তলদেশে পলির ‘পাহাড়’, স্রোত হারিয়ে ধুঁকছে কাকরিয়া

কাকরিয়া নদীর বর্তমান অবস্থা। ছবি: মাসুক হৃদয়

নদীর নাম কাকরিয়া। বছরের পর বছর ধরে পলি জমছে মেঘনার এই শাখানদীর তলদেশে। এতে নাব্যতা হারিয়ে প্রায় স্রোতহীন এ নদীটি যেন পরিণত হয়েছে 'মরা খালে'।

৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের কাকরিয়া বয়ে গেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার অরুয়াইল ও পাকশিমুল ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে। দীর্ঘদিন ধরে নদীর দুই পাড়ের বাসিন্দারা যাতায়াতের পাশাপাশি মালামাল পরিবহন ও সেচকাজের জন্য এই নদীর নির্ভরশীল ছিলেন। সেইসঙ্গে নদীটি ছিল নানা প্রজাতির দেশি মাছের আধার।

কিন্তু সেই চিত্র আজ নেই।  

এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত খননের মাধ্যমে নদীটির নাব্যতা ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, এই নদীর পানি ছাড়া জেলার প্রধান ফসল বোরো আবাদ করা সম্ভব না।

কথা হয় অরুয়াইল ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা ছালাতুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, হাওরবেষ্টিত অরুয়াইল ও পাকশিমুল ইউনিয়নের পুরো যোগাযোগ ব্যবস্থাটাই নদীনির্ভর। বিশেষ করে বর্ষাকালে এ দুটি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের নৌকা ছাড়া চলাচলের উপায় থাকে না। কিন্তু কাকরিয়া ভরাট হয়ে যাওয়ায় যাতায়াতে অসুবিধার পাশাপাশি এলাকায় উৎপাদিত কৃষিপণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে অসুবিধা হচ্ছে তাদের।

বড়ইচারা গ্রামের বাসিন্দা কৃষক আবুল কালাম বলেন, প্রতিবছর কাকরিয়া নদীর পানি দিয়েই বড়ইচারা, রাজাপুর, কাকিরয়া, চরপাড়া, রাণীদিয়া, পরমানন্দপুর, ষাটবাড়িয়া ও হরিপুর গ্রামের জমিতে বোরো আবাদ করা হয়। মেঘনা নদীর যে অংশ থেকে এই নদীটির সৃষ্টি, সেই উৎসমুখ বর্তমানে সরু হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। ভারি মালামাল পরিবহনে তাদের যেমন সমস্যা হচ্ছে, তেমনি পরিবহন খরচও বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া নাব্যতা না থাকায় নদীতে মাঝেমধ্যে নৌযান আটকে ডাকাতের কবলে পড়ার আশঙ্কা থাকে।

রাণীদিয়া গ্রামের বাসিন্দা জেলে রাহুল দাস বললেন, 'নদীতে পানি কম থাকায় শুস্ক মৌসুমে আমরা নদীতে জাল ফেলতে পারি না।'

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত কয়েক বছরে সরকার মেঘনা নদীর বিভিন্ন অংশে খনন কার্যক্রম পরিচালনা করলেও কাকরিয়া নদীর উৎসমুখে সেটি করা হয়নি। পরিকল্পিতভাবে খননকাজ চালালে কাকরিয়ার প্রবাহ ধরে রাখা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তারা।

বিষয়টি নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, স্থানীয়দের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কাকরিয়ার প্রবাহ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনজুর রহমান বলেন, 'পানি উন্নয়ন বোর্ড সম্প্রতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় একটা সমীক্ষা চালিয়েছে। ওই সমীক্ষার আলোকে আমরা খননের আওতায় নিয়ে আসার জন্য ইতোমধ্যে কাকরিয়া নদীর নাম তালিকাভুক্ত করেছি। এটা আমাদের দ্বিতীয় অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে। প্রথম অগ্রাধিকারভুক্ত জলাশয়গুলো খননের পরে দ্বিতীয় তালিকার কাজগুলো শুরু করা হবে।'

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম জানান,কিছুদিন আগে কাকরিয়া নদীর বিষয়ে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। এরপর পানি উন্নয়ন বোর্ড এই বিষয়ে করণীয় পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে সরেজমিন প্রতিবেদন দিয়েছে।

এই নদীর ভরাটকৃত অংশকে বালুমহাল ঘোষণার জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানোর কথা জানিয়ে জেলা প্রশাসক আরও বলেন, 'কাকরিয়া ছাড়াও জেলার বেশ কিছু নদী-খাল খননের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর সুফল ভোগ করবেন কৃষকরা।'

Comments

The Daily Star  | English

No scope to avoid fundamental reforms: Yunus

Conveys optimism commission will be able to formulate July charter within expected timeframe

2h ago