নোয়াখালীতে সাবেক সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদের বাড়িতে ভাঙচুর-আগুন

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে সাবেক সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদ, নোয়াখালী-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী ও আয়েশা ফেরদৌসের গ্রামের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। একই সময় চৌমুহনী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আক্তার হোসেন ফয়সালের বাড়িতেও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে রাত আড়াইটা পর্যন্ত এসব হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশের পৃথক দুটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, গতকাল রাত আটটার দিকে সাবেক সেনা প্রধান মঈন ইউ আহমেদের বেগমগঞ্জের চৌমুহনী পৌরসভার আলীপুর গ্রামের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। তারা সাবেক সেনা প্রধানের ছোট ভাই ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি মিনহাজ আহমেদ জাবেদের বাড়িতে ভাঙচুর চালায়। প্রায় একই সময় চৌমুহনী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আক্তার হোসেন ওরফে ফয়সালের বাড়িতেও হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। হামলাকারীদের মধ্যে অনেকের মাথায় হেলমেট ও মুখে মাস্ক পরা ছিল।
তবে এই হামলার সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন নোয়াখালী জেলা শাখার আহ্বায়ক মো. আরিফুল ইসলাম।
আরিফুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই হামলা-ভাঙচুর কিংবা অগ্নিসংযোগের ঘটনার সঙ্গে তাদের সংগঠনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। চৌমুহনীর ঘটনা সেখানকার রাজনৈতিক ব্যাপার। এর সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের কর্মসূচি ছিল বৃহস্পতিবার দিনের বেলা। রাতে আমাদের কোনো কর্মসূচি ছিল না।'
সেনাবাহিনীর নোয়াখালী ক্যাম্পের মেজর তানভীর দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, খবর পেয়ে তিনি ফোর্স নিয়ে সাবেক সেনাপ্রধানের বাড়িতে ছুটে যান।
তিনি বলেন, 'বাড়ির পাহারাদারের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, রাতে অন্তত দেড় শ মানুষ ওনার বাড়িতে হামলা চালায়। তারা ভাঙচুর শেষে বাড়ির নিচতলায় অগ্নিসংযোগ করে। বিষয়টি নিয়ে বেগমগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলুসহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি।'
বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিটন দেওয়ান বলেন, 'সাবেক সেনা প্রধান মঈন ইউ আহমেদের বাড়িতে, তার ছোট ভাই জাবেদের বাড়িতে একদল মানুষ রাত ৮টার পর হামলা-ভাঙচুর চালিয়েছে। ওই ভবনে তাদের কেউ ছিল না। পরে সাবেক পৌর মেয়র ফয়সলের বাড়িতেও হামলা-ভাঙচুরের চেষ্টা চালানো হয়। তবে হামলাকারীরা বাড়ির ভেতরে ঢুকতে পারেনি।'
এছাড়া নোয়াখালী-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী ও আয়েশা ফেরদৌসের হাতিয়া পৌরসভার ওছখালীর বাসভবনে রাতে হামলা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। তার বাড়িতে ও নদীর ঘাটে থাকা মোহাম্মদ আলীর মালিকানাধীন ছয়টি স্পিডবোট ও চারটা ইঞ্জিনচালিত ট্রলারের ইঞ্জিন খুলে বোট ও ট্রলারে আগুন দেওয়া হয়।

হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম আজমল হুদা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রাত আড়াইটার দিকে বিক্ষোভ মিছিলসহ একদল মানুষ সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে। ওই সময় তারা ছয়টি স্পিডবোট ও চারটি ইঞ্জিন চালিত ট্রলারে অগ্নিসংযোগ করলে সেগুলো পুড়ে যায়।'
তবে, কারা হামলা করেছেন তা জানাতে পারেননি ওসি। তার ভাষ্য, 'বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কাজ করছে।'
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহাম্মদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বৃহস্পতিবার রাতে বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী পৌরসভার আলীপুরে সাবেক সেনা প্রধান ও সাবেক পৌর মেয়রের বাড়িতে এবং হাতিয়া পৌরসভায় সাবেক সংসদ সদস্যদের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সরকার এ ধরনের প্রতিহিংসা ও ধ্বংসাত্মকমূলক কাজের সমর্থন করে না। যারা এ ধরনের কাজ করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
Comments