আওয়ামী লীগ এমপিদের নেতৃত্বে আন্দোলনকারীদের ওপর সশস্ত্র হামলা হয়: জাতিসংঘ

স্টার ফাইল ফটো

গত বছরের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সংসদ সদস্যরাও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন।

সে সময়ের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনের ঘটনাগুলো তদন্ত শেষে আজ বুধবার প্রকাশিত জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে সাবেক সরকার এবং আওয়ামী লীগ সশস্ত্র কর্মীদের একত্রিত করে। তারা আন্দোলন দমনে ক্রমশ সহিংসতার আশ্রয় নেয় এবং গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটায়। শত শত মানুষকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা, বেআইনি বলপ্রয়োগের মাধ্যমে হাজারো মানুষকে গুরুতর আহত করা হয়। নির্বিচারে ব্যাপক হারে গ্রেপ্তার, আটক ও নির্যাতন করা হয়।

জাতিসংঘ বলছে, বিক্ষোভ চলতে থাকলে আওয়ামী লীগের সশস্ত্র কর্মীরা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে বা তাদের সঙ্গে মিলে বিক্ষোভকারীদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে যেতে থাকে। কিছু ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যরা এবং অনেক সরকারি কর্মকর্তা হামলার নেতৃত্ব দেন।

ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্টের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনী এবং আওয়ামী লীগের সশস্ত্র কর্মীদের গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নিপীড়নের কারণ ছিল যেকোনো মূল্যে ক্ষমতা ধরে রাখা। বেআইনি উপায়ে পরিকল্পিতভাবে তারা বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করেন।

'জুলাইয়ের প্রথম দিক থেকেই বিগত সরকার ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব ধরে নিয়েছিল যে আন্দোলনে রাজনৈতিক বিরোধীরা 'অনুপ্রবেশ' করেছে। তারা বুঝতে পেরেছিল যে, অজনপ্রিয় ওই সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকার ক্ষেত্রে এ বিক্ষোভ বড় ধরনের রাজনৈতিক হুমকি হতে পারে,' বলা হয় প্রতিবেদনে।

এতে আরও বলা হয়, 'বিগত সরকার ও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সমন্বয় ও নির্দেশনায় পুলিশ, আধাসামরিক, সামরিক, গোয়েন্দা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন শাখা একসঙ্গে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নিপীড়ন চালিয়ে যায়। সুতরাং, এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার সঙ্গে তখনকার রাজনৈতিক নেতৃত্ব সরাসরি জড়িত থাকার যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে।'

জাতিসংঘ বলছে, 'বাংলাদেশের আইনে বাধ্যতামূলক থাকলেও, সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন যে নিরাপত্তা বাহিনীর আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে কোনো তদন্ত পরিচালিত হয়নি। নিপীড়ন ও নির্যাতনের অভিযোগও তদন্ত করা হয়নি। সাবেক কর্মকর্তারা তখনকার পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে দাবি করেন, কোনো ভুক্তভোগীর কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া যায়নি।'

'তবে, বিশ্বাসযোগ্য স্থানীয়-আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থার প্রকাশিত অসংখ্য প্রতিবেদনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এসেছিল এবং সেগুলো নিয়ে তদন্ত শুরু করা উচিত ছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার এসব প্রতিবেদনের তথ্য পাঠিয়েছিল,' যোগ করা হয় প্রতিবেদনে।

জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, '১ জুলাই থেকে ৫ আগস্টের নিরাপত্তা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের কর্মীদের দ্বারা সংঘটিত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নিপীড়নের ঘটনার তদন্তের বিষয়ে বিগত সরকারের কোনো প্রচেষ্টা দেখতে পায়নি জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয়, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা তো দূরের কথা।'

'জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পরিবর্তে সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের সত্য চেপে যাওয়ার ক্ষেত্রে সমন্বিত প্রচেষ্টা চালিয়েছে বলে মনে হয়েছে। ডিজিএফআই, এনএসআই, গোয়েন্দা শাখা ও পুলিশ হাসপাতালে অবস্থান করে আহত-নিহতের চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ ও রেকর্ড জব্দ করেছিল,' যোগ করা হয় প্রতিবেদনে।

এতে আরও বলা হয়, 'কিছু ক্ষেত্রে পুলিশ হত্যাকাণ্ড গোপন করার জন্য হাসপাতাল থেকে মরদেহ নিয়ে লুকিয়ে রাখে বা পুড়িয়ে ফেলে। কিছু ক্ষেত্রে, মরদেহের গুলির চিহ্ন সরিয়ে কোনো রেকর্ড ছাড়াই পুলিশের কাছে সরবরাহ করা হয়।'

Comments

The Daily Star  | English

Threat of fresh Rohingya influx looms as clashes erupt in Myanmar

Gunfire and explosions were heard late Friday night from villages across the border in Myanmar opposite Whykong union in Teknaf upazila of Cox’s Bazar. Residents, gripped by panic, reported that this was the most intense gunfire they had heard in months.

5h ago