বছর না ঘুরতেই চসিকের অস্থায়ী শ্রমিক হয়ে গেলেন ‘অফিসার’

চসিক

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে (চসিক) অস্থায়ী শ্রমিক নিয়োগে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অস্থায়ী শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার এক বছরের মধ্যে তাদের অনেকেই হয়ে গেছেন অফিসার কিংবা উপ-সহকারী প্রকৌশলী।

২০২৩ সালের জুন ও আগস্টে চসিকে অস্থায়ী শ্রমিক হিসেবে ৪৫২ টাকা দৈনিক মজুরিতে নিয়োগ পান পাঁচ জন। 'কাজ না থাকলে মজুরি পাবেন না', এমন শর্তে চাকরি পান তারা।

কিন্তু নিয়োগের এক বছর পার হতে না হতেই শীর্ষ কর্মকর্তাদের আশীর্বাদ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন বিভাগে উপ-সহকারী প্রকৌশলীর দায়িত্ব পান ওই পাঁচ শ্রমিক।

ডা. শাহাদাত হোসেন গত ৩ নভেম্বর চসিক মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পর আলোচনায় উঠে আসে পাঁচ উপ-সহকারী প্রকৌশলীর অস্বাভাবিক পদোন্নতির বিষয়টি।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের ৫ জুন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে অস্থায়ী শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ পান রাহুল মজুমদার। এক মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই ৩ জুলাই তাকে নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে পদায়ন করা হয় প্রকৌশল বিভাগের প্রকিউরমেন্ট শাখায়। এর চার মাস পর ১ নভেম্বর এই অস্থায়ী শ্রমিককে তার নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে স্ব-বেতনে প্রকৌশল বিভাগের প্রকিউরমেন্ট শাখার অফিস সহকারী পদ দেওয়া হয়।

তবে এখানেই এই দুর্নীতিমূলক ঘটনার শেষ নয়।

চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি এই অস্থায়ী শ্রমিককে তার নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে প্রকৌশল বিভাগের পাঁচ নম্বর ডিভিশনের ছয় নম্বর ওয়ার্ডে উপ-সহকারী প্রকৌশলীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই অতিরিক্ত দায়িত্ব পাওয়ার আড়াই মাসের মধ্যেই, অর্থাৎ চলতি বছরের ১৪ মার্চ আরও একটি অতিরিক্ত দায়িত্ব পেয়ে 'সহকারী প্রকিউরমেন্ট অফিসার' হন আলোচিত এই 'অস্থায়ী শ্রমিক'।

চসিকে রাহুল মজুমদার নিয়োগ পাওয়ার কাছাকাছি সময়ে অস্থায়ী শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ পান এস এম রাফিউল হক, আহসান জাহিদ, জয়জিৎ বিশ্বাস ও রশিদ আহমেদ। তারাও এখন সিটি করপোরেশনের বিদ্যুৎ বিভাগের বিভিন্ন ডিভিশনে উপ-সহকারী প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করছেন।

অস্থায়ী শ্রমিক হিসেবে নিয়োগের এক বছরের মধ্যেই কীভাবে তাদেরকে উপ-সহকারী প্রকৌশলী করা হলো এবং সহকারী প্রকিউরমেন্ট অফিসারের দায়িত্ব দেওয়া হলো, সে প্রশ্নের কোনো গ্রহণযোগ্য উত্তর দিতে পারেননি চসিকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে চসিক সচিব আশরাফুল আমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'অস্থায়ী শ্রমিক থেকে অফিসার হওয়ার সুযোগ নেই। তারা কীভাবে হলেন সেটা আমার জানা নেই। আমার আগে সিটি করপোরেশনের সচিবের দায়িত্ব যিনি পালন করেছেন, তিনি এদের নিয়োগ ও অতিরিক্ত দায়িত্বে পদায়ন করেছেন।'

চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম দ্য ডেইল স্টারকে বলেন, 'সিটি করপোরেশনের চাকরি বিধি অনুযায়ী অস্থায়ী শ্রমিককে উপ-সহকারী প্রকৌশলীর দায়িত্ব দেওয়ার সুযোগ নেই। তারা কীভাবে দায়িত্ব পেলেন সেটা আমরা খতিয়ে দেখবো।'

চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মেয়রের দায়িত্ব নিয়েছি বেশি দিন হয়নি। অস্থায়ী শ্রমিকদের অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে অফিসার পদে পদায়নের বিষয়টি আমার জানা নেই। ঘটনা সত্য হলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

অভিযোগ প্রসঙ্গে সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের সহকারী প্রকিউরমেন্ট অফিসার রাহুল মজুমদার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চসিকে অস্থায়ী শ্রমিক থেকে অনেকেই অফিসার হয়েছেন। তাদের দেখে আমিও আবেদন করি। সিটি করপোরেশনের শীর্ষ কর্মকর্তারা আমাকে যোগ্য মনে করে অফিসার পদে পদায়ন করেছেন। এখানে আমার কোনো দোষ দেখছি না।'

সিটি করপোরেশনের দামপাড়া বিদ্যুৎ বিভাগে কর্মরত উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহিদ আহসানের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'সিটি করপোরেশনের সিনিয়র কর্মকর্তারা বলতে পারবেন আমি কীভাবে অফিসার হলাম।'

সিটি করপোরেশনের বিদ্যুৎ বিভাগে কর্মরত উপ-সহকারী প্রকৌশলী রশিদ আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিবেদকের পরিচয় জানার পর এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

 

Comments

The Daily Star  | English

Why landscape-based knowledge is critical for Bangladesh

How will we build the country without landscaping knowledge?

15h ago