নিহত সেই পোশাক শ্রমিকের পরিবার পেল ৫ লাখ টাকা

পাশের কারখানার শ্রমিকদের নিক্ষেপ করা ইটের আঘাতে নিহত হন রোকেয়া।
শ্রমিকদের সংঘর্ষ থামাতে কাজ করে পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত

শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার জিরাবো এলাকায় পাশের কারখানার শ্রমিকদের ছোড়া ইটের আঘাতে নিহত ম্যাসকট গার্মেন্টসের নারী শ্রমিক রোকেয়া বেগমের পরিবারের সদস্যদের পাঁচ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) এবং কারখানার মালিকপক্ষ।

নিহত ওই শ্রমিকের মরদেহ নিয়ে সহকর্মীরা কারখানার সামনে জিরাবো-বিশমাইল সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করার সময় বিজিএমইএয়ের একটি দল ঘটনাস্থলে আসেন। তারা মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কারখানার ভেতরে আলোচনা করেন।

বৈঠক শেষে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন বিজিএমইএয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ হীল রাকিব।

শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠকের পর গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন বিজিএমইএয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ হীল রাকিব। ছবি: সংগৃহীত

তিনি বলেন, 'এটা একটা দুর্ঘটনা। এখানে কেউ ওই শ্রমিককে লক্ষ্য করে ঢিল মারেনি। আমরা মালিকদের নিয়ে এসেছি। মালিকদের জন্যও এটা বড় একটা ক্ষতি। কারণ, তারা একজন দক্ষ শ্রমিক হারিয়েছেন। মালিকরা অত্যন্ত মর্মাহত।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি৷ তাদের যে ক্ষতি হয়েছে সেটাতো আর ফিরিয়ে দিতে পারবো না। তারপরও আমরা তাদের পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছি। আর কারখানাটি যাতে ভালোভাবে চলে যে জন্য শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। আগামী শনিবার থেকে কারখানাটি চলবে।'

আহতদের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আহতদের ওখানে লোক পাঠানো হয়েছে। তাদের চিকিৎসা ব্যয় পুরোটাই মালিকপক্ষ নেবে।'

টানা দুই সপ্তাহের অধিক সময় ধরে শ্রমিক অসন্তোষ কাটিয়ে গুটিকয়েক কারখানা ছাড়া আজ থেকে পুরোদমে চলছিল শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার পোশাক কারখানাগুলো৷ এর মধ্যেই সকালে বন্ধ একটি কারখানার শ্রমিকদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে পাশের একটি খোলা কারখানার শ্রমিকরা।

এ সময় ইটের আঘাতে মাথায় আঘাত প্রাপ্ত হয়ে নিহত হন রোকেয়া।

এ ঘটনায় রোকেয়ার সহকর্মী বিক্ষুব্ধ হয়ে পাশের কারখানাটিতে হামলা করে। সংঘর্ষ বাঁধে দুই পোশাক কারখানার শ্রমিকদের। শেষে সংঘর্ষ গড়ায় পাশের আরেকটি কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে।

এতে আহত হয়েছেন অন্তত ২০ শ্রমিক। তাদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালে ব্যবস্থাপক হারুন অর রশিদ চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '১০ জন আহত শ্রমিক আমাদের হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তারা শঙ্কামুক্ত।'

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রেডিয়েন্স, সাউদার্নসহ জিরাবো এলাকার অন্তত ১০টি কারখানা আজকের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।

আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শ্রমিক নিহতের ঘটনাটি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।'

নিহত সহকর্মীর মরদেহ নিয়ে কারখানার সামনে অবস্থানকালে ছবি তুলছেন পোশাক শ্রমিকরা। ছবি: সংগৃহীত

কারখানায় দাঙ্গা-হাঙ্গামার অভিযোগ এনে শ্রম আইনের ২৩/৪ ধারা অনুযায়ী ৭৫ জন শ্রমিককে সাময়িক বরখাস্ত করেছে পার্ল গার্মেন্টস কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃপক্ষ।

আজ বরখাস্তকৃত ৭৫ শ্রমিকের নাম, আইডি নম্বরসহ একটি তালিকা কারখানার সামনে টানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তবে শ্রমিকরা বলেন, দাবি-দাওয়া নিয়ে মিডিয়ায় বক্তব্য দেওয়ার কারণে আমাদের চিহ্নিত করে বরখাস্ত করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে অন্যায় করেছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শ্রম আইনের ২৩/৪ ধারা মানে দাঙ্গা-হাঙ্গামায় জড়িত শ্রমিকদের সাময়িক বরখাস্ত করা। এ ধারায় শ্রমিকদের কারণ দর্শানোর জন্য বলা হবে। তদন্ত কমিটি তদন্ত করবে। শ্রমিকরা নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করতে পারবে না, কারণ তদন্ত কমিটির সদস্যরা কারখানার ভেতরের কর্মকর্তারাই হয়। এটা শ্রমিক ছাঁটাইয়ের পূর্বের প্রক্রিয়া। শ্রমিক অসন্তোষ রোধে এই প্রক্রিয়া থেকে মালিকপক্ষকে সরে আসতে হবে।'

এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক দীনেস গোপ ভিরুয়ানির মুঠোফোনে কল করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

কারখানার সামনে গিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে সিকিউরিটি গার্ডরা জানান কর্মকর্তা কারখানায় নেই।

আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাময়িক বরখাস্ত করা শ্রমিকরা কারখানার সামনে জড়ো হয়েছিল। আমরা তাদের বুঝিয়ে সরিয়ে দিয়েছি। এটা কারখানা কর্তৃপক্ষের বিষয়। তাদের বলেছি, সাত দিনের মধ্য আপনাদের কারণ দর্শানোর জন্য বলা হয়েছে; আপনারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করুন। প্রয়োজনে আমরা সহযোগিতা করবো।'

Comments

The Daily Star  | English

Gaza still bleeding

Death toll nears 42,000; rallies worldwide calls for ceasefire

1h ago