ্রহ করতেই সেই ক্যাবচালককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন গোয়েন্দারা। ওই ক্যাবে কারা ছিলেন, কখন তা ভাড়া করা হয়, কোথায় তাদের নামানো হয়, ক্যাবে থাকাকালীন যাত্রীরা কী বলছিলেন, তাদের সঙ্গে কী কী ছিল—এসব বিষয়ে জানতেই ক্যাবের সন্ধানে ছিল সিআইডি।

বাংলাদেশের গোয়েন্দা পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এমপি আনার ও তার বন্ধু বাংলাদেশি-মার্কিন নাগরিক মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান ওরফে শাহীন কলকাতায় স্বর্ণের চোরাচালান করতেন বলে অভিযোগ আছে। তাকে প্রধান সন্দেহভাজন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

সূত্রের ভাষ্য, সম্প্রতি ব্যবসায়িক বিষয় নিয়ে দুজনের মধ্যে মনোমালিন্য হয় এবং আনারকে হত্যার জন্য মঙ্গলবার রাতে ঢাকায় গ্রেপ্তার হওয়া অপর সন্দেহভাজন আমানউল্লাহকে আক্তারুজ্জামান ভাড়া করেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

এরপর আমানউল্লাহ এই কাজে সহযোগী মুস্তাফিজুর ও ফয়সালনকে নিয়োগ দেন। গতকাল তাদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

Comments