খাগড়াছড়িতে পাহাড়িদের বাড়িঘর-দোকানপাটে আগুন

ছবি: সংগৃহীত

খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলায় পাহাড়িদের অন্তত ৩০টি বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ৫টার দিকে দীঘিনালা উপজেলা সদরের লারমা স্কয়ার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, বুধবার সকালে জেলা শহরে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে গণপিটুনিতে মামুন নামে এক বাঙালি যুবক নিহত হওয়ার পর এ হামলা চালানো হয়।

এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আজ বিকেলে দীঘিনালা উপজেলা সদর চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল বের করে একদল বাঙালি সেটেলার।

বিক্ষোভকারীদের অনেকেই মিছিল থেকে পাহাড়িদের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। এ সময় কিছু বাঙালি ও পাহাড়িদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয় বলে জানান সেখানে উপস্থিত থাকা ইনস্তা চাকমা। আজ সন্ধ্যায় মোবাইলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এক পর্যায়ে স্থানীয় একটি মসজিদের লাউডস্পিকার থেকে ঘোষণা আসে যে পাহাড়িরা বাঙালিদের ওপর হামলা করেছে। সঙ্গে সঙ্গে কয়েকশ বাঙালি লোক সেখানে জড়ো হয়ে পাহাড়িদের ওপর হামলা চালাতে শুরু করে এবং তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন ধরিয়ে দেয়।'

ইনস্তা চাকমা আরও বলেন, 'তখন অনেকের মতো আমরাও ওই এলাকা থেকে পালিয়ে জঙ্গলে আশ্রয় নেই। জঙ্গল থেকেই আগুন ও ধোঁয়া দেখা যাচ্ছিল।'

এ বিষয়ে দীঘিনালা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ধর্ম জ্যোতি চাকমা অগ্নিসংযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করলেও কতগুলো বাড়িঘর ও স্থাপনায় আগুন দেওয়া হয়েছে তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি।

ধর্ম জ্যোতি চাকমা জানান, সেটেলার বাঙালিরা এক পাহাড়ি হকারকে মারধর করলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তার ভাষ্য, 'গতকাল (বুধবার) প্রায় একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল, যখন একদল সেটেলার খাগড়াছড়ি শহরে জড়ো হয়ে পাহাড়িদের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক স্লোগান দিচ্ছিলেন।'

খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আরেফিন জুয়েল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'একদিন আগে গণপিটুনিতে মামুন নামে এক ব্যক্তির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দীঘিনালায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।'

পুলিশের কাছে থাকা তথ্যের বরাত দিয়ে তিনি জানান, মামুনের বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা আছে, যার ভেতর ১৪টিই চুরির অভিযোগে। বুধবারও চোর সন্দেহে মামুনকে মারধর করে স্থানীয়রা।

জুয়েল বলেন, 'লোকটা যেহেতু বাঙালি...এ ঘটনায় একদল লোক সহিংসতা উসকে দিতে বোয়ালখালী নতুন বাজারের (লারমা স্কয়ার সংলগ্ন) দোকানপাটে আগুন ধরিয়ে দেয়।'

আগুন নেভানো হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এটি একটি দুর্গম জায়গা, ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে ফায়ার সার্ভিসেরও পাহারার দরকার। দীঘিনালায় ইতোমধ্যে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। আমরা সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছি।'

রাত ৮টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত খাগড়াছড়ির বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ি ও বাঙালি সেটেলারদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে জানিয়ে বলেন, 'সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবির সমন্বয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ টহল চলছে।'

'আজ রাতটি খুব গুরুত্বপূর্ণ' মন্তব্য করে পলাশ বলেন, 'আমরা জেলায় শান্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি।'

(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন রাঙামাটি সংবাদদাতা  ও চট্টগ্রামের নিজস্ব প্রতিবেদক)

Comments

The Daily Star  | English
Barishal University protest

As a nation, we are not focused on education

We have had so many reform commissions, but none on education, reflecting our own sense of priority.

8h ago