পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের অনুমতি পেতে পারেন সরকারি কর্মচারীরা

সরকারি কর্মচারীদের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের অনুমতি দিতে পারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়

কয়েক দশকের পুরোনো নিয়মের বিপরীতে সরকারি কর্মচারীদের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের অনুমতি দিতে পারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয় সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯-এর একটি খসড়া সংশোধনী আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে, যা যাচাইয়ের পর ফেরত এসেছে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে, সরকারি কর্মচারীরা শেয়ারবাজারে নিবন্ধিত যেকোনো কোম্পানির প্রাথমিক শেয়ার বা বন্ড কিনতে বা বিক্রি করতে পারবেন। তবে খসড়া আইন অনুযায়ী তারা অফিস সময়ে এই ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত হতে পারবেন না বলে জানা গেছে।

বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, সরকারি কর্মকর্তারা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে পারেন না।

সরকার ছয় বছর ধরে বিদ্যমান সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ সংশোধনের চেষ্টা করছে, তবে এখনও কাজ শেষ হয়নি।

সম্প্রতি এ উদ্যোগে গতি এসেছে। তবে এটি এমন এক সময়ে হচ্ছে যখন কিছু সরকারি কর্মকর্তার দুর্নীতির খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে।

সরকারি কর্মচারীদের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের অনুমতি না থাকলেও তাদের অনেকেই তা করছেন বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।

বিপুল সম্পদ নিয়ে বিতর্কের মধ্যে সম্প্রতি নজরদারিতে আসা এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমান পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে সম্পদ গড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মতিউরের ঘটনা দেখিয়ে দিয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপর প্রভাবশালী ব্যক্তিরা কীভাবে প্রভাব খাটিয়ে অর্থ উপার্জনের মেশিনে পরিণত করতে পারে।

তারা বলেন, মতিউর ইনসাইডার ইনফরমেশন নিয়ে শেয়ারবাজারে এসেছিলেন, যা পুঁজিবাজারের নিয়ম অনুযায়ী বেআইনি।

সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ফিরোজ মিয়া গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, সরকারি কর্মচারীদের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের অনুমতি দেওয়া হলে দুর্নীতি কয়েকগুণ বাড়বে। পুঁজিবাজারে লাভ-ক্ষতি দুটোই আছে। যদি কোনো কর্মকর্তা ক্ষতির সম্মুখীন হযন তবে তিনি দুর্নীতির দিকে ঝুঁকতে পারেন। এ ধরনের সুযোগ মোটেও দেওয়া উচিত নয়।'

সরকারি কর্মচারীরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সুবিধা পাওয়ার জন্য আইন প্রণেতা, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং সরকারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের তদবির করতে পারেন না।

খসড়াতে এখন এমন একটি বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যাতে বলা হয়েছে যে তারা কোনো সুবিধা পাওয়ার জন্য কোনো ইলেকট্রনিক বার্তাও পাঠাতে পারবেন না।

কর্মকর্তারা বলছেন, তদবিরের পথ বন্ধ করতেই খসড়ায় এই বিধানের কথা বলা হয়েছে।

খসড়ায় বলা হয়েছে, বিধিমালা অনুমোদন দিলে এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে সরকারি চাকরিজীবীরা অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের পদে প্রার্থী হতে পারবেন।

এতে আরও বলা হয়েছে, নিয়ম লঙ্ঘন করে তারা কোনো প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যোগ দিতে পারবেন না এবং অনুমোদন ছাড়া কোনো সংগঠনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে কোনো বিবৃতি দিতে পারবেন না।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই বিধান রেখে খসড়াটি চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে সরকারি কর্মচারীদের যে কোনো সংবাদ সম্মেলন করার জন্য অনুমতি নিতে হবে।

খসড়ায় সরকারি চাকরিজীবীদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিদেশ ভ্রমণের আমন্ত্রণ পেতে বা বিদেশে প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য কোনো বিদেশি মিশন বা সাহায্য সংস্থাযর কাছে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।

বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী সরকারি কর্মচারীদের কোনো বিনোদন ক্লাবের সদস্য হতে বাধা নেই।

তবে 'বোট ক্লাব' এর উদ্ধৃতি দিয়ে একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, অভিনেত্রী পরীমনিকে নিয়ে জড়িত একটি ঘটনা সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে কারণ একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ক্লাবটির সভাপতি ছিলেন।

খসড়ায় একটি বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যাতে সরকারি কর্মচারীরা এমন কোনো ক্লাবের সদস্য যেন না হতে পারেন যেখানে 'অনৈতিক কার্যকলাপে' লোকজন লিপ্ত হয়।

সূত্র জানায়, বিদ্যমান বিধিমালায় সরকারি কর্মচারীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় কী করতে পারবেন বা পারবেন না তা স্পষ্ট করে বলা নেই।

তবে খসড়ায় বলা হয়েছে, সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা-২০১৮-এর লঙ্ঘন করলে সরকার তার কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে।

জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, খসড়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, তবে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে।

'আমি বলতে পারি যে একটি আধুনিক এবং সময় উপযোগী আচরণবিধি প্রণয়ন করা হবে,' তিনি বলেন।

Comments

The Daily Star  | English

Grandmaster Ziaur Rahman no more after suffering heart attack mid-match

Grand Master Ziaur Rahman passed away from a heart attack while competing in the 12th round match of the National Chess Championship in Dhaka today.

28m ago