উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ১০ সিদ্ধান্ত, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগে গুরুত্ব

‘আগে যেমন বলা হতো কালো টাকা সাদা করা যাবে, এখন আর সেরকম বলা হবে না, বরং উল্টো বলা হতে পারে।’
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক। ছবি: পিআইডি

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ অব্যাহত রাখার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। একইসঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলো কী ধরনের সংস্কার চায় সেসব বিষয়ও সরকার জানতে চায়। 

এরইমধ্যে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করেছে সরকার। আগামী শনিবার আরও কয়েকটি দলের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

আজ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে এক ব্রিফিংয়ে বন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সরকারের নেওয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের জানান।

তিনি বলেন, 'আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার প্রক্রিয়াটা চালু রাখব। তাদের কাছ থেকে যেসব সংস্কার প্রস্তাব আসবে সেগুলো গ্রহণ করব। সেজন্য একটি পদ্ধতির বিষয়ে কথা হয়েছে।'

'আমাদের আগে একটি পদ্ধতি ছিল জিও-এনজিও কো-অর্ডিনেশন' উল্লেখ করে রিজওয়ানা বলেন, 'সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কো-অর্ডিনেশন (কীভাবে করা যায়), সেটিকে আবারও রিভাইজ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।'

তবে সমন্বয়ের কাজটি কীভাবে হবে তার বিস্তারিত জানাননি তিনি।

অপরদিকে, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাতিলসহ একগুচ্ছ নতুন সিদ্ধান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। 

রিজওয়ানা হাসান বলেন, 'কালো টাকা সাদা করার বিধি এবং রীতি বন্ধ করে দেওয়া হবে। এখান থেকে সরকারের খুব বেশি আয় হয় না, বরং এ ধরনের সিদ্ধান্তে মূল্যবোধ অনেক বেশি প্রশ্নবিদ্ধ হয়। অর্থপাচারের বিরুদ্ধে সরকারের কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে।'

কালো টাকা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আগে যেমন বলা হতো কালো টাকা সাদা করা যাবে, এখন আর সেরকম বলা হবে না, বরং উল্টো বলা হতে পারে।'

একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত

রিজওয়ানা হাসান বলেন, 'আমাদের দেশের মুসলমানদের জন্য হজ একটি বড় বিষয়। হজের খরচ বাড়ানোর একটা সিন্ডিকেট দেখতে পাই, তাই আমাদের সরকার হজের খরচ যৌক্তিক মাত্রায় কমানোর লক্ষ্যে কাজ করছে।'

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'হজের খরচ কত কমানো সম্ভব, কত নির্ধারণ হবে তা এখুনি বলা যাচ্ছে না। প্রাথমিক মূল্যায়নে দেখা গেছে হজের খরচ কমানো সম্ভব, সেটা কতটা কীভাবে সম্ভব তা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষে জানানো হবে।'

রিজওয়ানা বলেন, 'বন্যার কারণে অনেক রপ্তানি-কেন্দ্রিক শিল্প ক্ষতির শিকার হয়েছে। এ খাতের শ্রমিকদের স্বার্থ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।'

তিনি বলেন, 'অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের দাম মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখতে যা যা করা প্রয়োজন সরকার সেই কাজগুলো শুরু করে দিয়েছে।'

দায়িত্ব গ্রহণের সময় থেকে এক মাসের মধ্যে কোন কোন মন্ত্রণালয় কী কী কাজ করেছে, তা প্রস্তুত করে গণমাধ্যমকে জানানো হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

গুম বিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে সই করার বিষয়ে রিজওয়ানা বলেন, 'সরকারি পর্যায় থেকে ফ্যাসিবাদ কায়েম রাখার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে বিরুদ্ধ মতকে দমন করার উদ্দেশ্যে গুম করে ফেলা, এসব আর হবে না।'

বাহিনী হিসেবে র‌্যাবকে বিচারের আওতায় আনা হবে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে রিজওয়ানা বলেন, 'এই সনদের নিয়ম অনুযায়ী অনুস্বাক্ষরের পর সেটা কার্যকর হবে। (বাংলাদেশে) এর আগে যে গুমের ঘটনাগুলো হয়েছে সেগুলোর জন্য একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে।'

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'সরকার চালাতে গেলে ভালো কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রয়োজন হয়। দক্ষ কর্মকর্তাদের বিষয়ে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন নেই। কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে।'

রিজওয়ানা আরও বলেন, 'আমরা যদি আগের সরকারে যারা ভালো পোস্টিংয়ে ছিল তাদের কাউকে নেব না, এমন নীতি গ্রহণ করি, তাহলে কাজ এগিয়ে নেব কীভাবে? এই রেজিম, সেই রেজিম বলে যদি আমরা তুলনা করি তাহলে আমাদের সঙ্গে অন্যদের তফাৎটা কী হলো?'

সাফ অনূর্ধ্ব-২০ ফুটবলে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় এ টিমের জন্য সরকার সংবর্ধনার আয়োজন করবে। এ ছাড়াও, জাতীয় ক্রিকেট দল পাকিস্তানকে হারানোয় খেলোয়ার, বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।

নিরাপত্তা পাবে না জাতির পিতার পরিবার

'জাতির পিতার পরিবার-সদস্যগণের নিরাপত্তা আইন, ২০০৯' বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। এ সিদ্ধান্ত গেজেট আকারে প্রকাশের পর থেকে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়ার সুযোগ থাকবে না।

সেই সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে 'বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী (স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪'-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Unrest emerges as a new threat to RMG recovery

The number of apparel work orders received by Bangladeshi companies from international retailers and brands for the autumn and winter seasons of 2025 dropped by nearly 10 percent compared to the past due to major shocks from the nationwide student movement and labour unrest in major industrial belts over the past two and half months.

10h ago