হাসিনা আমলের হত্যা-গুমসহ সব অপরাধ প্রকাশে ট্রুথ কমিশন গঠনের দাবি

সাধারণ নাগরিকের ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ। ছবি: সংগৃহীত

আওয়ামী লীগের শাসনামলের সব হত্যা, গুম, দুর্নীতি ও লুটপাটসহ সব অপরাধ প্রকাশ করতে অবিলম্বে ট্রুথ কমিশন গঠন করার দাবি জানিয়েছেন সাধারণ নাগরিকদের একটি অংশ।

তারা বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের বিচার করতে ব্যর্থ হয়েছে। শহীদদের ক্ষতিপূরণ, আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে এই সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে না। ট্রুথ কমিশনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার আমলের গুমসহ সব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রকাশ করতে হবে।

একই কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে গুমের শিকার ব্যক্তিরা বলেছেন, তাদের সঙ্গে ঘটা অন্যায়ের ন্যায়বিচার চান।

রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক বিক্ষোভ সমাবেশ করেন সাধারণ নাগরিকের ব্যানারে কয়েকজন ব্যক্তি। এই কর্মসূচির আয়োজন করেন জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া কয়েকজন তরুণ-তরুণী।

ট্রুথ কমিশন গঠনসহ তাদের তিন দফা দাবির বাকি দুটি হলো—আয়নাঘরে ভুক্তভোগীদের পরিবার ও সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং জুলাই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সব অপরাধীর সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

এই কর্মসূচির অন্যতম আয়োজক ও ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অনিক রায় বলেন, এই সরকার গণঅভ্যুত্থানের ম্যান্ডেট নিয়ে এসেছিল। তাদের ম্যান্ডেট ছিল জুলাই হত্যাকাণ্ডে শেখ হাসিনাসহ জড়িত সব অপরাধীদের বিচার, আহতদের চিকিৎসা ও শহীদদের পুনর্বাসন করা। কিন্তু আমরা দেখছি তারা সেই কাজ করছে না। এখন পর্যন্ত শহীদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকাও করা হয়নি। এই সরকারকে বলতে চাই, হানিমুন পিরিয়ড শেষ। শুধুমাত্র গাড়ি নিয়ে ঘুরলেই হবে না। এখন কাজের সময়। কাজ না হলে আমাদের আবার রাস্তায় নামতে হবে। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই, অবিলম্বে ট্রুথ কমিশন করার মাধ্যমে শেখ হাসিনার সব অপরাধের আমলনামা তৈরি করতে হবে।

ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের (ইউল্যাব) ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ওলিউর সান বলেন, গত ১৫ বছরে যারা জনগণের ওপর জুলুম করেছে, তাদের বিচার করা যথাযথ কোনো উদ্যোগ দেখছি না।

পরিবেশ আন্দোলনকারী মাহতাবউদ্দিন আহমেদ বলেন, শেখ হাসিনা এখনো কেন ভারতে। প্রথম ক্ষোভ হওয়া উচিত ছিল তাকে কেন গ্রেপ্তার করে বিচার করা হচ্ছে না। ছয় মাস হলো কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই। সংস্কারের নামে অন্তর্বর্তী সরকার স্টান্টবাজি করছে, কিন্তু অ্যাকশন দেখাতে পারছে না।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী বিরোধিতার নামে আওয়ামী লীগের বন্ধুত্ব করা যাচ্ছে। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে হামলায় যে ঘৃণার প্রকাশ, তা এমনভাবে করা হলো যা শেখ হাসিনাকে পুনর্বাসনের সুযোগ দেওয়া।

কবি ফেরদৌস আরা রুমি বলেন, খবরে এসেছে, এক-তৃতীয়াংশ আওয়ামী লীগ কর্মী পালিয়েছেন। তারা কীভাবে পালালেন। দেশে কোনো আইন-শৃঙ্খলা নেই। ঘোষণা দিয়ে ধানমন্ডি ৩২ ভাঙা হলো। কারও কোনো নিরাপত্তা নেই।

তরুণ অ্যাক্টিভিস্ট এবং এই কর্মসূচির আরেক আয়োজক তুহিন খান বলেন, কেবল ২০-৩০ জন লোকের বিচার করে, সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়া ১৬ বছরের এই ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটন করা সম্ভবও না৷ তাই এই ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটনের জন্য অবিলম্বে একটি ট্রুথ কমিশন তৈরি করতে হবে এবং আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে হবে৷ কেবল পপুলিজম দিয়ে এই দায় শোধ হবে না। বরং জনগণের ক্ষোভ ক্রমশ বাড়তে থাকবে এবং জাতি আবারও একটা বিভাজনের দিকে চলে যাবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা দেখেছি যে, যৌথ বাহিনীর অভিযানে এবং পুলিশ হেফাজতে এখনো মানুষ মরছে৷ অথচ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, যে কাজের জন্য তারা নেমেছিল, তার অবস্থা খুব খারাপ। এটা প্রমাণ করে যে, আমাদের ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ কোন পর্যায়ে আছে। আমরা দেখলাম যে, আয়নাঘরে সাংবাদিক ও ভিক্টিম পরিবারের সদস্যদের প্রবেশে আপত্তি তুলছে সেনাবাহিনী। আমরা এই আপত্তির বিরোধিতা করি৷ অবিলম্বে গুমঘরগুলোতে সাংবাদিক ও ভিক্টিম পরিবারগুলোকে ঢুকতে দিতে হবে৷ সব গুমঘর উন্মোচন করতে হবে। পাশাপাশি গুমের শিকার পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের দায়িত্বও এই সরকারকে নিতে হবে৷

সমাবেশে অংশ নেন গুমের শিকার চারজন। তাদের মধ্যে একজন ৩৯ বছর বয়সী মো. মুকুল হোসেন। তিনি জানান, ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তিনি গুম হন। '৯৪ দিন ছিলাম আয়নাঘরে। অসংখ্যবার নির্যাতিত হয়েছি আমরা। আমরা এখানে যে চারজন উপস্থিত আছি, তারা সবাই বিগত সরকারের আমলে গুমের শিকার হয়েছিলাম', বলেন তিনি।

মুকুল হোসেন জানান, এরপর ওই বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি তিনি ছাড়া পান। পরে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে জেলে পাঠানো হয়৷ সেই মামলা এখনো চলমান।

তিনি বলেন, আমরা যারা গুমের শিকার হয়েছিলাম আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে, তাদের এই সংগঠন—ভয়েস অব এনফোরসড ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স (ভয়েড)। আমাদের সঙ্গে ঘটা ইনজাসটিসের বিচার চাচ্ছি। পাশাপাশি, গুমের ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

গুমের শিকার ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি সদয় দৃষ্টি দেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানান তারা।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh 2025-26 budget

Budget to shrink amid fiscal strain

Bangladesh’s interim government is preparing to unveil a rare contractionary budget on June 2, driven by a sharp rise in interest payment that is crowding out fiscal space and forcing spending cuts.

12h ago