প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে সীমান্ত-নদী-বিদ্যুৎখাতে ১০ সমঝোতা স্মারক সই

‘চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর যাতে ভারতের উত্তর-পূর্ব, বিশেষ করে পূর্বাঞ্চলের জন্য ব্যবহার করা যায়, সে বিষয়ে তাদের আগ্রহ ও আমাদের অগ্রগতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।’
শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি। ছবি: সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাদের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে রাজনৈতিক সংহতি ও সহযোগিতার নবক্ষেত্র উন্মোচন এবং দুই দেশের সম্পর্ক যে নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে তাকে আরও এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।

শনিবার বিকেলে ভারতের নয়াদিল্লিতে হোটেল তাজ প্যালেসে সাংবাদিকদের এ কথা জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন।

শনিবার সন্ধ্যায় ভারতের রাষ্ট্রপতি এবং উপ-রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাতের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, গত ৯ জুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শপথ গ্রহণে যোগদানের পর আবারও তার আমন্ত্রণে অত্যন্ত কম সময়ের ব্যবধানে প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফরে আসা সরকারপ্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২১-২২ জুনের এ সফর অত্যন্ত সফল।

তিনি বলেন, 'দুদেশের প্রধানমন্ত্রী তাদের মন্ত্রিপরিষদ সদস্য ও কর্মকর্তাদেরসহ দলগতভাবে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা শেষে একান্ত বৈঠক করেন। বৈঠকে অত্যন্ত আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশে দ্বিপক্ষীয় সব বিষয়ে আলোচনা হয়।'

এই সফরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১০ সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।

দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক শেষে বাংলাদেশ-ভারত ডিজিটাল পার্টনারশিপ, বাংলাদেশ-ভারত গ্রিন পার্টনারশিপ, সমুদ্র সহযোগিতা ও সুনীল অর্থনীতি, ভারতের ইন-স্পেস এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সমঝোতা, বাংলাদেশ ও ভারতের রেল মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সংযোগ সংক্রান্ত, বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট ও ভারতের ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফিক ইনস্টিটিউটের মধ্যে  গবেষণা সহযোগিতা, কৌশলগত ও অপারেশনাল খাতে সামরিক শিক্ষা সহযোগিতায় ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজ, ওয়েলিংটন-ইন্ডিয়া এবং মিরপুর ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের মধ্যে নতুন সমঝোতা স্মারক সই এবং স্বাস্থ্য ও ওষুধসংক্রান্ত সমঝোতা নবায়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও প্রশমনে ভারতের ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি এবং বাংলাদেশ ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যমান সমঝোতা নবায়ন এবং মৎস্যসম্পদের উন্নয়নে বিদ্যমান সমঝোতা নবায়নসহ মোট ১০টি সমঝোতা সই হয়।

দুদেশের মধ্যে সংযোগ বা কানেক্টিভিটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর যাতে ভারতের উত্তর-পূর্ব, বিশেষ করে পূর্বাঞ্চলের জন্য ব্যবহার করা যায়, সে বিষয়ে তাদের আগ্রহ ও আমাদের অগ্রগতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।'

সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে রাজনৈতিকভাবে দুদেশের ঐক্যমতের অভাব নেই জানিয়ে তিনি বলেন, 'এরপরও যে ঘটনাগুলো ঘটছে, সেগুলোও যাতে একদম কমানো যায়, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।'

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৫৪টি অভিন্ন নদী আছে। এগুলোর নাব্যতা রক্ষাসহ সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা, তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলা, বন্যা দুর্যোগ মোকাবিলা এবং পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়েও গুরুত্ব সহকারে আলোচনা হয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, 'দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী তাদের সঙ্গে বিদ্যুৎখাতে সহযোগিতার প্রসার, ভারতের মধ্য দিয়ে নেপাল ও ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানিতে সহায়তা এবং ভারত যে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের নতুন সঞ্চালন লাইন করছে, সেটি থেকে কীভাবে সহায়তা পাওয়া যেতে পারে সে বিষয়ে আলোকপাত করেন।'

'এ সময় পেঁয়াজ, তেল, গম, চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানিতে বাংলাদেশের জন্য নির্দিষ্ট কোটা সংরক্ষণ ও আমদানি যাতে বন্ধ না হয়, সে বিষয়েও আমরা আলোচনা করেছি', বলেন তিনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, 'ব্রিকস সদস্য বা অংশীদার যেকোনো পদে আমরা ভারতের সমর্থন চেয়েছি এবং তারা ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। পাশাপাশি বিমসটেক, ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনসহ বহুপাক্ষিক ফোরামগুলোতে অবস্থান শক্তিশালী করা, অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়েও আলোচনা ছিল ইতিবাচক।'

তিনি বলেন, বাংলাদেশে আশ্রিত প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনায় চীনের ভূমিকা বৃদ্ধির কথাও এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফরে এটি আলোচনা করবেন বলেছেন।

ভিসা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ জানান, বাংলাদেশিদের জন্য ভারত বছরে প্রায় ২০ লাখ ভিসা প্রদান করে। মেডিকেল ভিসা ত্বরান্বিত করতে ও অন্যান্য ভিসার অযথা বিলম্বরোধে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাদের মিশনগুলোকে নতুন নির্দেশনা দিয়েছেন।

 

Comments