নোয়াখালীতে বন্যার অবনতি, আবার আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছে মানুষ

নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, জেলার বন্যা পরিস্থিতি ভালো না। বন্যা কবলিত উপজেলাগুলোতে নতুন করে দুই-তিন ইঞ্চি পানি বেড়েছে।
হাতিয়া বাদে নোয়াখালীর বাকি আটটি উপজেলার সবগুলোতে বন্যার পানি ঢুকেছে। ছবি: অনিক শাহরিয়ার/স্টার

নোয়াখালীতে ফের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় বাড়িতে ফিরে যাওয়া লোকজন পুনরায় আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে শুরু করেছে। শুক্রবার বিকেল থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

টানা বৃষ্টিতে জেলার আট উপজেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। নয়টি উপজেলার মধ্যে আটটিতেই বন্যার পানি বেড়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি পানি বেড়েছে সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, সদর, সোনাইমুড়ী ও চাটখিল উপজেলায়। যেসব এলাকায় পানি কমতে শুরু করেছিল সেসব এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে।

নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, জেলার বন্যা পরিস্থিতি ভালো না। বন্যা কবলিত উপজেলাগুলোতে নতুন করে দুই-তিন ইঞ্চি পানি বেড়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে নতুন করে লোকজন আসতে শুরু করেছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেও নোয়াখালীর সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার কথা জানা গেছে।

গত মাসের তৃতীয় সপ্তাহে যে বন্যা হয় তার পানি পুরোপুরি সরার আগেই নতুন করে বন্যা শুরু হয়েছে। এতে এখনো পানিবন্দি আছেন ১১ লাখ ৫৫ হাজার মানুষ। ৩৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন ৩৮ হাজার ২৭১ জন। বন্যায় এ পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সাত শিশুও রয়েছে।

জেলা আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক আরজুল ইসলাম জানান, শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত জেলা শহর মাইজদীতে ১২৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। আজ সকাল থেকেও বৃষ্টি হচ্ছিল। বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ ও মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে আগামী ২৪ ঘণ্টা জেলায় বৃষ্টি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে এখানকার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।

স্থানীয়রা বলছে, নিচু এলাকাগুলোতে কোথাও দুই-তিন ইঞ্চি; কোথাও আরও বেশি পানি বেড়েছে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় জলাবদ্ধতার পানি নামছে খুবই ধীর গতিতে।

নোয়াখালী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আঁখিনূর জাহান নীলা বলেন, বন্যার পানি কমতে শুরু করেছিল। কিন্তু গত ৩৬ ঘণ্টার টানা বর্ষণে উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও নোয়াখালী পৌরসভা এলাকায় পানি বেড়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে চলে যাওয়া লোকজন আবারও শনিবার বিভিন্ন ইউনিয়নের আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে শুরু করেছেন।

সেনবাগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিসান বিন মাজেদ বলেন, বেগমগঞ্জ ও সেনবাগ উপজেলায় বেশি পানি ঢুকেছে। পানি এখনও রয়েছে। এ উপজেলার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ছাতার পাইয়া, ডুমুড়ুয়া ও নবীপুর ইউনিয়নে। নতুন করে ২৫টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু হয়েছে। লোকজন নতুন করে আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে শুরু করেছেন।

বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আরিফুর রহমান বলেন, গত শুক্রবার থেকে টানা বৃষ্টির পানিতে উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন ও চৌমুহনী পৌরসভা এলাকার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

অপরদিকে, বৈরী আবহাওয়ায় নোয়াখালীল দ্বীপ উপজেলা হাতিয়াতে গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ১০টি মাছ ধরার ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটে। পাঁচটি ট্রলারসহ এখনো ১৭ জন জেলে নিখোঁজ রয়েছেন।

Comments