খুলনায় টানা বৃষ্টিতে ভেসে গেছে ৬০ শতাংশ মাছের ঘের, আমন খেতের ব্যাপক ক্ষতি

সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন কয়রা, পাইকগাছা, ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটা উপজেলার কৃষকরা।
বৃষ্টির পানিতে ডুবে যাওয়া আমনের চারা সোজা করার চেষ্টা করছেন এক কৃষক। ছবি: হাবিবুর রহমান/স্টার

টানা তিন দিনে খুলনায় ৩২৬ মিলিমিটার বৃষ্টিতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে ভেসে গেছে নয় উপজেলার ৬০ শতাংশ মাছের ঘের। এর পাশাপাশি মাঠের আমন ধানসহ অন্য বিভিন্ন সবজি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

খুলনা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, আজ সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টাতেই খুলনায় মোট বৃষ্টি হয়েছে ১৫৪ মিলিমিটার। আজ সারাদিনও বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলার খুলশীবুনিয়া গ্রামের কৃষক প্রসাদ রায় বলেন, 'আমাদের পারিবারিক ১৯ বিঘার আমন ধানের মাঠের প্রায় পুরোটাই জলের নিচে চলে গেছে। বাড়িলাগোয়া তিন বিঘা মাছের ঘেরের আইলের ওপর যেসব সবজি লাগানো ছিল, সেগুলোও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।'

প্রসাদ রায় বলতে থাকেন, 'সবচেয়ে বড় বিপদের কারণ হয়েছে মাছের ঘেরগুলো। জল বেশি হলে গলদা চিংড়ি আটকে রাখা যায় না। কোনো না কোনোভাবে পায়ে হেঁটে বের হয়ে যায়। আমাদের গ্রামের প্রায় শতভাগ ঘের এখন বিপদের মুখে আছে। অনেকগুলো এরমধ্যে ভেসে গেছে।'

এই কৃষক জানান, তাদের পরিবারের ১৯ বিঘা জমিতে সাধারণত আড়াই থেকে ৩০০ মন ধান হয় প্রতিবছর। কিন্তু এমন বিপর্যয়ের কারণে গত বছর তারা মাত্র ৩৯ মন ধান পেয়েছিলেন।

বিলের পানি নিষ্কাসনের ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আবারও এমন বিপদের আশঙ্কার কথা জানিয়ে প্রসাদ রায় বলেন, 'পারবটিয়াঘাটা এলাকার স্লুইসগেটটি দিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ ঠিকমতো জল ওঠানামা করতে পারছে না। তাছাড়া এই এলাকার হেতালবুনিয়া খাল, ১০ কাঠিয়া খাল, পারবটিয়াঘাটা খাল, পাথরিকাটা খাল সংস্কার না হওয়ায় খলসিবুনিয়া, পাথরিঘাটা, হেতালবুনিয়া, বারুইআবাদসহ আশেপাশের অন্তত ২০টি গ্রামের আমন চাষের জমি থেকে জল ঠিকমতো সরতে পারছে না।'

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইনসাদ ইবনে আমিন বলছেন, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলাটিকে বলা হয় সবজির ভাণ্ডার। বছরে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার মতো সবজি বিক্রি হয় এখান থেকে। এই বৃষ্টিতে শীতকালীন সবজি এবং খরিপ-২ মৌসুমের ফসলের খুব ক্ষতি হয়ে গেল।

এই কৃষি কর্মকর্তার কাছ থেকে জানা যায়, চলতি বছর ডুমুরিয়া উপজেলার মাগুরখালী, আর্টলিয়া, সরাপপুর, ভান্ডারপাড়াসহ ১৪ ইউনিয়নের সবগুলোতে অসময়ের তরমুজ চাষ হয়েছে। প্রায় ৩০৫ হেক্টর জমিতে ২ হাজার ২০০ কৃষক মাচান পদ্ধতিতে বিভিন্ন জাতের তরমুজের আবাদ করেছেন। এই বৃষ্টিতে তাদের অনেকেই ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।

ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া গ্রামের কৃষক আলামিন শেখ বলেন, তাদের গ্রামের সব আমন ধানের খেত বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে আছে। পানি সরার কোনো লক্ষণ নেই। ধানগাছ আরও দুই-তিনদিন পানির নিচে থাকলে সেগুলো আর বাঁচানো যাবে না।

কথা হয় খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর হোসেনের সঙ্গে। তার পর্যবেক্ষণ হলো, তিনদিনের টানা বৃষ্টিতে ৮৫ হাজার ৬০০ হেক্টর আমন ধানের খেত কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর পাঁচ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে চাষ করা শীতকালীন সবজিসহ অন্য ফসলের মধ্যে দুই হাজার ৩২৫ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে।

গত এক দশকে খুলনা অঞ্চলে মাছের ঘেরের আইলে সবজি চাষে ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। সারা বছরব্যাপী এখানে সবজি উৎপাদিত হয়। বিশেষ করে আগাম শীতকালীন সবজি চাষ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন এখানকার কৃষকেরা। এই বৃষ্টিতে এসব সবজি গাছের শিকড় ডুবে গিয়েছে। দমকা বাতাসে অনেক গাছের মাচা ভেঙে গেছে।

জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, 'সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন কয়রা, পাইকগাছা, ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটা উপজেলার কৃষকরা। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।'

খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল জানান, টানা বৃষ্টিতে খুলনার নয় উপজেলার ৬০ শতাংশের বেশি মাছের ঘের ভেসে গেছে। উপজেলাভিত্তিক তথ্য পেতে একটু সময় লাগবে। তিনি বলেন, 'বিশেষ করে চিংড়ি ঘেরগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন মাছ তোলার সময়। এ সময়ে ঘের ভেসে যাওয়ায় মৎস্যচাষীরা খুবই লোকসানের মুখে পড়বেন।'

এদিকে বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগর, কালিগঞ্জ ও আশাশুনিসহ জেলার সাত উপজেলার পথঘাট। মাছের ঘেরগুলোরও একই অবস্থা। আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, আনুলিয়া, খাজরা, বড়দল, শ্রীউলা ও আশাশুনি সদরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল পানিতে থই থই করছে।

শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, বুড়িগোয়ালিনী, কাশিমাড়ি, কৈখালী, রমজাননগরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের মাছের ঘের ও পুকুরও ভেসে গেছে পানিতে।

Comments

The Daily Star  | English

Post-August 5 politics: BNP, Jamaat drifting apart

The taunts and barbs leave little room for doubt that the 33-year-old ties have soured. Since the fall of Sheikh Hasina’s government on August 5, BNP and Jamaat-e-Islami leaders have differed in private and in public on various issues, including reforms and election timeframe.

5h ago