বন্যা মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি’র সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেক) এর কার্যনির্বাহী কমিটির (২৪-২৫ অর্থবছরের) প্রথম সভায় সভাপতিত্বকালে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন। 
ছবি: বাসস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে সম্ভাব্য বন্যা মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ করতে আজ বেসামরিক প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ দিয়েছেন।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি'র সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেক) এর কার্যনির্বাহী কমিটির (২৪-২৫ অর্থবছরের) প্রথম সভায় সভাপতিত্বকালে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন। 

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালাম বলেন, 'আগামী দিনে, সম্ভবত আগস্টে, দেশে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের এ পূর্বাভাসের ভিত্তিতে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন।'

এ ব্যাপারে তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে সম্ভাব্য বন্যা ও এর প্রভাব মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণে নির্দেশ দিয়েছেন।

পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিৎ কর্মকার জানান, এর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী স্পষ্টভাবে বলেন যে, আগস্ট মাসে সারা দেশে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। ওই সময় থেকে দেশে টানা বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বাড়ার প্রবণতা রয়েছে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বন্যার প্রভাব ও ধ্বংসযজ্ঞ থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করতে বেসামরিক প্রশাসন ও মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে বন্যা ও এর প্রভাব মোকাবেলায় প্রশাসনের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন।

পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব জানান, সভায় মোট ১১টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পগুলোর আনুমানিক মোট ব্যয় ৫,৪৫৯.৮৭ কোটি টাকা।
তিনি বলেন, "মোট প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে ৫,২১৪.৩৪ কোটি টাকা আসবে। প্রকল্প সহায়তা থেকে ১৪০.৪৪ কোটি টাকা ও বাকি ১০৫.০৯ কোটি টাকা সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে আসবে।"

সিনিয়র সচিব বলেন, অনুমোদিত ১১টি প্রকল্পের মধ্যে সাতটি নতুন প্রকল্প ও চারটি সংশোধিত প্রকল্প। বৈঠকে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যগণ ও সংশ্লিষ্ট সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন।

সভায় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া একগুচ্ছ নির্দেশনা প্রকাশ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নতুন অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করতে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও নির্বাহী সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছেন।  কারণ, এই মৌসুমে বর্ষা ও বৃষ্টিপাত প্রায়ই প্রকল্পের ভৌত কাজ ক্ষতিগ্রস্ত করে।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে মন্ত্রী বলেন, "প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যদি তাড়াতাড়ি করা যায়- তাহলে বর্ষাকাল বিবেচনা করে মূল ভৌত কাজও একটু আগে করা যেতে পারে।"

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা প্রকল্প পরিচালকদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেওয়ার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। গুণগত কাজের স্বার্থে একজন প্রকল্প পরিচালক একাধিক প্রকল্পের দায়িত্বে থাকতে পারবেন না।

প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ত্রি-ফসলি জমির পাশাপাশি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় যাতে উন্নয়ন প্রকল্প তৈরি না হয়-সেজন্য বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।

ঢাকা অঞ্চলে ১৪৫.৭৩ কোটি টাকার কৃষি উন্নয়নের অনুমোদিত প্রকল্পের বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নগরায়নের ফলে রাজধানীর আশেপাশের অধিকাংশ কৃষিজমি বাড়ি তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি রাজধানীর আশপাশের এসব এলাকায় কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।

দেশের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশ পুলিশের জন্য থানায় প্রশাসনিক-কাম-ব্যারাক ভবন নির্মাণের জন্য ১,৬২৪.০৫ কোটি টাকার প্রকল্প সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, কিছু থানা বা থানার অবকাঠামো বিস্তৃত।

দেশের বাকি থানার অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য আরেকটি প্রকল্প আনতে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন। পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ডক্টর মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়া বলেন, দেশের ৬৩৯টি থানার মধ্যে ইতোমধ্যে ১৭৭টি থানার উন্নয়ন করা হয়েছে এবং নতুন এই প্রকল্পের আওতায় ১০৭টি থানার উন্নয়ন করা হবে।

তিনি বলেন, সারা দেশের বাকি ৩৫৫টি থানার উন্নয়নে আরেকটি প্রকল্প গ্রহনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।এমদাদ বলেন, গ্রাম ও শহরের অবস্থান বিবেচনা করে থানাগুলোতে ৯ ধরনের ভবন নির্মাণ করা হবে।

পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিৎ কর্মকার বলেন, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নতুন বাজেটের যাতে আরও যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হয় সেজন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ দিয়েছেন। সেইসাথে নির্বাহী সংস্থাগুলোকে প্রকল্প বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার নির্ণয় করার নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি জানান, সারা বছরের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনামন্ত্রী আগামী ৪ জুলাই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সকল সচিবের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন।

সত্যজিৎ জানান, প্রধানমন্ত্রী সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের শেষ সময়ে অতিরিক্ত অর্থায়নে সম্পন্ন হওয়া প্রকল্পগুলোর উপর একটি সমীক্ষা চালানোরও নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি জানান, ৪র্থ হেলথ সেক্টর সাপোর্ট প্রোগ্রাম ৩০ জুন শেষ হওয়ায় স্বাস্থ্য খাতে রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তার পরিকল্পনার অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, তারা প্রেক্ষিত পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করার চেষ্টা করছেন, যার অধীনে বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশে পরিণত হবে। তখন দেশের মাথাপিছু আয় ১২,৫০০ ডলারে পৌঁছাবে।

তিনি বলেন, বছরের পর বছর ধরে সরকারের আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় অনেক বেড়েছে এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় আরও জোরদার হয়েছে। সালাম বলেন, সরকার এখন যেভাবে কাজ করছে, তাতে একদিন 'ক্ষুধা' আর 'দারিদ্র' কথাগুলো অতীত হয়ে যাবে।

বর্ষা মৌসুম বিবেচনায় অর্থবছর পরিবর্তনের বিষয়ে সরকারের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিভিন্ন মহল থেকে এটি পরিবর্তনের দাবি উঠলেও তা পরিবর্তন হয়নি। আশা করছি যে, এ রকম কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে, আমরা আমাদের কাক্সিক্ষত গতিতে এগিয়ে যেতে পারব।

পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্বলতা ও প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো সংশোধনের জন্য তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন।

একনেক সভায় অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্পগুলো হলো-বরগুনা জেলায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, মুন্সীগঞ্জ জেলায় ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, ১০৫.০৯ কোটি টাকা ব্যয়ে রায়পুরা ১২০ মেগাওয়াট (এসি) পিক গ্রিড টাইড সোলার পাওয়ার প্লান্টের জন্য জমি অধিগ্রহণ, অতিরিক্ত ১৮৩.৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বিসিক প্রিন্টিং ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট (দ্বিতীয় সংশোধিত), ৫৬২.১১ কোটি টাকা ব্যয়ে কিশোরগঞ্জ, জয়পুরহাট ও চট্টগ্রামে শিশু বিকাশ কেন্দ্র স্থাপন, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, ১ম সংশোধিত ৮১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে, ১,৩৯৬.৫৮ কোটি টাকা দিয়ে কুমিল্লা-সালদা-কসবা সড়ককে জাতীয় মহাসড়কে উন্নীত করা, শহরগুলোর ভবন সংরক্ষণ, অতিরিক্ত ১৬৫.৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে (দ্বিতীয় সংশোধিত) বুড়িগঙ্গা, তুরগঙ্গার তীরে পিলার, নদী তীর সুরক্ষা, ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ, অতিরিক্ত ৯৪.৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ২য় সংশোধিত শীতলক্ষ্যা ও বালু নদী (২য় ফেজ)।

 

Comments

The Daily Star  | English

ICT to begin trial for July-August 'massacre' on Thursday

ICT Chief Prosecutor says the trial of individuals involved in crimes against humanity during the uprising would be prioritised

28m ago