এখনো পুলিশের সেই একই ‘গল্প’

কয়েকদিন আগেও যারা এসব সংস্কারের জোরালো আহ্বান জানিয়েছিলেন, তারাই এখন পাশার দান বদলে যাওয়ায় সেই উদ্বেগ গায়ে মাখছেন না বলে মনে হচ্ছে।
আনিসুল হক, সালমান এফ রহমান ও জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক। ছবি: সংগৃহীত

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান নিউমার্কেট এলাকায় ২৪ বছর বয়সী এক দোকানদারকে হত্যার জন্য সশস্ত্র দুর্বৃত্তদের উসকানি দিয়েছিলেন—এই অভিযোগ যতটা উদ্ভট, ঠিক ততটাই হাস্যকর।

সালমান এফ রহমান আর্থিক অপরাধের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে বিবেচিত, আর তার সঙ্গী আনিসুল হক দক্ষ কৌঁসুলি হিসেবে পরিচিত। দুজনই আওয়ামী লীগের দুর্নীতির সুবিধাভোগী হতে পারেন। কিন্তু ঢাকার রাস্তায় সহিংসতা উসকে দেওয়ার ইতিহাস বা অভ্যাস কোনোটিই নেই।

তবে পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী তারা ঠিক এটাই করেছেন। গত ১৬ জুলাই শাহজাহান আলীকে হত্যার জন্য এই দুজন জনতাকে উসকানি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে।

পুলিশ দাবি করেছে, গত ১৩ আগস্ট নদীপথে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাদের সদরঘাট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এখানেই শেষ নয়! ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেলের প্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানও শাহজাহানকে হত্যার জন্য জনতাকে উসকানি দিয়েছিলেন বলে দাবি করেছে পুলিশ। শেখ হাসিনা সরকারের আড়িপাতার প্রধান এই জেনারেল একজন দোকানদারকে হত্যার জন্য জনতাকে উসকে দেওয়ার মতো মানুষ নন। জিয়াউল আহসানের গ্রেপ্তারের ঘটনাটিও চমকপ্রদ।

১৬ আগস্ট পুলিশ জিয়াউল আহসানকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার করে। তারা প্রথমে হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় দাবি করে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এই জেনারেলকে আটক করা হয়েছে।

কিন্তু প্রায় এক সপ্তাহ আগেই জিয়াউলকে ঢাকা বিমানবন্দরে একটি উড়োজাহাজ থেকে নামিয়ে এনে, খুব সম্ভবত সামরিক হেফাজতে নেওয়ার খবর ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়েছিল। কয়েক ঘণ্টা পর সংশোধিত বার্তা আসে, এবার স্বীকার করা হয় সেনাবাহিনী তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে।

এদিকে দেশ থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ঢাকা বিমানবন্দর থেকে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ পলক ও ছাত্রলীগ নেতা তানবীর হাসান সৈকতকে আটকে দেয় বিমানবন্দরের কর্মীরা। এই ঘটনাও সেদিন গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে এসেছে।

তবে এর বেশ কিছুদিন পর পুলিশ দাবি করে, বিমানবন্দরের কাছে নিকুঞ্জ এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সব মিলিয়ে পুলিশ সেই পুরনো কৌশল অবলম্বন করছে বলে মনে হচ্ছে, যার উদ্দেশ্য ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানি করা। এ ধরণের অপকর্মের কারণে ছাত্র আন্দোলনের সময় ও পরে আইনের রক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল। আন্দোলকারীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়াবাড়ি রকমের বল প্রয়োগ পুলিশের ভাবমূর্তি এতটাই কলঙ্কিত হয় যে থানা থেকে তাদের পালাতে হয়েছিল এবং কেবল সেনাবাহিনীর সহায়তা ও আশ্বাসের পর তারা কাজে ফিরতে সাহস পেয়েছিল।

পুলিশের ইউনিফর্ম ও লোগো দমন ও সহিংসতার প্রতীক হয়ে ওঠায় এগুলো পরিবর্তনে সম্মত হয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। সেইসঙ্গে দাবি উঠেছে, পুলিশের আমূল সংস্কারেরও।

তবে শেষ হইয়াও হয় না শেষ।

জিয়াউল আহসান আদালতকে জানিয়েছেন, তাকে আটকের পর 'আয়নাঘরে' বন্দি রাখা হয়েছিল। প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই) পরিচালিত বন্দি ও নির্যাতনশালা হিসেবে পরিচিত এই আয়নাঘর নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ আসার পর বিশ্বজুড়েই নিন্দিত ও সমালোচিত।

তবে পরিহাসের বিষয়, কয়েকদিন আগেও যারা এসব সংস্কারের জোরালো আহ্বান জানিয়েছিলেন, তারাই এখন পাশার দান বদলে যাওয়ায় সেই উদ্বেগ গায়ে মাখছেন না বলে মনে হচ্ছে।

Comments

The Daily Star  | English

Unrest emerges as a new threat to RMG recovery

The number of apparel work orders received by Bangladeshi companies from international retailers and brands for the autumn and winter seasons of 2025 dropped by nearly 10 percent compared to the past due to major shocks from the nationwide student movement and labour unrest in major industrial belts over the past two and half months.

10h ago