ঢালাওভাবে মামলা ও আসামি না করার আহ্বান জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন

ঢালাওভাবে মামলা ও আসামি না করার আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন।

আজ বুধবার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন ও অভ্যুত্থানের ফলপ্রসূতায় জনমানুষের মনে স্বস্তি এসেছে। এ আন্দোলনের ছাত্র-জনতার আত্মোৎসর্গের প্রতি জাতি কৃতজ্ঞ। অপরপক্ষে যেসব প্রাণহানি হয়েছে সে বিষয়ে ন্যায় বিচারের প্রত্যাশায় রুজু হচ্ছে বহু মামলা। কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে অতি সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, প্রাণহানি ও হতাহতের ঘটনায় ঢালাওভাবে মামলা ও আসামি করে অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।'

এতে আরও বলা হয়, 'অনেক ক্ষেত্রে মামলাগুলোতে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে ও মনগড়া এজাহার দেওয়া হয়েছে বলেও জানা যায়। নানা অসঙ্গতিতে মামলাগুলো গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলছে এবং প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। মামলাগুলোর ফলে একদিকে যেমন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি/পরিবার ন্যায়বিচার বঞ্চিত হওয়ার সম্মুখীন হচ্ছে, অপরদিকে অনেক নিরপরাধ মানুষও হয়রানির শিকার হতে পারে এবং এর ফলে সমাজে অনেকেই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে।'

মামলা হলেই যাতে নির্বিচারে গ্রেপ্তারের ঘটনা না ঘটে তা নিশ্চিতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান সবাইকে আহ্বান জানান।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বলে, 'গণমাধ্যম থেকে জানা যায়, রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ইমরান হোসেন নামের এক তরুণকে হত্যার মামলায় প্রথিতযশা আইনজীবী ও স্বনামধন্য সাংবাদিকসহ ২৯৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়াও, পুলিশের নন অপারেশনাল ইউনিটে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদেরও মামলায় আসামি করা হয়েছে। শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীকে আসামি করে জুনের মৃত্যুকে আগস্টে আন্দোলনে নিহত দেখিয়ে মামলা করা হয়েছে, দেশের বাইরে থেকেও কেউ কেউ ''ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে গুলি ছুড়ে'' হয়েছেন অভিযুক্ত, একই ঘটনায় ভিন্ন ভিন্ন এজাহার ও ভিন্ন ভিন্ন আসামির নাম দিয়ে মামলা করা হয়েছে। এ ধরনের মামলাগুলোতে নির্বিচারে আসামী করা মামলাগুলোকে দুর্বল করে এবং তা প্রকৃত অপরাধী শনাক্তকরণে বাধা দেয়।'

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, 'অসঙ্গতিপূর্ণ, হয়রানি ও উদ্দেশ্যমূলক মামলা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এরই প্রেক্ষিতে শুধু নির্ভরযোগ্য তথ্য এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই মামলা করার আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। পাশাপাশি, মামলা হলেই যত্রতত্র গ্রেপ্তার না করার আহ্বান জানিয়েছে কমিশন।' 

এ বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, 'নির্বিচারে ও ঢালাওভাবে আসামি করে মামলা দায়ের কোনোভাবে কাম্য নয়। এটি অনৈতিক এবং মানবাধিকারের লঙ্ঘন। মামলাগুলো বস্তুনিষ্ঠ হওয়া প্রয়োজন। প্রকৃত ঘটনা নিরূপণ করে দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা এবং নির্দোষ ব্যক্তিকে হয়রানির হাত থেকে মুক্ত করে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সব অংশীজনের দায়িত্ব। তথ্যগত অসামঞ্জস্যতা ও অসঙ্গতি মামলাকে দুর্বল করে ফেলে। যথাযথ যাচাই-বাছাই করে মামলা করা না হলে প্রকৃত অপরাধী পার পেয়ে যেতে পারে এবং তাতে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের ন্যায়বিচার প্রাপ্তিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।'

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করে। সরকারের পক্ষ থেকে তল্লাশি ও মামলা গ্রহণে প্রচলিত আইন যথাযথভাবে মেনে চলার ও মামলা হলেই যত্রতত্র গ্রেপ্তার না করার যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে তাকে স্বাগত জানায় কমিশন। কমিশন বিশ্বাস করে সবার সহযোগিতা ও সহমর্মিতার ভিত্তিতে কাজ করলে দ্রুতই স্থিতিশীল অবস্থা তৈরি হবে ও জনমানুষের মানবাধিকার সুনিশ্চিত হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Suspected robbers attack police camp on the Meghna

Suspected robbers launched an assault on a newly established police camp in Munshiganj’s Gajaria upazila yesterday, sparking a gunfight between them and law enforcers yesterday.

4h ago