২১১০ কোটি টাকার রাজবাড়ী-টুঙ্গিপাড়া রেললাইনে ট্রেন চলে একটি

বাংলাদেশ রেলওয়ে ২০১০ সালে কোনো সম্ভাব্যতা জরিপ না করেই গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়াকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে একটি প্রকল্প হাতে নেয়।

দুই হাজার ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি শেষ হয় ২০১৮ সালে—নির্ধারিত সময়ের চেয়ে পাঁচ বছর পরে। প্রাক্কলিত বাজেটের চেয়ে এর জন্য খরচ হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ।

অথচ, এই রেললাইনটি ব্যবহার করে গোপালগঞ্জ-রাজবাড়ী-রাজশাহী রুটে একটি মাত্র যাত্রীবাহী ট্রেন পরিচালনা করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জনবলের অভাবে এই সেকশনের চারটি স্টেশন চালুই করতে পারেনি। ফলে, এসব স্টেশনে রেলওয়ে কর্মীদের জন্য তৈরি করা বেশ কয়েকটি ভবন এখনও অব্যবহৃতই রয়ে গেছে। সময়ের সঙ্গে সেগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে প্রকল্পের প্রভাব মূল্যায়ন সম্পর্কে। সেখানেই উঠে এসেছে এসব পর্যবেক্ষণ।

৭৫ কিলোমিটার পুরানো রেললাইন সংস্কার এবং ৩২ কিলোমিটার নতুন রেলট্র্যাক নির্মাণের জন্য এক হাজার ১০১ কোটি ৩২ লাখ টাকায় প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছিল।

আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঠিকাদাররা বড় বড় পাথর ব্যবহার করে রেললাইনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ করে ফেলেছে।

এতে আরও দেখা গেছে, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব এবং অননুমোদিত লেভেল ক্রসিংয়ের কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বেড়েছে।

পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, 'সম্ভাব্যতা জরিপ ছাড়া কোনো প্রকল্প হাতে নেওয়া ভালো উদাহরণ হতে পারে না।'

গতকাল সোমবার দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'যথাযথ জরিপ ছাড়া ট্র্যাফিকের চাহিদা, স্টেশনগুলোর কোথায় হলে ভালো হবে সেটা নির্ধারণ এবং রেললাইনের সম্ভাব্য সর্বোত্তম সংযোগ সম্পর্কে জানা সম্ভব নয়। কোনো জরিপ ছাড়া একটি প্রকল্পে এত বিপুল বিনিয়োগ নিশ্চিতভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ।'

বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, 'ট্রাফিক চাহিদা জরিপ না করেই রেলওয়ে এই প্রকল্পে অর্থ বিনিয়োগ করেছে। এখন তারা এই লাইনে একটি মাত্র ট্রেন পরিচালনা করছে। স্বাভাবিকভাবেই যে পরিমাণ বিনিয়োগ এখানে হয়েছে তার বিপরীতে পর্যাপ্ত রিটার্ন আসছে না।'

২০১৯ সালে চালু হওয়া টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস টুঙ্গিপাড়ার গোবরা থেকে রাজবাড়ী হয়ে রাজশাহী পর্যন্ত চলাচল করে।

অধ্যাপক হাদিউজ্জামান বলেন, 'সঠিক জরিপ করা হলে বাংলাদেশ রেলওয়ে এই অর্থ অন্য কোনো প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে পারত।'

তার ভাষ্য, সঠিক জরিপ হলে এই প্রকল্প আরও কয়েক বছর পরে হাতে নেওয়ার পরামর্শ আসতো।

প্রকল্প

১৯৩২ সালে নির্মিত রাজবাড়ীর কালুখালী থেকে গোপালগঞ্জের ভাটিয়াপাড়া ঘাট পর্যন্ত রেললাইনটি ১৯৯৭ সালে অকার্যকর হয়ে পড়ে।

জাতির পিতার জন্মস্থান টুঙ্গিপাড়াকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনার জন্য ৭৫ দশমিক পাঁচ কিলোমিটার অংশ সংস্কার এবং কাশিয়ানী ও গোপালগঞ্জের মধ্যে ৩২ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার রেললাইন নতুন করে নির্মাণের জন্য ২০১০ সালে একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার।

আইএমইডির নথি অনুযায়ী, প্রকল্পটি ২০১৩ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ৩৩০ শতাংশ এবং এর ব্যয় বেড়েছে ৯১ দশমিক ৬১ শতাংশ।

আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় ও ব্যয় বৃদ্ধির কারণ হচ্ছে সম্ভাব্যতা জরিপ ছাড়াই এটি শুরু করা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, নয়জন প্রকল্প পরিচালক প্রকল্পটি তদারকি করেছেন। ঘন ঘন প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তন হওয়ায় এর কাজের অগ্রগতিও বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

আইএমইডি জানিয়েছে, রেললাইনটি ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে না। রেললাইন চালুর পর পাঁচ বছর পার হয়ে গেছে, কিন্তু বাংলাদেশ রেলওয়ে এখনও সেখানে ওয়েম্যান (ট্র্যাক রক্ষণাবেক্ষণ কর্মী) মোতায়েন করতে পারেনি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পাঁচটি স্টেশনের প্রতিটিতে তিনটি করে স্টাফ কোয়ার্টার তৈরি করা হলেও সেগুলো বেহাল দশায় পরে আছে।

এ ছাড়া, কাশিয়ানী-গোপালগঞ্জ-টুঙ্গিপাড়া রুটের চারটি স্টেশন জনবলের অভাবে বন্ধ রয়েছে।

রেললাইনে ব্যবহৃত পাথর ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বড় এবং পাথরের পরিমাণও পর্যাপ্ত নয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার শাহাদাত আলী জানান, প্রকল্পটি হাতে নেওয়ার সময় তিনি মহাপরিচালক ছিলেন না। কাজেই এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করবেন না।

তিনি জানান, তাদের লোকবল, লোকোমোটিভ এবং কোচের ঘাটতি রয়েছে। এ কারণেই সব স্টেশন চালু করতে  পারছেন না এবং এই লাইনে ট্রেন বাড়াতে পারছেন না।

এই প্রকল্পে বিনিয়োগ থেকে রিটার্ন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এটা সত্য যে আমরা এখন বিনিয়োগের অনুপাতে পর্যাপ্ত রিটার্ন পাচ্ছি না। তবে আমরা আরও ট্রেন পরিচালনা করতে পারলে প্রত্যাশিত রিটার্ন পাব। এর জন্য আরও কিছু সময় লাগতে পারে।'

Comments

The Daily Star  | English

SWISS Banks: Funds linked to Bangladesh hit 3-year high

Bangladeshi-linked funds parked in Swiss banks surged to 589.5 million Swiss francs, or about Tk 8,800 crore, in 2024, their highest level in three years, according to data released by the Swiss National Bank (SNB) yesterday.

8h ago