বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার

চট্টগ্রামের পাহাড়তলিতে প্রাক্তন ইউরোপীয় ক্লাবের প্রবেশপথের দিকে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার শান্তভাবে তাকিয়ে আছেন। সেখানে 'কুকুর এবং ভারতীয়দের অনুমতি নেই' সাইনবোর্ডটি এখন আর নেই।

ব্রিটিশ শাসকরা এ দেশের জনগণকে কতটা ঘৃণার চোখে দেখত—ওই একটি সাইনবোর্ডই তার যথাযথ সাক্ষ্য। 

তারা এ দেশের জনগণের সঙ্গে যে বৈষম্য ও নিপীড়নমূলক আচরণ করত, সাইনবোর্ডটি সেই সাক্ষ্য বহন করছিল।   

সেই ঘৃণা, বৈষম্য ও নিপীড়ন থেকে মুক্তি পেতে মাস্টারদা সূর্যসেনের নেতৃত্বে বিপ্লবী দলে যুক্ত হন প্রীতিলতা। উদ্দেশ্য প্রিয় মাতৃভূমিকে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করা।

মাস্টারদা'র নির্দেশে ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর প্রীতিলতা সাহসিকতার সঙ্গে সাত ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবীর একটি দলকে নেতৃত্ব দেন, যারা সেই ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করে। 

ক্লাবে আমোদ ফুর্তিতে মত্ত ইংরেজদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ করেন প্রীতিলতা ও তার দল। সেখানে বহু ইংরেজ হতাহত হয়। জানা যায়, এই আট বিপ্লবীর আক্রমণে হতাহত হয় ৫৩ ইংরেজ।

অভিযান শেষে ফেরার পথে ইংরেজদের ছোড়া একটি গুলি এসে লাগে প্রীতিলতার শরীরে। তিনি আহত হন কিন্তু ইংরেজদের হাতে ধরা দেননি। পটাশিয়াম সায়ানাইড মুখে ঢেলে দিয়ে আত্মাহুতি দেন বীরকন্যা। তার আগে অবশ্য সঙ্গীদের নিরাপদে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেন।   

প্রীতিলতা জীবনোৎসর্গ করেন, কিন্তু স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে তার নামটি অমর করে রেখে দিলেন। তিনিই প্রথম বাঙালি নারী, যিনি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে তার মাতৃভূমির মুক্তির জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।  

সেই থেকে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে কিংবদন্তি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছেন।   

প্রীতিলতার জন্ম ১৯১১ সালের ৫ মে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামে। তার বাবা জগৎবন্ধু ওয়াদ্দেদার তৎকালীন চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন, মা প্রতিভাময়ী ছিলেন গৃহিণী। 

প্রীতিলতা চট্টগ্রামের ডা. খাস্তগীর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকার ইডেন কলেজ ও কলকাতার বেথুন কলেজে লেখাপড়া করেন। শিক্ষাজীবন শেষে চট্টগ্রামের নন্দনকানন বালিকা বিদ্যালয়ের (বর্তমানে অপর্ণাচরণ বালিকা বিদ্যালয়) প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব পালন করেন।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ২০১২ সালের ২ অক্টোবর প্রাক্তন ইউরোপীয় ক্লাবের পাশে পাহাড়তলী স্কুলের সামনে প্রীতিলতার একটি আবক্ষ ভাস্কর্য স্থাপন করে। প্রীতিলতা শান্ত চোখে তাকিয়ে আছেন প্রাক্তন ইউরোপীয় ক্লাবের প্রবেশপথের দিকে যেখানে 'কুকুর এবং ভারতীয়দের অনুমতি নেই' সাইনবোর্ডটি এখন আর নেই। এই ভেবে তিনি আনন্দিত হচ্ছেন যে, আত্মত্যাগ বৃথা যায়নি, তার প্রিয় মাতৃভূমি পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh tops sea arrivals to Italy

The number of Bangladeshis crossing the perilous Mediterranean Sea to reach Italy has doubled in the first two months this year in comparison with the same period last year.

8h ago