অস্তিত্ব সংকটে খুলনা বিভাগের ৩৭ নদী

‘অস্তিত্ব সংকটে থাকা ৩৭টি নদীর মধ্যে ২০টির প্রবাহ নেই। হামকুড়া নদী প্রায় অস্তিত্বহীন।’
শোলমারী নদী। ছবি: হাবিবুর রহমান/স্টার

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন দেশে এক হাজার আটটি নদীর তালিকা তৈরি করেছে। সেখানে খুলনা বিভাগের নদীর সংখ্যা বলা হয়েছে ১৩৮টি। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে, এই বিভাগের ৩৭টি নদীর অস্তিত্ব বর্তমানে সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে।

আজ সোমবার দুপুরে খুলনার একটি হোটেলে খুলনা বিভাগের নদ-নদী সংরক্ষণে করণীয় বিষয়ক এক আলোচনা সভায় এ তথ্য জানানো হয়।

খুলনা অঞ্চলের সংকটাপন্ন নদীগুলো হলো—শোলমারী, চুনকুড়ী, রূপসা, ভদ্রা, ময়ূর, হরি, হামকুড়া, পশুর, মুক্তেশ্বরী, হরিহর, ইছামতি, গড়াই, কালিগঙ্গা, ভৈরব, কপোতাক্ষ, মধুমতি, নবগঙ্গা, চিত্রা, কুমার, আাঠারোবাঁকি, বেতনা, মাথাভাঙ্গা, বলেশ্বর, ভোলা, মরিচাপ, কাকশিয়াল, মোংলা-ঘসিয়াখালী চ্যানেল, খোলপেটুয়া, ঘ্যাংড়াই, শিবশাহ, তেলীগাতি, গুয়াচাপা, হাড়িয়াভাঙ্গা, গুয়াখালী, সালতা, লাবণ্যবতী ও চুণা নদী।

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেলা'র খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়ক মাহফুজুর রহমান মুকুল।

তিনি বলেন, 'অস্তিত্ব সংকটে থাকা ৩৭টি নদীর মধ্যে ২০টির প্রবাহ নেই। হামকুড়া নদী প্রায় অস্তিত্বহীন। দখল, অপরিকল্পিত সেতু নির্মাণ, বাঁধ, স্লুইস গেট, পলি ভরাট, শিল্প বর্জ্য দূষণ ও দখলের কারণে এসব নদী এখন হুমকির মুখে।'

কয়েকটি নদীর সংকটের জন্য ঐতিহাসিক কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, '১৯৩৮ সালের দর্শনায় ভৈরবের বাঁক ভরাট করে কেরু এন্ড কোম্পানি চিনিকল স্থাপন করা হয়। যার কারণে মাথাভাঙ্গা নদীর সঙ্গে ভৈরব নদীর সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে অস্তিত্ব সংকটে পড়ে ভৈরব।'

আলোচনা সভায় উল্লেখ করা হয়, ১৮৬১ সালে আসাম বেঙ্গল রেললাইন স্থাপন করতে গিয়ে তৎকালীন নদীয়া জেলার অংশ, বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার মধ্যে মাথাভাঙ্গা নদীর শাখা কুমার, নবগঙ্গা, চিত্রা ও নিম্ন ভৈরবের উৎসমুখে সংকীর্ণ রেলসেতু নির্মাণের ফলে বিদ্যমান নদীকাঠামো বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

১৯৫০ সালের পর দক্ষিণাঞ্চলে ফসলহানি এবং বন্যার কারণে তৎকালীন যুক্তফ্রন্ট সরকারের অনুরোধে ক্রুগমিশন নিযুক্ত হয়। সে সময়ে দেশে চার হাজার কিলোমিটার বেড়িবাঁধ, ৭৮২টি স্লুইস গেট এবং ৯২টি পোল্ডার নির্মাণ করা হয়।

ওই প্রকল্পে শুধুমাত্র দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এক হাজার ৫৫৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ, ৯২টি স্লুইস গেট এবং ৩৭টি পোল্ডার নির্মাণ করা হয়। এই নীতির ফলে প্লাবনভূমিকে নদ-নদী থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। যার ফলে এই অঞ্চলের অধিকাংশ নদ-নদীতে পলি ভরাট হতে শুরু করে।

এ ছাড়া, ১৯৯৩ সালে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরায় সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে এই অঞ্চলের অনেক নদী খণ্ডিত হয়ে পড়ে বলে আলোচকরা বলেন।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড পার্টিসিপার্টরি রিসার্চের চেয়ারম্যান গৌরাঙ্গ নন্দী ও সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ মঞ্চের আহ্বায়ক কুদরাত ই খুদা।

আরও বক্তব্য রাখেন শোলমারী-সালতা নদী রক্ষা কমিটির সদস্যসচিব দেব প্রসাদ সরকার, কেন্দ্রীয় পানি কমিটির সভাপতি এ বি এম শফিকুল ইসলাম, পরিবেশ মঞ্চের সদস্যসচিব সুতপা বেতজ্ঞ, হিউম্যানিটি ওয়াচের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম সেলিম, মংলা-ঘোষিয়াখালী চ্যানেল রক্ষা কমিটির সদস্যসচিব এম এ সবুর রানাসহ অনেকে।

আলোচনা সভায় খুলনা বিভাগের নদীগুলো রক্ষা করার জন্য কয়েকটি সুপারিশ করা হয়।

সুপারিশগুলো হলো—বর্ষা মৌসুমে বিস্তীর্ণ সমতল ভূমিতে বন্যার পানি প্রবেশের সুযোগ করে দিতে হবে; মাছসহ সব জলজ প্রাণীর বিচরণক্ষেত্র উন্মুক্ত করার জন্য অপ্রয়োজনীয় স্লুইস গেট ও বাঁধ অপসারণ করতে হবে; পানি প্রবাহে বাঁধা সৃষ্টিকারী সব অবৈধ বাঁধ অপসারণ করতে হবে; সব চর দখলমুক্ত করতে হবে; সব সংযোগ খালগুলোকে লিজমুক্ত ও দখলমুক্ত করে নদীর সঙ্গে সংযোগ ঘটাতে হবে এবং প্রবাহের সঙ্গে আসা পলি খালের মাধ্যমে বিলে অবক্ষেপণের ব্যবস্থা করতে হবে; দেশের নদীর প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণে গবেষণা করতে হবে এবং গবেষণায় প্রাপ্ত সব নদীর একটি ডেটাবেজ করতে হবে; নদীর ওপর নির্মিত ছোট ও নিচু সেতু ও কালভার্ট অপসারণ করে বড় ও উঁচু সেতু নির্মাণ করতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

At least 274 killed in Israeli strikes on Lebanon, health minister says

After some of the heaviest cross-border exchanges of fire since the hostilities flared, Israel warned people to evacuate areas where it said the armed movement was storing weapons

1h ago