২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, ঢাকায় বেশি: আঁচল ফাউন্ডেশন

ছবি: সংগৃহীত

গত বছর সারা দেশে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ৩১০ জন শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে এমন চিত্র উঠে এসেছে এক সমীক্ষায়।

এর আগে ২০২৩ সালে মোট ৫১৩ শিক্ষার্থী এবং ২০২২ সালে দেশে মোট ৫৩২ শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন।

আজ শনিবার সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশন ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে '২০২৪ সালে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা: সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি' শীর্ষক এই সমীক্ষা তুলে ধরে।

এই সংগঠনটির গবেষকরা মনে করেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আত্মহত্যার সংবাদ গণমাধ্যমে কম প্রচারিত হয়েছে।

বয়সভিত্তিক পর্যালোচনা

সমীক্ষায় উঠে এসেছে ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি, মোট আত্মহত্যাকারী মানুষের প্রায় ৬৫ দশমিক সাত শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ২০ থেকে ২৫ বয়সসীমার শিক্ষার্থীরা।

সবচেয়ে কম রয়েছে ২৬ থেকে ৩০ বছর বয়সসীমার মানুষ, দুই দশমিক নয় শতাংশের কাছাকাছি।

লিঙ্গভিত্তিক পরিসংখ্যান

নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা তুলনামূলক বেশি দেখা গেছে। মোট ৩১০ জনের মধ্যে প্রায় ৬১ শতাংশ নারী আত্মহত্যা করেছেন। অন্যদিকে পুরুষের আত্মহত্যার হার প্রায় ৩৮ দশমিক চার শতাংশ।

তৃতীয় লিঙ্গ এবং ট্রান্সজেন্ডারদের মধ্যে একজন করে আত্মহত্যা করেছেন, যা মোট সংখ্যার যথাক্রমে প্রায় শূন্য দশমিক তিন শতাংশ করে।

শিক্ষার স্তর অনুযায়ী পর্যালোচনা

২০২৪ সালে ৪৬ দশমিক এক শতাংশ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থী আত্মহত্যা। এরপরই উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের অবস্থান, এই হার ১৯ দশমিক চার শতাংশ। তাছাড়া, স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে।

২০২৪ সালে স্নাতক পর্যায়ের ১৪ দশমিক ছয় শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। প্রাথমিক স্তরের সাত দশমিক চার শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে।

এছাড়া স্নাতকোত্তর এক দশমিক নয় শতাংশ, ডিপ্লোমা শূন্য দশমিক ছয় শতাংশ এবং সদ্য পড়াশোনা শেষ করা শিক্ষিত বেকার শূন্য দশমিক ছয় শতাংশ।

সমীক্ষায় আরও উঠেছে, ২০২৪ সালে আত্মহত্যাকারী মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৮ দশমিক চার শতাংশ শিক্ষার্থী অভিমানের কারণে আত্মহত্যা করেছেন।

এর মধ্যে প্রাথমিক স্কুলশিক্ষার্থী ৫৬ দশমিক পাঁচ শতাংশ, মাধ্যমিক ও কলেজ শিক্ষার্থী ৩১ দশমিক নয় শতাংশ এবং উচ্চতর শিক্ষা স্তরের ১৫ দশমিক তিন শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা পথ বেছে নিয়েছেন।

সম্পর্ক নিয়ে জটিলতার কারণে ২০২৪ সালে ১৬ দশমিক আট শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন।

পড়ালেখার চাপ

২০২৪ সালে বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার কারণগুলোর মধ্যে অ্যাকাডেমিক চাপ একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১৪ দশমিক দুই শতাংশ অ্যাকাডেমিক চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন।

এর মধ্যে স্কুলশিক্ষার্থী ৫৯ দশমিক শূন্য নয় শতাংশ, কলেজ শিক্ষার্থী ২৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী নয় দশমিক শূন্য নয় শতাংশ।

২০২৪ সালে বাংলাদেশে আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাঁচ দশমিক পাঁচ শতাংশ মানসিক অস্থিরতার কারণে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন।

বাড়ছে স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা

গত বছর ৪৯ দশমিক চার শতাংশ স্কুলশিক্ষার্থী আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছে। এই পরিসংখ্যান অল্প বয়সী শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ এবং তাদের জীবনে চলমান সংকটের ভয়াবহ বাস্তবতাকে সামনে এনেছে।

এছাড়া, ২৩ দশমিক দুই শতাংশ কলেজশিক্ষার্থীর অকাল প্রাণ ঝরেছে।

ঢাকায় আত্মহত্যা বেশি

আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগে, ২৯ শতাংশ। এরপর রয়েছে খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগ, যথাক্রমে ১৭ দশমিক সাত এবং ১৫ দশমিক আট শতাংশ।

রাজশাহী ও বরিশাল বিভাগে আত্মহত্যার হার ছিল ১০ দশমিক সাত শতাংশ করে। এছাড়া, রংপুরে সাত দশমিক সাত শতাংশ, ময়মনসিংহে পাঁচ দশমিক পাঁচ শতাংশ এবং সিলেটে আত্মহত্যার হার ‍দুই দশমিক নয় শতাংশ।

মাদ্রাসায় আত্মহত্যা

আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়া মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের হার ছিল ছয় দশমিক আট শতাংশ। বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১২ বছর বয়সী পর্যন্ত মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার ছিল সবচেয়ে বেশি, ৪৭ দশমিক ছয় শতাংশ।

এর পরে ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে এই হার ছিল ৪৭ দশমিক ছয় শতাংশ এবং ২০ থেকে ২৫ বছর বয়সীদের মধ্যে এটি কমে চার দশমিক আট শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

লিঙ্গভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, পুরুষ মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার ৫৭ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং নারীদের ৪২ দশমিক নয় শতাংশ।

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও আত্মহত্যার উচ্চহার

সমীক্ষায় দেখা গেছে, আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১৭ দশমিক ৭৪ শতাংশই বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের শিক্ষার্থী। এর মধ্যে নারী শিক্ষার্থীর হার ৬৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ এবং পুরুষ শিক্ষার্থীদের ৩৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সায়্যেদুল ইসলাম সায়েদ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক ড. মো. জামাল উদ্দীন, আইনজীবী ও লেখক ব্যারিস্টার নওফল জামির এবং আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ।

Comments

The Daily Star  | English

July uprising: The wounds that are yet to heal, one year on

This week marks one year since 15-year-old Md Shahin Alam’s life was forever changed -- not by illness or accident, but by a bullet that tore through his left leg during a rally on August 5, 2024.

15h ago