আগামীকাল সচিব সভা, এজেন্ডায় ‘শুদ্ধাচার ও সুশাসন’

বাংলাদেশ সচিবালয়। স্টার ফাইল ছবি

শুদ্ধাচার ও সুশাসনসহ পাঁচটি বিষয়কে আলোচ্যসূচিতে রেখে সচিব সভা ডেকেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সভায় সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ এবং সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা-১৯৭৯ এর সংশোধন সংক্রান্ত বিষয়গুলো প্রাধান্য পেতে পারে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরকারের সব সচিবদের নিয়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় সভাটি হবে। সরকারি কর্মচারীদের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে ব্যাপক আলোচনার প্রেক্ষাপটে এই সভাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন সচিবালয়ের কর্মকর্তারা।

সচিব সভায় সভাপতিত্ব করবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন। সচিবালয়ের ৬ নং ভবনের মন্ত্রিসভা কক্ষে সভাটির আয়োজন করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি সব মন্ত্রণালয়ের সচিবদের পাঠানো হয়েছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এটি দ্বিতীয় সচিব সভা। সর্বশেষ গত ৫ ফেব্রুয়ারি সচিব সভা হয়েছিল। ওই সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন। তখন যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছিল সেগুলো বাস্তবায়ন পর্যালোচনাও হবে আগামীকালের সভায়।

সাধারণত বছরে একবার সচিবসভা হয়। এতে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থাকেন। তবে প্রয়োজন অনুযায়ী কোনো বছর একাধিকবার, আবার কোনো বছর সচিব সভা না হওয়ারও নজির রয়েছে।

সরকারি কর্মচারীদের দুর্নীতি অনিয়ম নিয়ে সংসদ এবং সংসদের বাইরে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। ঠিক এই সময়ে সচিব সভায় গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা হিসেবে আছে 'শুদ্ধাচার ও সুশাসন'। তাই এই বিষয়টি আলোচনায় গুরুত্ব পাবে বলে ধারণা করছেন দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশব্যাপী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানুষের আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছেন। বিশেষ করে পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, কর কমিশনার মতিউর রহমানের মতো কর্মকর্তাদের ব্যাপক দুর্নীতির খবর বের হওয়ার পর সৎ কর্মকর্তারা বিব্রত বোধ করছেন।

'সম্প্রতি সরকারি একটি হাসপাতালে পরিবারের সদস্যকে চিকিৎসা করাতে যাওয়া প্রশাসনের মধ্যম স্তরের এক কর্মকর্তার পরিচয় জানতে পেরে পাশের একজন মন্তব্য করেন, আপনাদের আবার সরকারি হাসপাতালে আসতে হয় নাকি?' এমন পরিস্থিতি উল্লেখ করে এক উপসচিব ডেইলি স্টারকে বলেন, দুর্নীতিবাজদের জন্য ভালো অফিসারদেরও ভালো থাকার উপায় নেই, অবস্থা এখন সেই পর্যায়ে চলে গেছে। সরকারের উচিত এ বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অতিরিক্ত সচিব ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব দুর্নীতি অনিয়মের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর, কিন্তু বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ দুর্নীতি দমনে যথেষ্ট উদ্যোগ নিচ্ছে না। এমন মন্ত্রণালয়ও আছে যে, দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরও অভিযুক্তকে ক্ষমা করে দেওয়া হচ্ছে।' এই কর্মকর্তার মতে, এসব বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব কঠোর নির্দেশনা দেবেন, এমনটাই আশা করা হচ্ছে।

মন্ত্রণালয়গুলোর অবহেলার কারণে দুর্নীতি উৎসাহিত হচ্ছে বলে কিছুদিন আগে মন্তব্য করে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান বলেছেন, মন্ত্রণালয়গুলো দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।

সচিব সভা সম্পর্কে মঙ্গল ও বুধবার অন্তত চার জন উপসচিব ও যুগ্মসচিবের সঙ্গে কথা বলেছে ডেইলি স্টার। সচিবদের কাছ থেকে তারা কী বার্তা চান, এমন প্রশ্নের জবাবে এক উপসচিব বলেন, সাধারণত কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও সচিবদেরকে কড়া পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না। আমরা চাই শুধু অভিযোগ নয়, মন্ত্রণালয়ই তাদের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বের করে শাস্তি দিক, গণমাধ্যমকে জানাক, যাতে কেউ দুর্নীতি করার সাহস না পায়।

এ বিষয়ে এক যুগ্মসচিব বলেন, অনেক ক্ষেত্রে ভালো পদক্ষেপ নিতে চাইলেও সচিবরা পারেন না, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে আটকে যেতে হয়। তবে সচিব পর্যায় থেকে যদি শক্ত অবস্থান নেওয়া হয় তাহলে অনেকাংশেই দুর্নীতি প্রতিরোধ সম্ভব। কিন্তু সবার আগে রাজনৈতিক সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English
shutdown at Jagannath University

Students, teachers call for JnU 'shutdown'

JnU students have continued their blockade at the capital's Kakrail intersection for the second consecutive day

3h ago