রাজশাহীতে শতবর্ষী গাছ না কেটে শহীদ মিনার নির্মাণের দাবিতে ১৪ নাগরিক চিঠি

রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজের বিপরীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে রাজশাহী জেলা পরিষদ। সে জন্য কাটা পড়বে এই গাছগুলো। ছবি: প্রথম আলোর সৌজন্যে

রাজশাহীতে শতবর্ষী গাছ না কেটে শহীদ মিনার নির্মাণের অনুরোধ জানিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও রাজশাহীর স্থানীয় সরকারের কাছে চিঠি দিয়েছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।

আজ রোববার বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব; পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়; স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব; রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে এই চিঠি দেওয়া হয়েছে।

চিঠিতে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উল্লেখ করেন, 'রাজশাহী মহানগরীর সোনাদীঘি ও হেতেম খাঁ এলাকার মধ্যবর্তী রাজারহাতা অঞ্চলে রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজের বিপরীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য নির্ধারিত স্থানে বিদ্যমান ১০টিরও বেশি শতবর্ষী গাছ কাটার উদ্যোগ নিয়েছে রাজশাহী জেলা পরিষদ।'

'ইতোমধ্যে জেলা পরিষদ কর্তৃক কাটার জন্য শতবর্ষী গাছগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে। চিহ্নিত গাছগুলোর মধ্যে কোনো কোনোটির বয়স ১০০ বছর, আবার কোনো কোনো গাছের বয়স তারও অধিক।'

তারা উল্লেখ করেন, 'শতবর্ষী এ গাছগুলো রাজশাহীবাসীর ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত। প্রায়শই অত্যন্ত তাপদাহে বিপর্যস্ত এ নগরবাসীর স্বস্তির আশ্রয় হিসেবে গাছগুলোর ভূমিকা অনস্বীকার্য। পরিবেশ, প্রতিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও জনজীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে এ গাছগুলো।'

তাদের মতে, 'স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর রাজশাহী শহরে একটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এমন একটি শহীদ মিনার নির্মিত হলে নতুন প্রজন্ম ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগের সঙ্গে পরিচিত হবে। তবে তা জনগুরুত্বপূর্ণ ও শতবর্ষী গাছের বিনিময়ে হতে পারে না। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় শতবর্ষী এ গাছগুলোর রেখে শহীদ মিনার নির্মাণ করাই হবে যৌক্তিক উদ্যোগ।'

চিঠিতে বলা হয়েছে, 'গাছ তাপমাত্রা কমাতে, বায়ুমণ্ডল শীতল রাখতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। বিশেষজ্ঞরা তাপমাত্রা সহনীয় রাখতে ও তাপদাহ কমাতে বারবার গাছ লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন এবং গাছ কাটাকে নিয়ন্ত্রণ করার দাবি জানিয়েছেন।'

'কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টি এম দাশের গবেষণা অনুযায়ী, ৫০ বছর ধরে বেঁচে থাকা একটি গাছ ৩১ হাজার ২৫০ ডলার মূল্যের অক্সিজেন তৈরি করতে, ৬২ হাজার ডলার মূল্যের বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে, ৩১ হাজার ২৫০ ডলার মূল্যের সমান মাটির ক্ষয় নিয়ন্ত্রণ ও মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করতে, ৩৭ হাজার ৫০০ ডলার মূল্যের পানি পুনঃব্যবহার উপযোগী করতে এবং প্রাণীদের জন্য ৩১ হাজার ২৫০ ডলার মূল্যের আবাসন দিতে সক্ষম হয়ে থাকে। তাই নির্বিচারে গাছকাটা অবশ্যই পরিহার করতে হবে।'

নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা গাছগুলো রেখে শহীদ মিনার নির্মাণের অনুরোধ জানিয়েছেন। সেইসঙ্গে চিহ্নিত এ পুরানো ও শতবর্ষী গাছগুলোকে জাতীয় ঐতিহ্য বৃক্ষ ঘোষণার দাবিও জানিয়েছেন।

চিঠিতে সই করেছেন—

১. সুলতানা কামাল, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন;

২. খুশী কবির, সমন্বয়কারী, নিজেরা করি;

৩. শামসুল হুদা, নির্বাহী পরিচালক, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি);

৪. ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি);

৫. আলমগীর কবির, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা);

৬. অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান, নগর পরিকল্পনাবিদ;

৭. অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার, বিভাগীয় প্রধান, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ ও ডিন, বিজ্ঞান অনুষদ, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ;

৮. মাহবুব সিদ্দিকী, নদী ও পরিবেশ গবেষক; সভাপতি, হেরিটেজ রাজশাহী ও আহ্বায়ক, সবুজ সংহতি, রাজশাহী মহানগর;

৯. মাহবুব টুংকু, আহ্বায়ক, পরিবেশ আন্দোলন ঐক্য পরিষদ, রাজশাহী;

১০. শহিদুল ইসলাম, গবেষক ও সমন্বয়কারী, বারসিক, বরেন্দ্র অঞ্চল;

১১. মো. নাজমুল হোসেন রাজু, সদস্য সচিব, পরিবেশ আন্দোলন ঐক্য পরিষদ, রাজশাহী;

১২. মো. শামীউল আলীম শাওন, সভাপতি, ইয়ুথ একশন ফর সোশ্যাল চেঞ্জ (ইয়্যাস);

১৩.আতিকুর রহমান আতিক, সাধারণ সম্পাদক, ইয়ুথ একশন ফর সোশ্যাল চেঞ্জ (ইয়্যাস) ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরাম;

১৪. সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, প্রধান নির্বাহী, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)।

Comments

The Daily Star  | English

Prof Yunus sends birthday greetings to Khaleda Zia with flower bouquet

The bouquet was handed over to Khaleda Zia's private secretary ABM Abdus Sattar

21m ago