গণপিটুনিতে তোফাজ্জলের মৃত্যু ঠেকাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়নি ঢাবি ও হল কর্তৃপক্ষ

প্রতীকী ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে গণপিটুনিতে নিহত তোফাজ্জল হোসেনকে বুধবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টা থেকে ফজলুল হক মুসলিম হলে তিন ঘণ্টা আটকে রাখা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রথমে হলের গেস্টরুমে ছাত্ররা তাকে মারধর করেন এবং পরে তাকে খাওয়ানোর জন্য ডাইনিং রুমে নিয়ে যাযন। এরপরে তারা তাকে অন্য একটি গেস্টরুমে নিয়ে আবারও নির্যাতন করা হয়।

ভয়াবহ এই ঘটনাটি চলতে থাকলে হাউস টিউটররা বারবার হল প্রভোস্টকে কল করেন। কিন্তু হল প্রাঙ্গণেই বাস করা প্রভোস্ট তাতে সাড়া দেননি।

প্রভোস্ট অধ্যাপক শাহ মো. মাসুম হলে আসেন পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে। সেটাও একজন সহকারী প্রক্টর তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়ে আলোচনা করতে তার কার্যালয়ে যাওয়ার পর।

ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রক্টরিয়াল টিমের প্রধান প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বুধবার মধ্যরাতে তোফাজ্জলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি ঘটনাটি জানতে পারেন।

এর আগে গুরুতর আহত তোফাজ্জলকে সরাসরি হাসপাতালে না নিয়ে রাত ১১টার দিকে প্রক্টর অফিসের মোবাইল টিম তাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়।

৩৫ বছর বয়সী তোফাজ্জলকে হাসাপাতালে ভর্তি করা হয় রাত সাড়ে ১১টার দিকে। আর পৌনের ১২টার দিকে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঢাবির আবাসিক শিক্ষার্থীদের কাছে তোফাজ্জল ছিলেন পরিচিত মুখ। তিনি প্রায়ই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন এলাকা ও ছাত্রাবাসগুলোতে ঘুরে বেড়াতেন। কেউ তাকে খাবার দিলে খুশি হয়ে খেতেন।

তার আত্মীয়রা বলছেন, বাবা-মা ও ভাইয়ের মৃত্যুর পর 'মানসিক ভারসাম্য' হারিয়ে ফেলেন তোফাজ্জল। তিনি আনমনে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতেন।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী জিয়াউর রহমান গতকাল ক্যাম্পাসে এক প্রতিবাদ সমাবেশে বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ নিলে তোফাজ্জল হোসেন হয়তো বেঁচে যেতেন।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ওই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেন তোফাজ্জলের জেলা বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার শিক্ষার্থীরা।

একই দিনে এর প্রতিবাদে ঢাবি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টও।

বুধবার রাতে হল প্রাধ্যাক্ষ অধ্যাপক মাসুম যে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না, সেটা তিনি স্বীকারও করেছেন।

গতকাল শুক্রবার রাতে অধ্যাপক মাসুম এই প্রতিবেদককে বলেন, 'আমি যদি ঘটনাটি জানতাম তাহলে অবশ্যই সেখানে যেতাম।' তার কাছ থেকেই জানা যায়, সেদিন রাতে তিনি হল প্রাঙ্গণে তার সরকারি বাসাতেই ছিলেন, যেটি ছাত্রাবাসের মূল ভবন থেকে মাত্র এক মিনিটের হাঁটা পথ।

আর প্রক্টর সাইফুদ্দিন বলছেন, তোফাজ্জলকে মারধরের বিষয়টি তিনি জানতে পারেন মধ্যরাতে। হাসপাতালে যান ভোর ৪টার দিকে।

জড়িত আটজন

ফজলুল হক মুসলিম হলের হাউস টিউটর অধ্যাপক আলমগীর কবিরের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি প্রাথমিকভাবে তোফাজ্জলকে মারধরের ঘটনায় ঢাবির আট শিক্ষার্থীর সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে।

কমিটি তাদের প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আজ শনিবার সন্দেহভাজনদের নাম প্রকাশ করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে।

এদিকে পুলিশের উপপরিদর্শক সাইফুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এ ঘটনায় আটক ঢাবির ছয় শিক্ষার্থী তোফাজ্জলকে নির্যাতনে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।

এরা হলেন—পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জালাল মিয়া, মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সুমন মিয়া, পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের মো. মোত্তাকিন সাকিন, গণিত বিভাগের আহসান উল্লাহ, জিওগ্রাফির আল হুসাইন সাজ্জাদ ও ওয়াজিবুল আলম।

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসেন এই ছয় শিক্ষার্থীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।

গতকাল শুক্রবার বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তোফাজ্জলকে দাফন করা হয়।

এর আগে তার জানাজায় উপস্থিত শোকাহত এলাকাবাসী এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমলক শাস্তি দাবি করেন।

 

Comments

The Daily Star  | English

Patients suffer as national eye hospital remains closed for 4th day

The 250-bed hospital remained non-operational following a tripartite clash on Wednesday

1h ago